দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
জনস্বার্থে গণপরিবহনে-সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে মোহাম্মদপুর এলাকায় বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় ২২ ও ২৬ নম্বর যাত্রাপথে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ বাস সেবা চালু উপলক্ষ্যে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই মন্তব্য করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “পরিবহনের শৃঙ্খলা, রাস্তার শৃঙ্খলা — এটি আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। সিটি করপোরেশনের বাস রুট রেশনালাইজেশনের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং সবাইকে বলব আমাদের স্বার্থে এই উদ্যোগকে সফল করবেন। জনস্বার্থে সফল করতে হবে।”
উন্নয়নের সুফল জনগণকে পৌঁছে দিতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নের গুরুত্ব উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই নগরীতে, বাংলাদেশের সড়কে এত স্থাপনা — কোনও কিছুই সত্যিকারের সুফল দেবে না, যদি শৃঙ্খলা না থাকে, রাস্তায় যদি শৃঙ্খলা না থাকে, পরিবহনে যদি শৃঙ্খলা না থাকে — আমাদের উন্নয়ন বৃথা হয়ে যাবে।”
সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে দুই মেয়র পরিশ্রম করে চলেছেন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে এ কাজে সহযোগিতার আহবান জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজকের যে প্রোগ্রাম এই প্রোগ্রাম সফল করতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে। সেজন্য স্টেকহোল্ডার যারা আছেন — মালিক, শ্রমিক ও আমাদের পুলিশ বাহিনী — সবাইকে আমি (সহযোগিতার) অনুরোধ করব।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আগামী দিনে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় পর্যায়ক্রমে ঢাকা নগর পরিবহনের সকল নতুন যাত্রাপথে নতুন বাস নামানো হবে বলে জানান।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমরা পরীক্ষামূলকভাবে (২১ নম্বর যাত্রাপথে) শুরু করেছিলাম। আমাদের কাছে সবচেয়ে প্রতিকূলতা ছিল যে, কি ধরনের বাস আমরা দিবো। আমরা সে সময় ১৯ সালের যে বাসগুলো ছিল, সেই বাসগুলো দিয়ে শুরু করেছিলাম। কিন্তু এবার ঢাকাবাসির প্রত্যাশা পূরণকল্পে আমরা একদম নতুন নির্মিত ৫০টি বাস দিয়ে ২২ নম্বর যাত্রাপথ শুরু করছি। এখান থেকে পিছনে যাওয়ার আর সুযোগ নেই। এখন থেকে নতুন বাসই ঢাকা শহরে নামবে। কোনও পুরাতন বাস নামার আর সুযোগ থাকবে না। এখন থেকে ২০২২, ভবিষ্যতে ২০২৩ — যখনই আমরা একেকটি যাত্রাপথ শুরু করব, আমরা নতুন বাস দিয়েই সেই যাত্রাপথ শুরু করব।”
নগর পরিবহনে সেবার মান ধীরে ধীরে আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন উল্লেখ করে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমাদেরকে এই তিনটি যাত্রাপথ শুরু করতে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের পরীক্ষামূলক ২১ নম্বর যাত্রাপথ থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, সেটার মাধ্যমে আমরা এবার দুটো যাত্রাপথ শুরু করলাম। আগামী নভেম্বরে ২৩ নম্বর যাত্রাপথ আমরা শুরু করতে পারবো। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আমরা ঢাকা শহরের সকল যাত্রাপথে এই নতুন বাস দিয়ে ঢাকা নগর পরিবহনকে একটি সুশৃঙ্খল গণপরিবহন পরিণত করব।”
নগর পরিবহনের মাধ্যমে যাত্রীসেবার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করা হবে জানিয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আজকে আমরা আরও দুটি যাত্রাপথ শুরু করছি। একটি যাত্রাপথ ২৬ নম্বর যাত্রাপথ। এই যাত্রাপথের সকল বাস সেবা বিআরটিসি দিচ্ছে। আরেকটি যাত্রাপথ ২২ নম্বর যাত্রাপথ। এই যাত্রাপথে সম্পূর্ণভাবে বেসরকারিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। আপনারা দেখবেন, যে বাসগুলো এখন নামানো হচ্ছে সেই বাসগুলোর আসন অনেক মানসম্পন্ন। সুতরাং যাত্রীসেবার যে উৎকর্ষতা, সেই উৎকর্ষতা নগর পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকাবাসী পাবে।”
পরীক্ষামূলক যাত্রাপথে সেবা গ্রহণ করায় ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “যে কোন শহরেরই গণপরিবহন ব্যবস্থা যতটা সুশৃঙ্খল হবে, যতটা কার্যকর হবে, যতটা বাস্তবসম্মত হবে –ততটাই সেই শহরটা বাসযোগ্য হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, গত বছর ২৬ শে ডিসেম্বর আমরা ঢাকা নগর পরিবহনের প্রথম পরীক্ষামূলক যাত্রাপথ শুরু করতে পেরেছি। যাত্রীরা – ঢাকাবাসী এ ঢাকা নগর পরিবহনকে অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন, সমাদৃত করেছেন এবং তারা সেই নগর পরিবহনের সেবা গ্রহণ করেছেন। আমি ঢাকাবাসীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, “রুটপারমিট বিহীন কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। এক রাস্তার গাড়ি আরেক রাস্তায় চলতে পারবে না।”
নিয়মিত সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে তদারকি করতে হবে উল্লেখ করে উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “সাধারণ যাত্রীদের কথা চিন্তা করে আমাদের কঠোর হতে হবে। এই নগরীকে বাসযোগ্য নগরী করে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিতে হবে।”
মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, “এই বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজে যারা আসবেন তারা লাভবান হবেন। এই রুটগুলোতে অন্য বাস চলতে দেওয়া যাবে না, এজন্য বিআরটিএ এবং ডিএমপির সহযোগিতা প্রয়োজন।”
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিবৃন্দ বেলুন উড়িয়ে নতুন বাস সেবা চালুর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
পরে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির মেয়রগণ নগর পরিবহনের নতুন বাসে চড়ে শুক্রাবাদ যাত্রী ছাউনি যান এবং সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন যাত্রী ছাউনির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাদেক খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন ছিলেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ, উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদসহ ডিএমপি, রাজউক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। # কাশেম