দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
প্রাণঘাতি করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
ওই আইনজীবীর পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে করোনাকালে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনলাইনে শতভাগ ক্লাস নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণের
বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার নিজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে নোটিশ দেয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
তার নোটিশ পাওয়ার আগামী ৭ দিনের মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করতে বলা হয়েছে এবং ৩০ দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে যৌথ কমিটি গঠন করে অনলাইনে শতভাগ ক্লাস নেয়া তথা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসা পর্যায়ে ডিজিটাল শিক্ষা কনটেন্ট তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, অন্যথায় হাইকোর্টে রিট সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অ্যাডভোকেট খন্দকার হাসান শাহরিয়ার বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগের ক্লাস রুমগুলো ছোট, পর্যাপ্ত পরিষ্কার টয়লেট নাই এবং স্থানের স্বল্পতাও আছে। ফলে করোনার সময়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা অসম্ভব।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সাথে অভিভাবকরাও যাবেন। ব্যাপক যানবাহনের সমাগম হবে। এতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকার বয়স চল্লিশের ওপরে হওয়ায় তাদেরও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।
এর আগে গত ১১ জানুয়ারি অবিলম্বে সারাদেশের সব স্কুল-কলেজ খুলে দিতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ভাওয়াল মির্জাপুর পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল আব্দুল কাইয়ুম সরকারের পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী। শিক্ষা সচিব ও শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের পর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তিনি ২১ জানুয়ারি রিট আবেদন করেন।
রিটে বলা হয়, করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ বার বন্ধের নোটিশ দিয়েছে সরকার। দীর্ঘ দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা এ সময়ে বাহিরে ঘোরাঘুরি করছে, টিভি দেখে সময় ব্যয় করছে। এছাড়া মোবাইল ব্যবহার করে খারাপ অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে ওই রিটে।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত বছর ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়।/