দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে একটি সহজ কৌশল জানালেন। তার কৌশলটি হচ্ছে দিনে একাধিকবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়া। সম্প্রতি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগীর হাঁচি-কাশি থেকেই অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাই এই রোগীর সংস্পর্শে যারা থাকবেন তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তার জন্য হাতে মুখে এমনকি পুরো শরীরেই মাস্ক এবং অ্যাপ্রোন ব্যবহার করা অবশ্য কর্তব্য।
তবে সাধারণ অবস্থায় করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কাউকে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি
ওই দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে করোনাভাইরাস এবং এর থেকে মুক্ত থাকার নানা দিক দিয়ে কথা বলেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা জানান , করোনাভাইরাস প্রধানত একজন রোগীর শরীর থেকেই হাঁচি-কাশির মাধ্যমেই অন্যদের শরীরে ছড়ায়। কারো শরীরে যদি এই ভাইরাস ধরা পড়ে তাহলে ওই রোগীর হাঁচি এবং কাশি থেকেই মূলত অন্যদের শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে।
অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা জানান, যেহেতু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু ধরা পড়েনি তাই বলা যায় আমরা এখনো করোনামুক্ত আছি। তবে ঝুঁকি নেই এমনটা বলা যাবে না। ঝুঁকি আছে বলেই তো আমরা বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আগত প্রত্যেক যাত্রীকে স্কিনিং করার ব্যবস্থা করেছি।
প্রাথমিকভাবে বিদেশফেরত একজন যাত্রীকেও যদি অসুস্থ অবস্থায় আমরা পাই তখনি তাকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাচ্ছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি আমরা নিশ্চিত হই যে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন তখনি তাকে রিলিজ দেয়া হয়।
অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা জানান, এখন পর্যন্ত আমরা একটিই পরামর্শ দিয়ে আসছি আর সেটি হলো করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দিনে একাধিকবার সাবান দিয়ে দুই হাত ভালো করে ধুইতে হবে। দুই হাত যদি ভালোভাবে ধোয়া থাকে তাহলে এই হাতের মাধ্যমে কোনো জীবাণুই কোনো ব্যক্তির শরীরের অন্য কোথাও ছড়াতে পারবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও হাত ধোয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় খুবই জরুরি সেটি হলো প্রতিষেধকের চেয়ে আমাদের জীবনাচরণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। অর্থাৎ দিনে একাধিকবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুইতে হবে।
অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা জানান, এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। যেহেতু করোনা নামের এই ভাইরাসটি নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে তাই এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন দেশে কাজ শুরু হয়েছে।
অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা জানান , ভাইরাসজাতীয় কোনো রোগের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। প্রথমত, এই জাতীয় প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের ল্যাবরেটরি টেস্টের প্রয়োজন হবে।
এর পরে এই ভ্যাকসিনের প্রায়োগিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও দরকার। সব মিলিয়ে বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। তবে এটি নিয়ে কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আমার মনে হয় না করোনাভাইরাসের এই টেইনর বা আউটব্র্যাকের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে।
অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা জানান , আমরা বারবার বলেছি শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি এবং এই রোগীর যারা পরিচর্চা করবেন তারাই মাস্ক ব্যবহার করবেন। এর বাইরে অন্য কারো আতঙ্কিত হয়ে মাস্ক ব্যবহারের দরকার নেই। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না গেলে অন্যদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই।
অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা জানান, আমরা যেটুকু জেনেছি চীনে এই রোগটি প্রথমে একটি প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে আসে। এরপর পর্যায়ক্রমে মানুষ থেকে মানুষের শরীরে এই জীবাণুটি ছড়াচ্ছে।
এখন ধরুন চীন থেকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো লোক বাংলাদেশে এলো- তাহলে তার মাধ্যমেই এই জীবাণুটি দেশে প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকবে। অর্থাৎ এই জীবাণুটি হেঁটে হেঁটে বা বাতাসে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। রোগটি অন্য দেশে ছড়াতে বাহক হিসেবে লাগবে মানুষ বা যাত্রী।
অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফোরা জানান, আমরা কিন্তু একটি কথা পরিষ্কার করেই বলেছি। করোনাভাইরাসের এখনো কোনো প্রতিরোধক অথবা প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। তবে সাধারণভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
এখন কেউ যদি নিম তেল ব্যবহার করতে চান, সেটা হয়তো তিনি করতে পারেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে হাত ধোয়া এবং আমাদের জীবনাচরণ যেভাবে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে সেভাবেই করা উচিত বলে আমি মনে করি। # সূত্র. নয়া দিগন্ত ।