দিদারুল আলম দিদার, দূরবীণ নিউজ :
করোনা আক্রান্ত বাবার মৃত্যু শীর্ষক একটা অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শোকাহত পরিবার ও সন্তান।
পরিবারের সন্তানরা মাত্র চারদিনের ব্যবধানে তাদের পিতা-মাতাকে হারিয়েছেন।
রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর ইসলাম প্রধানের স্ত্রী ১৫ মে মৃত্যুবরণ করেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নে পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রীকে দাফন করা হয়। আমিনুর ইসলাম প্রধান উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাবেক এ চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে বোদা এলাকায় যাওয়ায় পরিবারের সকলের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। এতে আমিনুর প্রধানের করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়। তিনি ঢাকায় নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিস করতেন। স্ত্রীর মৃত্যুর আগের দিনও তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
রাজধানীর ইমপালস্ হাসপাতালে ডা: মজিবুল হক মোল্লার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালসহ বিদেশে নিয়েও তার পূত্রগন চিকিৎসা করিয়েছেন বলে পরিবার জানায়।
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত একই সঙ্গে করোনা পজিটিভ সনাক্ত অবস্থায় রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ১৯ মে মৃত্যুবরণ করেন আমিনুর প্রধান। ১৭ মে মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে সেখানে ভর্তি করানো হয়।
আমিনুর প্রধানের ছোট ছেলে আরিফ প্রধান বলেন, বাবার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিলো যে উন্নত চিকিৎসার জন্য উনাকে ঢাকায় নেয়া যাচ্ছিল না। তাই রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ভর্তি করি। মাত্র ৪ দিনের মধ্যে আমাদের বাবা-মা’র মৃত্যুতে পুরো পরিবারসহ স্বজনরা দিশেহারা ও গভীর শোকাহত।
এ পরিস্থিতিতে বাবার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি অনলাইন পত্রিকায় বাস্তবতা বিবর্জিত সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে আমরা আরো বিপর্যস্ত ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। কেননা স্থানীয়ভাবে আমার বাবা এবং পরিবার দীর্ঘসময় সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িত থেকে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন। পরিবারের চরম শোক ও কষ্টের মাঝে বাবার মৃত্যুকে নিয়ে আমাদেরকে জড়িয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে আসল সত্য ও বাস্তবতা গনমাধ্যমে আসা উচিৎ বলে আমরা তাগিদ অনুভব করছি।
তিনি বলেন, করোনা পজিটিভ সনাক্তের পর বাবাকে রংপুর হাসপাতালে ভর্তির পর বাবার সংস্পর্শে আমরা যারা ছিলাম তাদেরকে আইসোলেশনে যাওয়ার পরামর্শ দেয় প্রশাসন। বাবাকে হাসপাতালে দেখভাল করার জন্য সেখানে আমাদের স্বজন ছিলেন। এর মধ্যেই ১৯ তারিখ বাবার মৃত্যু সংবাদ পাই। ওইদিনই প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার দাফন সম্পন্ন হয়।
পরে আমরা একটিনঅনলাইন পত্রিকায় দেখতে পাই “হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই করোনা আক্রান্ত বাবার মৃত্যু”-শীর্ষক একটি সংবাদ। বাস্তবতা বিবর্জিত এ সংবাদে আমরা মর্মাহত হয়েছি।
প্রতিবেদনে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে আমরা আমাদের প্রিয়তম পিতাকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে এসেছি। আরিফ জানান, করোনা পজিটিভ সনাক্ত হলে প্রশাসনের সহায়তায় বাবাকে নিয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা হই। নিলফামারীর জলঢাকার কাছাকাছি আসলে উনার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
তখন আমরা নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে এমতাবস্থায় ঢাকা যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে করি এবং যেহেতু রংপুরে করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল রয়েছে তাই সেখানে নিয়ে যাই এবং ভর্তি করানো হয়।
আরিফ প্রধান বলেন, বাবার করোনা পজিটিভ সনাক্তের পর থেকেই পরিবারের বাকি সদস্যদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জোর তাগিদ দিচ্ছিল প্রশাসন। হাসপাতালে করোনা রোগীর আইসোলেশান ইউনিটে অতিরিক্ত লোক থাকার কোন সুযোগ না থাকায় নিকটস্থ স্বজনকে দায়িত্ব দিয়ে পরিবারের বাকি সদস্যদের প্রশাসন হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠায়।
শারিরীক অন্যান্য সমস্যা জনিত কারণে রংপুর হাসপাতাল থেকে বাবাকে ঢাকায় নেয়ার কথা বলা হয়। পারিবারিকভাবে সে প্রস্তুতির মধ্যেই বাবা মৃত্যুবরণ করেন। করোনা রোগীর লাশ দাফনে প্রশাসনের পূর্ণ সহায়তায় এবং পরিবারের ইচ্ছায় লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আরিফ প্রধান বলেন, মাত্র চার দিনের ব্যবধানে বাবা-মা’র মৃত্যুতে পুরো পরিবার এখন শোকের সাগরে নিমজ্জিত। বাবার মৃত্যুকে ঘিরে বাস্তবতা বিবর্জিত অনলাইন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশকে দূঃখজনক বলে মন্তব্য করে তার সদ্য প্রয়াত ‘বাবা-মা’ এবং পরিবারের জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন আরিফ ।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি সংকটে কিছু অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। যা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের পরিবারে ঢাকায় ১৫ মে মায়ের মৃত্যু, মায়ের মৃতদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় আসা, পূর্ব থেকেই অসুস্থ বাবার ১৭ মে করোনা পজিটিভ সনাক্তের পর ঢাকা নেয়ার পথে আরো অসুস্থতায় রংপুর করোনা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সেখানকার পরামর্শে ঢাকা নেয়ার প্রস্তুতি এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা ও পঞ্চগড়-রংপুর দূরত্বের বাস্তবতা কোনো কিছুই প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিবেদনটিতে শুধুই সন্তানদের স্বার্থপরতা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতিতে সদ্য পিতা-মাতা হারা আরিফ প্রধান কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, “যার চলে যায় সে বুঝে হায় বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা”। # কাশেম