দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সবার ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন । তিনি বলেছেন, আমি নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করেই কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। “আমি নির্বাচিত মেয়র। কিন্তু নগরবাসী সকলেই মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারে।”
নগর অ্যাপস’র লাইভে আলাপচারিতায় নগরবাসীর মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বললেন মেয়র আতিক। নগরীর পরিচ্ছন্নতা, মশা, রিকশা ,অবেধ দখল, হকার ও জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসন প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নের জবাবে গত মঙ্গলবার সন্ধার পর থেকে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম নগরবাসীর মুখোমুখি হচ্ছে। সাড়ে তিন হাজার প্রশ্ন কিংবা মন্তব্য এসেছে পৌনে দুই ঘণ্টার আলোচনায়।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামমুন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান
নগরবাসীর প্রশ্ন এবং মেয়রের দেওয়া জবাবগুলো।
যেমন; পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে পদক্ষেপ কি? ডেঙ্গু মশা বাড়ছে কেন? রিকশা নিয়ে কি ভাবছেন? বস্তির উন্নয়ন কিভাবে হবে? বেওয়ারিশ কুকুরগুলো কিভাবে বাঁচবে? খাল উদ্ধার হবে কি? এমন হাজারো প্রশ্ন নগরবাসীর।
এক-দুই নয় রীতিমতো সাড়ে তিন হাজার প্রশ্ন কিংবা মন্তব্য এসেছে পৌনে দুই ঘণ্টার আলোচনায়। প্রশ্নকর্তাদের জানতে চাওয়া- কেন, কিভাবে? মন্তব্যে এসেছে প্রশংসাও, অনন্য একটা উদ্যোগ। নগরবাসীর কথা শুনছেন মেয়র। এমনই হওয়া চাই জনপ্রতিনিধি, জনগণের কথা শুনবেন, তাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন, নিজের চিন্তাগুলো। একটি মন্তব্য- ‘বাহ! অভিযোগ জনগণের, সমাধান মেয়রের।‘
মেয়রকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে গেছেন। ধৈর্য ধরে পৌনে দুই ঘণ্টা লাইভে থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মো. আতিকুল ইসলাম। কোনোটায় নগরবাসীর ভুল ধারণা ভাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। কোনওটার তাতক্ষণিক প্রতিশ্রুতিতে সমাধান দিয়েছেন, কোনওটির জন্য সময় চেয়েছেন।
আর কোনোটির জন্য চেয়েছেন নগরবাসীর সহযোগিতা। সবাইকে নিয়ে সবার ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, আমি নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করেই কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। “আমি নির্বাচিত মেয়র, কিন্তু নগরবাসী সকলেই মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারে।”
আলাপচারিতার সঞ্চালক ছিলেন চিত্রাভিনেতা ফেরদৌস। তিনি সংযোগ ঘটিয়েছেন জনতার সঙ্গে মেয়রের এই #জনতার_মুখোমুখি_নগরসেবক কর্মসূচির। মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, প্রতিমাসের পহেলা তারিখেই তিনি এমন লাইভ কর্মসূচিতে আসবেন, সরাসরি কথা বলবেন নগরবাসীর সঙ্গে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলাপচারিতা শুরু হয়, দর্শকের করা প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে। পরিচ্ছন্ন নগর ঢাকা!- কি ভাবে করা হবে? উত্তরে শুরুতেই মেয়র আতিকুল ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ স্লোগানটিকে সামনে আনেন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন উত্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম ও প্রয়াত মেয়রের কথা। তার নেওয়া কিছু উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন।
তবে মেয়র বললেন, শহর ঢাকা এতটাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে যে, কাজগুলো থেকে সুফল পাওয়া কষ্টসাধ্য। আঙ্গুল তুললেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দিকেই-“রাজউক নগরে বড় বড় ভবন করেছে কিন্তু এসব ভবনে সৃষ্ট ময়লা কোথায় ফেলা হবে সে ব্যবস্থা করেনি”।
মেয়র জানান, অটোমেশনে যাচ্ছে নগর পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রোড সুইপার কেনা
প্রশ্ন এসেছিলো খাল উদ্ধার ও দখলমুক্ত রাখার। মেয়র শেয়ার করলেন খাল পরিষ্কার করেত যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। একটি খালের ভেতর থেকে ২০০ ট্রাক ডাবের খোসা উঠানো হয়েছে। ৩৩টি জাজিম পাওয়া গেছে, উঠে এসেছে নষ্ট ফ্রিজ, টিভি। বললেন এগুলো নগরবাসীই ফেলেছে। সুতরাং খাল উদ্ধার যেমন প্রয়োজন, তেমনি তা রক্ষণাবেক্ষণে নগরবাসীর সচেতনতাও জরুরি।
