দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খেলোয়াড়ী সত্তার প্রতি সম্মান জানিয়ে জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০২১ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো “ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা” আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রথম আয়োজনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২২ আয়োজন করা হয়। সোমবার (২ জানয়ারি) নগরভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র তাপস এসব কথা বলেন।
আমাদের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সভাপতি মোঃ মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদসহ কমিটির সকল সদস্য এবং আমাদের সকল সম্মানিত কাউন্সিলরের ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উন্মাদনাকে পূঁজি করে, ঢাকাবাসীর প্রাণোচ্ছল অংশগ্রহণের ওপর ভর করে এবং গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতার ফসল হিসেবে আমরা দুটি সফল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। সেজন্য মেয়র তাপস ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সকল সম্মানিত সদস্য, সকল সম্মানিত কাউন্সিলর, আমার প্রাণপ্রিয় ঢাকাবাসী ও গণমাধ্যমের প্রিয় বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন । ঢাকা দক্ষিনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, করপোরেশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ, বাফুফে, বিসিবি ও বিবিএফ এর প্রতিনিধিবর্গ, করপোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খেলা ‘ফুটবল’ এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ‘ক্রিকেট’ নিয়েই ২০২১ ও ২০২২ সালে এই ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন করেছেন। বিগত দুইবারের ন্যায় এবারের আয়োজনেও কর্পোরেশনের আওতাধীন ৭৫টি ওয়ার্ডকে সম্পৃক্ত করেছেন্। কিন্তু এবারকার আয়োজনের পরিসর ও ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফুটবল ও ক্রিকেটের পাশাপাশি তৃতীয় ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমরা ব্যাডমিন্টন খেলাকে সম্পৃক্ত করেছি।
তিনি বলেন,এবারের ক্রীড়া উৎসবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের ৭৫টি ওয়ার্ড হতে ৬৪টি দল ফুটবল খেলায়, ৫১টি দল ক্রিকেট খেলায় এবং ৬৪টি দল ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশগ্রহণ করবে। আয়োজনে উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে রাখেতে পুরো প্রতিযোগিতাটি ‘নক আউট’ পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হবে।
আগামী ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ (২১ পৌষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ) তারিখে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে তৃতীয় “ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ফুটবলের উদ্বোধনী খেলা অনুষ্ঠিত হবে। একই মাঠে আগামী মাসে ফুটবল খেলার সমাপনী অনুষ্ঠান ও সমাপনী খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৩ জানুয়ারি তারিখে গোলাপবাগ মাঠে ক্রিকেট খেলার এবং বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের ইনডোর স্ট্যাডিয়ামে ব্যাডমিন্টন খেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে।
এবার মোট নয়টি (৯টি) মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সকল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের ইনডোর স্টেডিয়ামে ও ৫টি ওয়ার্ডের উন্মুক্ত স্থানে ব্যাডমিন্টন খেলাসমূহ অনুষ্ঠিত হবে।
ক্রিকেট এবং ফুটবল, উভয় ক্ষেত্রেই বিজয়ী দলের জন্য ৭ লক্ষ টাকা এবং বিজিত (রানার-আপ) দলের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে অর্থ পুরস্কার হিসেবে প্রণোদনা করা হবে। একইসাথে ব্যাডমিন্টনে বিজয়ী দলকে ৩ লক্ষ টাকা এবং রানার-আপ দলকে ২ লক্ষ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে। গতবারের ন্যায় এবারও টেপ টেনিস বলের বদলে ‘কাঠের বলে’ ক্রিকেট ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরাবরের মতোই আতশবাজির বর্ণিল প্রদর্শনী থাকছে। বর্ণিল আলোকচ্ছটার আবহে মন মাতাতে থাকছে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তোজ জোহরা ঐশী ও ডি রকস্টার খ্যাত গায়ক শুভ’র মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা।
মেয়র বলেন,একসময় ঢাকার তরুণ-যুবকেরা শহরের মাঠে-ময়দানে, অলি-গলিতে খেলাধুলা করে এদেশের ফুটবল-ক্রিকেট খেলাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে সেই চিত্র অনেকটাই ফ্যাকাসে। এর অন্যতম কারণ ঢাকা শহরে খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাব। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডেই ন্যূনতম একটি করে খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং আমাদের সেই উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। আমরা যেখানেই প্রয়োজনীয় জমির হদিস পাচ্ছি সেখানেই খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছি।
