নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীসহ সারাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর পাশাপাশি নতুনভাবে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েই ছলছে। এপরিস্থিতিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক, যন্ত্রপাতি এবং ডেঙ্গুরোগ নিয়ে গবেষণা করতে ‘ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার (ভিসিআরসি)’ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিদের্শনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত একইসঙ্গে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষায় আগের জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রায় প্রদান করেছেন।
রোববার (১৩ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় দেন। রায়ে আদালত ভিসিআরসি সেন্টার করার কথা বলেছেন।রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্টের রায়ে ভারতের আদলে ওই গবেষণা সেন্টার করতে বলা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে। তবে কতদিনের মধ্যে এই সেন্টার করতে হবে তা নিশ্চিত করে বলেননি। উল্লেখ্য, ভারতে ১৯৭৫ সালে ‘ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে খুব ভালো ফলাফল পেয়েছেন তারা।
আদালতে রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। আর বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাইফুর রশীদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রিমি নাহরীন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান।
আইনজীবী তানভীর আহমেদ জানান, আদালতের আহবানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার সুপারিশসহ বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন। আজ মামলাটি নিষ্পত্তি করে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সিভিল এভিয়েশন এবং সিটি করপোরশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদীভাবে ভিসিআরসি এর মতো একটি সেন্টার করতে সরকারকে বলেছেন। শাহজালাল বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ১২ মার্চ রুল দেন হাইকোর্ট।
এরমধ্যে বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশিত হলে সেসব প্রতিবেদন যুক্ত করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সম্পূরক আবেদন করেন আইনজীবী তানভীর। এ আবেদনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশনা চাওয়া হয়। পরে ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আদালত শাহজালাল বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বেবিচককে নির্দেশ দেন। বেবিচকের চেয়ারম্যানকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এ নির্দেশনার পর সিটি করপোরেশন ও বেবিচক একাধিকবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
গত ৬ মার্চ সেসব প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। সে ধারাবাহিকতায় গত ১৩ মার্চ কবিরুল বাশারসহ তিনজনের মতামত জানতে তাদের ডেকেছিলেন আদালত। সে অনুসারে কবিরুল বাশার আদালতে বিমানবন্দর এলাকার চারপাশে চার কিলোমিটার এলাকা মশামুক্ত রাখা নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধান’র বিভিন্ন বিধি ও ৮টি সুপারিশ প্রতিবেদনে তুলে ধরেন। কবিরুল বাশারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১৯৭৫ সালে ভেকটর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত আধুনিক ও যুগোপযোগী।
বাংলাদেশে এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে রোগ বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক, যন্ত্রপাতি এবং এর রোগতত্ত¡ নিয়ে গবেষণা করা যাবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে ১৬ প্রজাতির মশা। আর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাওয়া গেছে ৯ প্রজাতির মশা। এগুলো হচ্ছে- কিউলাস কুইনকিউফেসিয়েটাস, কিউলেক্স ট্রিটাইনায়োরিঙ্কাস, কিউলাস গেলিডাস, এডিস ইজিপটি, এডিস অ্যালবোপিকটাস, ম্যানসোনিয়া অ্যানুলিফেরা, ম্যানসোনিয়া ইউনিফর্মিস, আর্মিজেস সাবলবাটাস, টক্সোরিঙ্কাইটস স্ধেসঢ়;প্লডেনস।
এ কীটতত্ত¡বিদ তার প্রতিবেদনে বলেছেন, প্রজাতি ভেদে মশার প্রজনন স্থল, প্রজনন ঋতু ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভিন্ন। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতার জন্য এর জীবনাচরণ সম্পর্কে জানা দরকার। মশার বায়োলজি, ইকোলজি, স্বভাব পর্যালোচনা করে এর নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ প্রয়োজন। বিমানবন্দর এলাকায় মশার প্রজনন স্থল হিসেবে দুটি বড় খাল, ছোট-বড় পাঁচটি জলাশয়, খোলা ড্রেন, পরিত্যক্ত টায়ার, ছোটো-বড় বিভিন্ন ধরনের পাত্র, গাছের কোটর এবং বিমানবন্দর ঘিরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড (১, ১৭, ৪৯, ৫০ ও ৫২), এয়ারফোর্স এরিয়া, প্রিয়াঙ্কা হাউজিং ছাড়াও রাজউকের কিছু জায়গার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে এ শিক্ষক বলেছেন, যেহেতু মশা চার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে, তাই বিমানবন্দরকে মশামুক্ত করতে হলে এর চারপাশে চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এর জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। কাজটি করা কঠিন নয়। # কাশেম