দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
টানা পাঁচ ঘণ্টা সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে অসুস্থ অবস্থায় প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আর এই ঘটনায় সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আজ সোমবার (১৭ মে) বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। পরে ওই মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে তাকেআটকে রেখে তাকে হেনস্থা করা হয় এবং তার মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একপর্যায়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সাংবাদিকরা জানান, প্রথম আলো রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানায়নি। পরে বিকেলে সাংবাদিকেরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন।ছবি –সংগৃহিত
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু নথির ছবি তোলার অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে। আর পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে থানায় আনা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রতিবাদ :
আজ সন্ধ্যার আগ থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটক ও অচেতন অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফ্লোরে পড়ে থাকার ছবি দেখে প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সাংবাদিক নেতারা জানান, প্রথম আলোর সিনিয়র নিপোর্টার রোজিনা ইসলাম একজন সৎ,সাহসি, মেধাবি এবং দেশ প্রেমিক হিসেবে ইতোমধ্যে অনেক নজির স্থাপন করেছেন। তার অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার এবং প্রশাসনের টনক নড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার সহজে জানতে পেরেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের বাস্তব চিত্র এবং প্রকাশিত প্রতিবেদনে সরকার উপকৃত হয়েছে। কিন্তু ক্ষুব্ধ হয়েছেন কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখ হেনস্থা করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানি, সাবেক সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ডিআরইউর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মশিয়ুর রহমান খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উভয় প্রুপের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও কাদের গণি চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্র্যাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মিজান মালিক ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ, ক্র্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু, দুদক বিটের সভাপতি মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ফয়েজসহ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সচিবালয় বিটের সাংবাদিকরাসহ বিভিন্ন বিটের সাংবাদিকরা উক্ত ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়া রোজিনাকে হাসপাতালে নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানান।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ সচিবালয় থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এ সময় তাঁকে বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকেরা জানান।
রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে, এ বিষয়ে সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু সচিবের বক্তব্য তারা জানতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন। #