তিনি বলেন, খেলাধুলায় ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিগত ২ বছরে আমরা স্বার্থান্বেষী মহলের বহুমাত্রিক পাঁয়তারায় দীর্ঘদিন ধরে দখলে ৪টি জমি উদ্ধার করেছেন। বিগত ২ বছরে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে লক্ষীবাজার খেলার মাঠ, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগঞ্জ খেলার মাঠ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে টিকাটুলি খেলার মাঠের উন্নয়ন করেছি এবং ইতোমধ্যে সেসব মাঠ সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা একটি জায়গা উদ্ধার করেছি এবং সেখানে চন্দনকোঠা খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় লক্ষ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে।
এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পের আওতায় আমরা ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাংলাদেশ মাঠ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠের উন্নয়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাসাবো সবুজ বলয় (বাসাবো বালুর মাঠ) ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে ধুপখোলা খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে মেন্দিপুর খেলার মাঠ এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডে বাসাবো ভূইয়ার মাঠের উন্নয়নে আমাদের কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে।
মেয়র তাপস বলেন,অত্যন্ত আনন্দের সাথে আপনাদের অবগত করতে চাই যে, ইতোমধ্যে ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের সুফল পেতে শুরু করেছেন। বিগত দুটি আয়োজনে অংশ নেওয়া খেলোযাড়দের মধ্যে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোযাড় আকাশ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোযাড় রাজন অনুর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলে এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফরচুন বরিশালে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোযাড় কাজী অনিক। ফলে ‘ঢাকার ছেলে-মেয়েদের এখন আর ফুটবল ও ক্রিকেটের জাতীয় দলে পাওয়া যায় না’ – এমন আক্ষেপ ঘোচানোর যে মহতী উদ্যোগ আমরা শুরু করেছিলাম, সে যাত্রার পালে হাওয়া লেগেছে বলা যায়। আমরা চায়, ঢাকার আগামী প্রজন্ম আবারও এদেশের ফুটবল-ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন খেলায় নেতৃত্ব দিক।
এবারের আয়োজনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন(বাফুফে), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন (বিবিএফ) সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাফফে রেফারি, বিসিবি আম্পায়ার ও বিবিএফ জাজ দিয়ে আমাদের আয়োজনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। আমি আজকের এই সংবাদ সম্মেলন হতে বাফুফে, বিসিবি, বিবিএফ ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এছাড়াও মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, ওরিয়ন গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, লাবিব গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিজসহ যারা আমাদের আয়োজনকে পৃষ্টপোষকতা করছেন, আমি সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
খেলাধুলা শুধু চিত্ত-বিনোদনের মাধ্যমই নয়, বরং, তা নেতৃত্ব-শৃঙ্খলা-ধৈর্য-একতা-নৈতিকতা সমুন্নত রাখারও অন্যতম হাতিয়ার। শুধু তাই নয়, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করার প্রমাণিত অদ্বিতীয় মাধ্যমও খেলাধুলা। নিয়মিত খেলাধূলা তরুণ ও যুব সম্প্রদায়কে নানা ধরনের ক্ষতিকর মাদকের হাতছানি হতে শুধু দূরেই রাখে না, অধিকন্তু তাদের মাঝ হতে জঙ্গীবাদী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব দূর করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে শেখায়।
মেয়র বলেন, সকলেই অবগত আছেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি আমাদের দেখিয়ে চলেছেন, সেই স্বপ্নের লালন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ঢাকা মহানগরীকে উন্নত বাংলাদেশের একটি উন্নত রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছি। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অন্যতম উপাদান শারীরিক ও মানসিক শক্তিতে ভরপুর উদ্যমী তারুণ্য। আর, স্ফুরিত তারুণ্যের বিকাশ ও উন্নয়নে খেলাধুলার বিকল্প নেই। তাই আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এই উদ্যোগের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ফুটবল ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ ঘটবে, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন, জোয়ার আসবে বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন খেলায়। # কাশেম