দূরবীন নিউজ প্রতিবেদক :
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেছেন,হাইকোর্টের রায় ও নির্দেশনার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি বিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, এমনকি সবার আগে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এবং গণমাধ্যম অফিসগুলো থেকেই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা উচিত। অথাৎ নিজেদের ঘর থেকেই হাইকোর্টের রায় ও নির্দেশনা দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ এ আহ্বান জানান।
আইন, বিচার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্সদের ফোরামের জন্য কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
শেখ হাসান আরিফ বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়টি আগে নিজেদের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। আপনার কলিগ যদি হেনস্থার স্বীকার হয়, আপনি অথবা আপনার অন্য কোনো কলিগদের দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করুন। সেখানে (গণমাধ্যম অফিসের কর্মস্থলে) যৌন হয়রানির ঘটনা যার দ্বারাই ঘটুক না কেন আপনারা যদি তা তুলে ধরেন তা হলে হয়রানি কমে আসবে। আপনাদের কলিগদের পাশে যদি আপনারা দাঁড়ান তা হলে সবাই এগিয়ে আসবে, আপনাদের পাশে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, ‘অনলাইন, পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মস্থলে যৌন হয়রানিবিরোধী কমিটি করার আগে সংবাদ মাধ্যমের মালিক ও সম্পাদকদের এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান বা বিভিন্ন সভা সেমিনার এবং কর্মশালায় বেশি বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। তা হলে তারা অন্যদের পাশাপাশি নিজেরাও সচেতন হবেন। ফলে গণমাধ্যম অফিসগুলোতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের কমিটি গঠন করা আরও সহজ হবে।’
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, নারীরা মুখ খুলতে থাকলে যৌন হয়রানি অনেকটাই কমে আসবে। নারীদের প্রতি একধরনের অসহায় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকানো হয়। আমরা বলছি, নারী কারও স্ত্রী, কারও বোন বা কারও কন্যা। আমরা মানবিকভাবে তাদের ভাবতে পারছি না। তারাও আমাদের মতো মানুষ- এ দৃষ্টিভঙ্গি না থাকার কারণে যৌন হয়রানির মনোভাব সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের (পুরুষদের) দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নারীরা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীদের বাদ দিয়ে সমাজ ও দেশ অচল। এমনকি পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্যও সমাজে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ।
হাইকোর্টের রায়ের আলোকে সুপ্রিম কোর্টেও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে যে রায় দেয়া হয়েছিল সে রায়টিও আইনজীবী সমিতি বা সুপ্রিম কোর্টও পালন করেনি। আমরা যখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ে জবাবদিহিতা চাইব তখন তো তারা পাল্টা আমাদের কাছে প্রশ্ন তুলবে। তাই অবিলম্বে ওই রায় বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।
ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. মাসউদুর রহমানের সঞ্চালনায় এবং সংগঠনটির সভাপতি ওয়াকিল আহমেদ হিরনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন ফোরামের সাবেক সভাপতি এম. বদি-উজ্জামান, অ্যাডভোকেট নাহিদা আনজুম কণা, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, পরিচালক অ্যাডভোকেট তৌহিদা খন্দকার, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জোবায়দা পারভিন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সীমা জহুর।
এছাড়া কর্মশালায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান রাজু, সিনিয়র সদস্য মিল্টন আনোয়ার ও আফজাল হোসেন।
ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গ টেনে এ বিচারপতি বলেন, এর আগেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বন্ধে কমিটি করার জন্য সরকার নির্দেশনা দেন। এরপর আবার যখন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একের পর এক যৌন হয়রানি ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে গত এপ্রিলে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
ফেনীর সোনাগাজীতে শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ফলে পুনরায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের এ নির্দেশনায় জরুরি ভিত্তিতে কমিটি করতে বলা হয়েছে, যা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। বর্তমানে দেশের বড় বড় কিছু স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব স্কুল-কলেজে এ ধরনের কোনো কমিটি একেবারে নেই বললেই চলে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানিবিরোধী কমিটি করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু এখনও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান আদালতের ওই নির্দেশনা যথাযথ ভাবে পালন করেনি। #