দূরবীন নিউজ প্রতিবেদক :
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতি-দীর্ঘসূত্রিতা-প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও অর্থ বরাদ্ধ বৃদ্ধি ইত্যানি নানা অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। এগুলোর সঠিকতা , স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য দুদক কর্মকর্তাদের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধি-বিধান সঠিকভাবে জানার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে কোনো অবস্থাতেই একজন সৎ মানুষ যেন মামলার আসামি না হন। এ ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে “ট্রেনিং অন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এন্ড প্রাকটিসেস ফর এসিসি অফিসিয়াল” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট-এর মহাপরিচালক মোঃ আলী নূর, দুদকের প্রশিক্ষণ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, সিপিটিইউ এর পরিচালক শীষ হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান আত্মস্থ করে নিজ কর্মপ্রক্রিয়ায় তা নিখুঁত প্রয়োগ করা। তা না হলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদের সক্ষমতার কাক্সিক্ষত বৃদ্ধি হয় না ।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অর্থের অপব্যয় এবং মূল্যবান কর্মঘন্টার অপচয় হয়। তাই প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি কিছুটা হলেও হতাশ। কারণ আমাদের কর্মকর্তাদের কমিশনের সামর্থ্য অনুযায়ী দেশ-বিদেশে অনেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে হয়তো সক্ষমতার বৃদ্ধিও হয়েছে কিন্তু ব্যবহারিকভাবে এর সম্পূর্ণ প্রয়োগ হচ্ছে বলে আমরা অনুভব করছি না।
দুদক চেয়ারম্যান এই সংস্থার মহাপরিচালকের উদ্দেশ্যে বলেন, এই ট্রেনিং সেশন থেকেই ট্রেইনি কনিফিডেনশিয়াল রিপোর্ট প্রবর্তন করবেন। এই রিপোর্টে প্রশিক্ষণ কালে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের প্রতি একাগ্রতা, জানার ইচ্ছাসহ সার্বিক পারফর্মেন্স লিপিবদ্ধ থাকবে। যা কমিশনের সচিবের মাধ্যমে কমিশনে উপস্থাপন করতে হবে। এসব প্রশিক্ষণের মূল্যায়নের মানের সাথে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, বিদেশে প্রশিক্ষণ লিংক করা হবে। কারণ জনগণের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভ্যালু ফর মানি আমরা অবশ্যই বিবেচনা করবো।
তিনি বলেন, ক্রয় প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার- প্রকৌশলী- প্রকিউরমেন্ট এন্টিটির যে বা যারা এই প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছেন, কেবল তিনি বা তারাই জবাবদিহি করবেন। অন্য কেউ নন। আমাদের কারো ভুলে যেন কোনো মানুষের সম্মান হানি না হয়।
তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আইনি ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন কিন্তু অপপ্রয়োগ যেন না হয়। মনে রাখবেন আইন সবার জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, বরাদ্দ বৃদ্ধি এগুলো আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী করার সুযোগ রয়েছে। তবে কখনও কখনও আইন ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি কিংবা বরাদ্দ বৃদ্ধি করে সময় মতো জনকল্যাণ হয় না। সময় মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে জনগণ প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
তিনি বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কীভাবে দুর্নীতি হয় তা আমরা কিছু কিছু জেনেছি। কেউ কেউ অনিয়মকে নিয়ম করতে চান। এটা হবে না। প্রজেক্ট প্রোফাইল থেকে শুরু করে এস্টিমেশন এবং সর্বোপরি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপ নির্ধারিত বিধি-বিধান অনুসারে সম্পন্ন করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ বিষয়গুলো আপনারা জানবেন এবং এজাতীয় অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করবেন।
এসব অনুসন্ধান বা তদন্তের মাধ্যমে কর্মপক্রিয়ার পদ্ধতিগত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করার সুযোগও রয়েছে । এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করতে কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ জানানোর আইনি ম্যান্ডেটও কমিশনের রয়েছে। সবাই হয়তো অনুধাবনও করেন, বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিং না করলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কঠিন, শুধু মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে সব সমস্যার হয়তো সমাধানওকরা যাবে না।
এই প্রশিক্ষণ শেষ হবে আগামী ০১ ডিসেম্বর। কমিশনের পরিচালক, উপপরিচালক ,সকহারী পরিচালক ও উপসহকারী পরিচালক পদমর্যাদার ৪০জন কর্মকর্তা এ প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। #