নগরের ময়লাকে কিভাবে সম্পদে পরিনত করা যায় সে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্জ্যবিদ্যুত উতপাদনের উদ্যোগের কথা জানালেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। রাজধানীর আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে এই বর্জ্যবিদ্যুত প্ল্যান্ট হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
খালগুলো দখলমুক্ত করার প্রশ্নে মেয়র বলেন, জনগণের শক্তি, প্রধানমন্ত্রীর শক্তি নিয়ে তিনি এসব দখলকারী পেশিশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। জানালেন, খালমুক্ত করে দুইপাশে ওয়াকওয়ে করে দেওয়া হবে। গাছ লাগানো হবে। ৫ জনের হীনস্বার্থের কারণে ৫০০ জন কষ্ট পেতে পারেনা, বলেন মেয়র।
এডিস মশা নিধন প্রশ্নে মেয়রের উত্তর- স্বাস্থ্য জনগণের মৌলিক অধিকার এ বিষয়ে প্রশ্নে আমি আনন্দিত। গতবছর দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই এই মশার প্রাদুর্ভাবে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়ে। আমরা অনেক প্রিয় নগরবাসীকে হারিয়েছি। তখন আমি সময় চেয়েছিলাম, এবং এ বছর আমরা মশার লার্ভা ধ্বংসে চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। তাতে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ততটা ছড়াতে পারেনি।
তবে মেয়র সেই উদাহরণও সামনে আনলেন, যাতে তিনি এক ধনাঢ্য পরিবারের কথা তুলে ধরেন। বাড়ির সামনে যেমন ছিলো ঝকঝকে দামি দামি গাড়ি, পেছনটা ছিলো ততোধিকই নোংরা, এডিস মশার আবাসস্থল। তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দিন
সিটি কর্পোরেশনের এই স্লোগান মেনে চলতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তবে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনে ফোর্থ জেনারেশন ওষুধের ব্যবহার, লার্ভিসাইড, এডাল্টিসাইড ব্যবহারের কথা জানিয়ে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করলেন তিনি।
মেয়র এসময় জানালেন, তিনি দায়িত্ব নিয়ে দেখেছেন ২২ বছর ধরে মশা নিধনে একই ওষুধ ব্যবহার করেছে সিটি কর্পোরেশন। আর তা সরবরাহ করে আসছিলো মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আমরা সে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে পেরেছি,” বলেন মেয়র আতিকুল।
তবে মশা নিধনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। ওষুধ কিনলেই হবে না, তা ঠিকমতো ছেটাতেও হবে। সে জন্য প্রয়োজন মনিটরিং। এই কাজে নগরবাসীকেই দায়িত্ব দিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। জানালেন তার নেওয়া ৪০০ গজ / ৪০০ গজ প্রকল্পের কথা। এলাকাবাসীর কেউ একজন নিজের আশেপাশে ৪০০ বর্গগজ এলাকা মনিটরিং করবেন। তাতেই নিশ্চিত করা যাবে পুরো নগরের পরিচ্ছন্নতা, বলেন তিনি।
নিজে সপরিবারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিতসা নেন সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সে বিষয়ে নগরবাসীর প্রশংসা কুড়ান মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে সিটি কর্পোরেশন করোনার সময় যেসব উদ্যোগ ও কর্মসূচি নিচ্ছে সেগুলো তুলে ধরেন তিনি। বলেন, করোনায় আমরা সিটি কর্পোরেশনের কেউই ভয়ে ঘরে ঢুকে থাকিনি।
সড়কে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন নিয়ে প্রাণিপ্রেমিদের উদ্বেগের বিষয়ে নিজে সমমর্মিতা প্রকাশ করে মেয়র আতিকুল বলেন পশু-পাখি ও গাছের প্রতি তারও প্রেম রয়েছে। নগরে যারা পশুপালন করেন এমন অনেককে ডেকে পরামর্শ করে, রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে কিভাবে সুরক্ষা দেওয়া যায় তার উপায় বের করা হয়েছে। কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে বন্ধ্যাকরণ যার একটি অন্যতম পথ, জানান ডিএনসিসি মেয়র। তিনি স্পষ্ট করে ঘোষণা দেন- উত্তর সিটি কর্পোরেশনে একটি কুকুরও মেরে ফেলা হবে না।
নগরে মাথার উপর ঝুলে থাকা তার অপসারণ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এ ব্যাপারে আমার সোজাসাপ্টা কথা, যার তার লাগিয়েছে তারাই খুলে নেবে।
সড়কগুলো ট্রাকের দখলে থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সড়কগুলো ট্রাকের দখলমুক্ত করা একটা যুদ্ধ। নগর এতটাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে যে এগুলো রাখার জায়গাও নেই।
#তবে এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ও সমাধান করবে, কথা দেন মো. আতিকুল ইসলাম।
বস্তিবাসীর জন্য নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে মেয়র জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বস্তিগুলোতে হাইরাইজ ভবন গড়ে তুলে সেগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কর্মসূচিতে মেয়র জনগণের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। একাধিক ফেসবুক পাতা ও অন্যান্য মাধ্যমে একযোগে প্রচারিত লাইভ অনুষ্ঠানটি কয়েক লাখ ভিউয়ার দেখেন।#