নিজস্ব প্রতিবেদক
অতীতের সব সরকারের আমলেই সুবিধা ভোগী, তেলভাজ, অনেক কৌশলী এবং বড় মাপের দুর্নীতিবাজ ও নানা অনিয়মের সাথে জড়িত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান। অবশেষে তার অপসারণে দাবিতে নগর ভবনে বিক্ষোভ করেছেন নির্যাতিত প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
অভিযোগ রয়েছে, তার আতীত এবং বর্তমানের সব অপকর্ম আড়াল করার জন্য তিনি সব সময় গণমাধ্যমকে এরিয়ে চলছেন। এমনকি অধীনস্থ প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অযাচিত হয়রানী করতেন এবং নানা ভাবে চাপে রাখতেন বলে জানান প্রতিবাদী প্রকৌলী ও কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, তার কারণে গুলিস্তান- যাত্রবাড়ি ফ্লাইওভারের কয়েশত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে ডিএসসিসি । এই ফ্লাইওভার নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ‘ওরিয়ন গ্রুপের’ স্বার্থ রক্ষায় তিনি সব সময় ব্যস্ত ছিলেন। তবে বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের হস্তক্ষেপে এই ফ্লাইভোর থেকে ডিএসসিসি এখন কিছু রাজস্ব পাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, সদ্য পদত্যাগীকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্টতার দোহাই দিয়ে এবং মেয়র তাপসকে ম্যানেজ করে অস্বাভাবিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান। ডিএসসিসিতে একক ক্ষমতার আদিপত্য বিস্তার করেছেন তিনি। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ওপর মেয়রের ক্ষমতা তিনি নিজে প্রয়োগ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০২৩ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি ভাগিয়ে নিয়েছেন।
এতোদিন ডিএসসিসিতে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তার নির্যাতন এবং হয়রানী মূলক বিভাগীয় মামলার যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। তবে ছাত্র জনতার গণআন্দোলনেমুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পাশাপাশি ক্ষমতার পালাবদল শুরু হয়েছে। এবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান এবং সহযোগি চিহ্নিত আওয়ামী লীগার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের গংদের বিরুদ্ধে ফুসকে উঠছে ডিএসসিসিতে নির্যাতিত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা।
এদিকে ১১ আগস্ট (রোববার) নগর ভবনে নির্যাতিত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা মিছিল সহকারে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের কাছে প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান এবং তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানা দাবি নামা পেশ করেছেন।
ইতোমধ্যে নগর ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে সচেতন নাগরিকের ব্যানারে পোস্টারও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরের দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘প্রবেশ নিষেধ’ সম্বলিত পোস্টার।
গত ৫ জুন শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান এবং খায়রুল বাকের কার্যালয়ে আসছেন না। এর মধ্যে দেয়ালে দেয়ালে আশিকুর রহমানের ‘দুর্নীতির শ্বেতপত্র’ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেখানে অভিযোগ করা হয়, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে তৎকালীন নির্বাহৗ প্রকেশৈলী আশিকুর রহমান মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ৮শ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২শ কোটি টাকা করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ান ইলেভেনের পর তিনি পালিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। সিটি করপোরেশনের নানা প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট, প্লটসহ নানা ধরনের সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি।ডিএসসিসির অনেক উন্নয়নককাজের গুরুত্ব পূর্ণ নথি আটকে রয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের দপ্তরে।
এদিকে নির্যাতিত লোকজন সাংবাদিকদের বলেন, তাদের দাবি, প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের পদত্যাগ এবং তার নানা দুর্নীতির তদন্ত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। তিনি অনেকের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক বিভাগীয় মিথ্যে মামলা করেছেন। প্রকৌশলীদের দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন করেছেন। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
ওই প্রকৌশলী বলেন, আগেও অনেকবার মেয়র মহোদয়, সিইও স্যারকে বলেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি, তার (আশিকুর) হাত অনেক লম্বা। কিন্তু এখন এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন, এজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিটি জানানো হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান প্রকৌশী আশিকুর রহমানকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
দূরবীণ / একে