দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের প্রয়োজন আছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে আসন্ন নির্বাচনে আগে আইন প্রণয়নের সুযোগ নেই। তাই রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমেই এবারো নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
আজ রোববার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রীএ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের দাবি জানানো হলেও সেটি সরকারের হাতে নেই।
ডিআরইউ সভাপতি মোরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিআরইউ সাধারণ সস্পাদক মসিউর রহমান খান।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটি আইনের সমতুল্য না হলেও কাছাকাছি বলে উল্লেখ করেন আইন মন্ত্রী। তিনি বলেন, যেহেতু রাষ্ট্রপতি সকলের মতামতের ভিত্তিতে এটি করেছেন, সেহেতু এটি আইনের মতোই। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আইন করার প্রয়োজনীয়তা আছে।
কিন্তু কোভিডের কারণে সংসদ অধিবেশন স্বল্প সময়ের জন্য বসছে। অথচ আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই এ সময়ের মধ্যে আইন করা সম্ভব নয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমেই আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষে দেশে ফিরে গত ৪ অক্টোবর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জানান, সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির বিষয়টি সরকারের হাতে নেই। এটা আদালতের বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তার একটি মামলা পেন্ডিং রয়েছে। অপর একটি মামলা হাইকোর্টে চলমান অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় তাকে স্থায়ী মুক্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মামলার রায়ে নির্দেষ প্রমাণিত হলে তিনি স্থায়ী মুক্তি পাবেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত মানবিক হওয়ার কারণে ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। এ জন্য বিএনপির উচিৎ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূনর্বহালের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। এটি একটি মিমাংশিত বিষয়। এবিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের রায় রয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের রায় যখন মানা হয়, তখন একজন নাগরিক হিসেবে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অতীতেও হয়েছে, আগামীতেও হবে।
সাংবাদিকদের হয়রানির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, যারা দেশের বাইরে বসে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে এ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ই-ভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো ডিজিটাল গ্রাহক প্রতারণায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
তবে এই আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। মামলা হলেই যেন সাংবাদিকরা গ্রেফতার না হয়, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হলে তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পীর সিন্ডিকেট কর্তৃক হুমকি ও হয়রানিমূলক মামলা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিদেশে অবস্থানরত সাইবার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান আইন মন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পরিবার, সরকার, বিচার বিভাগ ও দেশের বিরুদ্ধে অপ্রপচার চালানো হচ্ছে।
এ অপরাধে জড়িত সাইবার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। এ জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট রয়েছে। এতে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে পারবো। আর অপরাধীরা যেসব দেশে আছে, সেই দেশের আইনের আওতায় আনতে পারবো।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিচার প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, কোনও মামলা চলাকালে তা নিয়ে আমি মন্তব্য করি না। আমার প্রতিক্রিয়া মানেই তা সরকারের, আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া। তাই এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই না। এতে করে চলমান বিচারকার্য প্রভাব বিস্তার হতে পারে। #