বিশেষ প্রতিনিধি,দূরবীণ নিউজ :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও তার বাসভবনের আরো ৫জন আজ সোমবার ( ১৯ জুলাই) শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন টিকা নিয়ে গুলশানের বাসায় ফেরার পরে তার চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের সাথে একথা জানান।তিনি বলেন, “ করোনার টিকা যেটা আজকে এভেলেবল সেটা বিএনপি চেয়ারপারসন নিয়েছেন। শুধু উনিই নেননি, উনা সাথে যারা কাজ করেন, উনাকে সহায়তা করেন, উনার বাসার উনিসহ ৬জন আজকে টিকা নিয়েছেন।”
অধ্যাপক জাহিদ জানান, গুলশানের বাসার আরো কয়েকজন টিকা আগেই নিয়েছেন। উনি কেমন আছেন প্রশ্ন করা হলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, “ যে কথাটি বলতে হয়, আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা সবাই দেখেছেন, উনি হেটে হেটে আলিয়া মাদ্রাসার আদালতে গেছেন এবং তার পরবর্তিতে উনি ২০২০ এর ২৫ মার্চ উনি যখন বের হলেন তখন হুইল চেয়ারে বাসায় এসেছেন, হুইল চেয়ারে করে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন এবং আবার এভার কেয়ারকেয়ার হাসপাতাল থেকে হুইল চেয়ারে তিনি বাসায় ফেরেন। আজকে আপনারা দেখলেন, উনাকে হুইল চেয়ারে করে উনি বাসায় দোতলার কক্ষে গেলেন।”
“ অর্থাৎ এতেই বুঝা যায়, উনার শারীরিক অবস্থা কেমন। উনি তো এরকম ছিলেন না। দীর্ঘ কথা বলতে চাই না। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে উনার করোনা পরিবর্তি যেসব জটিলতা হয়েছিলো তার চিকিৎসা হাসপাতালে করে বাসায় ফেরেছেন।
তবে উনার(খালেদা জিয়া) পুরনো অসুখ আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিক, হাইপারটেনশন, হার্ট ও কিডনি বলেন এগুলোর জন্য মর্ডান চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা প্রয়োজন। এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে যে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে সেখানেও মেডিকেল বোর্ড বলেছে যে, উনার পরবর্তি চিকিৎসা ও ফলোআপের জন্য দেশের বাইরে মর্ডান মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী উনার চিকিৎসা হবে বলে আমরা আশা করি।”
মর্ডানা টিকার বিষয়ে উনার আগ্রহ ছিলো কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “ এটি বলা বাহুল্য বিষয়। আজকে যদি পরিসংখ্যান দেখেন অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকা টিকা হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে লোভনীয় টিকা। কিন্তু এই টিকা কি এখন পাওয়া যাচ্ছে?অর্থাৎ আপনি চাইলেই হবে না এখানে দেখার বিষয় কোনটা এভেলেভেল।”“ এই প্রতিষ্ঠানে(শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতাল) এভেলেভেল হচ্ছে মর্ডানা টিকা এবং ঢাকা শহরের বেশিরভাগ সেন্টারে এই টিকাই আছে। ফাইজারের টিকা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। কাজেই এক সেন্টারের টিকা অন্য সেন্টারে টিকা দেয়া যায় না।”
“উনার নিজের কোনো চয়েজ নাই। উনি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন সর্বোপরি এই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী আইনের প্রতি ও নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং আছেন। সেই অনুযায়ী উনি নিবন্ধন করে হাসপাতালে এসে ভ্যাকসিন নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।”
“আপনারা বলতে পারেন, গাড়ীর ভেতরে কেনো টিকা নিলেন? জবাবে তিনি বলেন, “ ওইখানে উঠা যে জায়গাটা সেই উঠার যে স্লভটা, সেই স্লভটা কিন্তু ভাঙা। যার জন্য উনাকে … উনার জন্য আমরা হুইল চেয়ার সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন উনারা (হাসপাতালের চিকিৎসকরা) বললেন, কুইন্সের যে বক্স আছে সেটা নিয়ে এসে আমাদের যে এক্সপার্ট নার্স আছে ওরা গাড়িতে টিকা দিয়ে দেবেন। আমরা বলেছি, ঠিক আছে।”
“আবার অন্যান্যরা যারা ম্যাডামের সাথে ছিলেন, তারা কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন।”এর আগে বিকাল সাড়ে তিনটায় গুলশানের বাসা ফিরোজায় থেকে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের গাড়িতে করে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতালে এসে বিকাল ৪টায় টিকা নেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এই সময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন প্রমূখরা ছিলেন। সেখানে পৌঁছালে নেতা-কর্মীরা একনজর নেত্রীকে দেখতে ভিড় করে। এ সময়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় আমিনুল হক, ইশরাক হোসেন নজরুল ইসলাম, রাজীব আহসান, মহানগরের কাজী আবুল বাশার, যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা এবং চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় টিকা ডোজ:
খালেদা জিয়া দ্বিতীয় টিকার ডোজের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১৯ আগস্ট। গত ৮ জুলাই ‘সুরক্ষা’ অ্যাপসের মাধ্যমে করোনার টিকা জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গত ১৪ এপ্রিল গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় বিএনপি চেয়ারপারসন করোনায় আক্রান্ত হন। দুই সপ্তাহ বাসায় চিকিৎসা নেয়ার পর ২৭ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
সেখানে পোস্ট কোভিড জটিলতায় দীর্ঘ ৫৩ দিন চিকিতসাধীন থেকে গত ১৯ জুন খালেদা জিয়া বাসায় ফেরেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে ওই সময়ে করোনা ঝুঁকি দেখা দেওয়ায় তাকে বাসায় স্থানান্তর করে চিকিতসা দেয়া হচ্ছে।
এডিজেড/একে/ দূরবীণ নিউজ।