দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
চীন করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাইওয়ানের।
গত ৬ ফেবওুয়ারি পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেছে। তাইওয়ান গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছে। খবর আলজাজিরার।
ঠিক এ সময় শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর সদস্যপদ থেকে দেশটিকে বাদ দেয়ার বিষয়টি তদন্তের আওতায় এলো। কারণ অত্যন্ত সংক্রামক এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্বজুড়ে দেশগুলো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
চীনের আপত্তির কারণে জাতিসঙ্ঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএইচও এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান সংস্থার (আইসিএও) সদস্য হতে পারেনি তাইওয়ান।
বেইজিং বলছে, এই দ্বীপটি কোনো রাষ্ট্র নয়। এটি চীনের চিরাচরিত একটি প্রদেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তাইওয়ানের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করে চীন।
এর আগে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা জানায়, তাইওয়ানে প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন; কিন্তু ওই সময় মাত্র ১০ জন আক্রান্ত ছিলেন বলে দাবি তাইওয়ানের।
বৃহস্পতিবার তাইওয়ান বলছে, বর্তমানে তাইওয়ানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৩ জন। এক সংবাদ সম্মেলনে তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জোনি অও বলেন, এই ভুল পরিসংখ্যানের কারণ হলো, চীন জাতিসঙ্ঘকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথভাবে কাজ করেছে বেইজিং।
ইতোমধ্যে তাইওয়ানের দুই বিশেষজ্ঞ করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে ভ্রমণ করেছেন। তারপরও আপত্তি রয়েই গেছে। আন্তর্জাতিক চলাচল নিষেধাজ্ঞার এবং চীন থেকে ভ্রমণকারী লোকদের ওপর বিধিনিষেধ বাড়ানোর কারণে গত সপ্তাহে তাইওয়ান থেকে ভিয়েতনাম এবং ইতালি যাওয়ার ফ্লাইটগুলো ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সেগুলো ছিল তাইওয়ানের ফ্লাইট।
কূটনৈতিক তৎপরতায় ভিয়েতনামের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও এখনো তাইওয়ানের রাজনৈতিক অবস্থান এবং চীনের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে বৈশ্বিক বিভ্রান্তির কারণে ইতালিতে দেশটির ব্যাপারে বিধিনিষেধ রয়েই গেছে।
গত সপ্তাহে ডব্লিউএইচও যখন ভাইরাসের একই মাত্রার গুরুত্বকে বোঝাতে অসত্য কোডিং ব্যবহার করে মহামারীর বিশ্ব মানচিত্র প্রকাশ করতে শুরু করে তখন তাইওয়ানকে চীন হিসেবে সমান স্তরের কোডিং দেয়া হয়।
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির তাইওয়ান-আমেরিকান প্রফেসর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চুনহুই চি বলেছেন, এটির সরাসরি প্রভাব তাইওয়ানের নাগরিক ও যে বিমান সংস্থাগুলো সেখানে ভ্রমণ করছে তাদের ওপর পড়ছে।
ডব্লিউএইচও বর্তমানে স্ব-শাসিত অঞ্চলটিকে ‘তাইপেই এবং শহরতলি’ বলে উল্লেখ করছে। আর আগে সংস্থাটি এই ভূখণ্ডের ক্ষেত্রে ‘তাইওয়ান, চীন’, ‘তাইপে পৌরসভা’ এবং ‘তাইপে’ ব্যবহার করেছে।
মুখপাত্র জোনি অও বলেন, ‘আমি ডব্লিউএইচওকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনারা কতবার তাইওয়ানের নাম পরিবর্তন করতে চাইছেন? গ্লোবাল হেল্থ ডিপ্লোম্যাসির তাইওয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও চিকিৎসক কুয়ান-ইউ চিয়াং-এর মতে, চীনে ২৮,০০০-এরও বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ৫৫০ জনেরও বেশি মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
সেখানে তাইওয়ানে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি ঘটনা এমন লোকদের সাথে যুক্ত হয়েছে, যারা সম্প্রতি চীনে গিয়েছিলেন বা বসবাস করেছেন। সুতরাং তাইওয়ানের ক্ষেত্রে একে ‘প্রাদুর্ভাব’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায় না।
তাইওয়ান চীনের অংশ হিসেবে তার নিজস্ব তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক আজব অবস্থানে রয়েছে, যেখানে ডব্লিউএইচও কর্তৃক অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো তথ্যে একই প্রবেশাধিকার থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
তথ্য আপডেটের জন্য একে যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিত্রদের ওপর নির্ভর করতে হয় অথবা কেস বাই কেসের ভিত্তিতে বেইজিংয়ের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। চিয়াং-এর মতে, ডব্লিউএইচওর মতো সংস্থাগুলো থেকে তাইওয়ানকে বাদ দেয়া দেশটির চিকিৎসক সমাজ এবং সফল গণস্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির দক্ষতা হ্রাস করা বোঝায়।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ২০১৭ সূচকে তাইওয়ানের অবস্থান ১৪ তম ছিল যেখানে ৬০টি দেশের মধ্যে চীনের অবস্থান ছিল শীর্ষে। #