দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
রাজধানীসহ সারাদেশে হুট করে আদা-জিরাসহ প্রায় সবধরনের মসলা আমদানি মূল্যের চেয়ে বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রির বিষয়টি নিয়ে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি অনুষ্ঠানে জানতে চাওয়া হয়েছে মসলার বাজার অস্থির আমদানি-বিক্রিতে অনেক তফাত কেনো।
অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা হয়েছে, পার্বত্যা লের দেশি আদা চায়না আদা নামে বিক্রির মাধ্যমে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে মসলার দামে কোনো শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। এসব কারণে মসলার বাজার অস্থিতিশীল। তবে আসন্ন ঈদে চাহিদা মেটানোর মতো মসলার পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
গত রোববার (২৮ মে) পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের এক মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। স¤প্রতি বাজারে গরম মসলার দামে অস্থিরতা এবং আসন্ন ঈদে মসলার মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ সভার আয়োজন করে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, এনএসআই ও ক্যাবের প্রতিনিধি, স্বপ্ন-মীনাবাজারসহ বিভিন্ন সুপারশপ প্রতিনিধি, নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
সভায় ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি জানান, আদা-জিরাসহ মসলার আমদানি মূল্যের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যে বেশ অসংগতি রয়েছে। আমদানি দরের চেয়ে অনেক বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে। ক্যাবের প্রতিনিধিও মসলার খুচরা ও পাইকারি বাজার মূল্যে বড় ধরনের অসংগতির অভিযোগ আনেন। সুপারশপগুলো পাইকারি বাজার থেকে মসলা সংগ্রহ না করে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে সংগ্রহ করছে। এতে একাধিক হাতবদলের মাধ্যমে মসলার দামে যেন আগুন। পার্বত্যা লের আদা চায়না আদা নামে বিক্রি করে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ সময় ভোক্তা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রতিনিধি জানান, খাতুনগঞ্জে চায়না আদা তেমন নেই। বার্মা ও ভারতীয় আদা ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ২২০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়। আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য পর্যাপ্ত মসলার মজুত থাকার কথা জানান তিনি।
সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, শাহ আলী মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা বলেন, পাড়া-মহল্লার দোকানে মসলার বাজারে পর্যাপ্ত শৃঙ্খলা নেই, যা সামগ্রিকভাবে মসলার বাজারে প্রভাব ফেলছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার কড়া তদারকির অনুরোধ জানিয়েছেন।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আসন্ন ঈদে মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে আজ সোমবার থেকে সারাদেশে মসলার বাজারে অভিযান চালানো হবে। এলসিতে আমদানি করা মসলার প্রকৃত মূল্য খতিয়ে দেখা হবে। সুন্দর মোড়কের নামে মসলার দাম বাড়ানোর বিষয়টি তদারকি করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থা এবং মনিটরিংয়ে পাওয়া তথ্য সমন্বয় করে একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে দেবেন তাঁরা। বিভিন্ন সমিতি বা বাজার কমিটিকে মসলার বাজারে শৃঙ্খলা আনতে ভ‚মিকা রাখার অনুরোধ করে তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, দেশের পার্বত্য অ ল বা বার্মিজ আদা চায়না আদা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। ঈদে মসলার বাজার নিয়ে কারসাজি করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। কেউ মসলার অবৈধ মজুত করলে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া সভায় মসলার মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ না করা, বিক্রয় রসিদ না দেওয়া, আমদানি-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র না থাকা, খাদ্যপণ্যে আকর্ষণীয় রং ব্যবহার করা ইত্যাদি সমস্যার ব্যাপারে আলোচনা হয়।#