দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
নিষিদ্ধঘোষিত জেএমবির চার এহসার (সার্বক্ষণিক) সদস্যকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানা এলাকার মাশরুর আনোয়ার চৌধুরী ওরফে লোন উলফ ওরফে ট্রুথ সিকার (৩১), একই এলাকার মোহাম্মদ কাওসার আলম ওরফে ফরহাদ নূর (২৮), একই জেলার পাঁচলাইশ থানা এলাকার আসিফ ইবতিয়াজ মোহাম্মদ রিবাত (২৭) ও কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানা এলাকার রাকিবুল ইসলাম (২৫)।
গত ৬ মার্চ দিবাগত রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই ও লিফলেট।
শনিবার (৭ মার্চ) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার।
লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, মাশরুর আনোয়ার চৌধুরী চট্টগ্রামের ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন। তিনি ২০১৪ সালে অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে জসিম উদ্দিন রাহমানী, আনোয়ার আল আওলাকীসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী লেখকের বক্তব্য শুনে উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হন।
এরপর ২০১৬ সালে কথিত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবিতে যোগদান করেন। মাশরুর চট্টগ্রামে একটি পাঁচ তারকা হোটেলের পারচেজ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়া মোহাম্মদ কাওসার আলম, হাফেজ মো. রাকিবুল ইসলামসহ আরও ৮ থেকে ১০ জন যুবককে জেএমবিতে যোগদান করান। র্যাবের হাতে এর আগে গ্রেপ্তার প্রকৌশলী বুলবুল, জহিরুল ইসলাম ও মাসুদ গাজীর সঙ্গেও মাশরুর আনোয়ার চৌধুরীর সাংগঠনিক যোগাযোগ ছিল।
মোহাম্মদ কাওসার আলম ওরফে ফরহাদ নূর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। আসিফ ইবতিয়াজ মোহাম্মদ রিবাত চুয়েট থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন।
মোহাম্মদ কাওসার আলম ওরফে ফরহাদ নূর এবং আসিফ ইবতিয়াজ মোহাম্মদ রিবাত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। মাশরুর আনোয়ার চৌধুরীর মাধ্যমে তাঁরা দুজন ২০১৭ সালে জেএমবিতে যোগদান করেন। এত দিন তাঁরা জেএমবির দাওয়াতি শাখার কাজ করে আসছিলেন।
র্যাব জানায়, রাকিবুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। অনলাইনের মাধ্যমে জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে রাকিবুলের পরিচয় ঘটে। রাকিবুলের পরিচয়ের সূত্র ধরেই মাশরুর আনোয়ার চৌধুরী, মোহাম্মদ কাওসার আলম ওরফে ফরহাদ নূর, আসিফ ইবতিয়াজ মোহাম্মদ রিবাতসহ আরও কিছু জেএমবি সদস্য সদর উপজেলার ফতুল্লার সাইনবোর্ড এলাকায় গোপন বৈঠকে মিলিত হলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন গণমাধ্যমকেবলেন, মাশরুর আনোয়ার চৌধুরী চার মাস আগে তাঁর চাকরি ছেড়ে ঢাকায় এসে একটি আন্তর্জাতিক হোটেলে পারচেজ ম্যানেজারের পদে যোগদান করেন। এরপর সংগঠনের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে উচ্চপর্যায়ের জেএমবির কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ ও গোপন বৈঠকে মিলিত হন।
মাশরুর আনোয়ার চৌধুরী সম্প্রতি অনলাইনে টাইম বোমা তৈরির বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠা ও ইসলামি শাসন কায়েম করার জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তাঁদের নাশকতা করার পরিকল্পনা ছিল। #