কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে। ডাকসুর নির্বাচনে ক্যাম্পাসের নির্ধারিত ৮টি কেন্দ্রে (৮১০টি বুথ) শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন।
কার্জন হল কেন্দ্রে ভোট দেবেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা (৫ হাজার ৭৭ ভোট)। শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রটি নির্ধারণ করা হয়েছে জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীদের জন্য (৪ হাজার ৮৫৩ ভোট)। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ভোট দেবেন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা (৫ হাজার ৬৬৫ ভোট)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে ভোট দেবেন বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা (৪ হাজার ৭৫৫ ভোট)। স্যার এ এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন সিনেট ভবন কেন্দ্রে (৪ হাজার ৮৩০ ভোট)।
সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভোট দেবেন উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে মাস্টারদা সূর্য সেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীমউদ্দীন হলের মোট ৬ হাজার ১৫৫ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। ভূতত্ত্ব বিভাগ কেন্দ্রে ভোট দেবেন কবি সুফিয়া কামাল হলের ৪ হাজার ৪৪৩ জন ছাত্রী। আর ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে শামসুন নাহার হলের ৪ হাজার ৯৬ জন ছাত্রীর ভোটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে ডাকসুতে কে হবেন ভিপি (সহসভাপতি), কে হবেন জিএস (সাধারণ সম্পাদক) বা এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) আবার হল সংসদগুলোতে কারা এগিয়ে আছেন, তা নিয়ে আগের রাতে চলছে কড়া হিসাব–নিকেশ। এর মধ্যে একদল শিক্ষার্থী সারা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ডাকসু নির্বাচনের আমেজ কেমন, সেটি বোঝার চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এসব জায়গায় পুলিশের পাশাপাশি আছেন বিএনসিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা। প্রবেশমুখে অবস্থান ছাড়াও পুরো ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছে পুলিশ। ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টিএসসি এলাকায় পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ডগ স্কোয়াড ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট নিয়োজিত রয়েছে ক্যাম্পাসে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, আবাসিক হলগুলো থেকে অনেক শিক্ষার্থী বের হয়ে এসেছেন। তাঁরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করছেন। শহীদুল্লাহ হল থেকে শুরু করে হাঁটতে হাঁটতে টিএসসি পর্যন্ত এসে দেখা গেল, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ, টিএসসির পায়রা চত্বরসহ পুরো টিএসসি এলাকায় শিক্ষার্থীরা ঘোরাঘুরি করছেন। সেখান থেকে ভিসি চত্বর যেতে যেতে দেখা গেল, রোকেয়া হলের সামনে ফটো তুলছেন একদল শিক্ষার্থী। বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীর অবস্থান দেখা গেল ভিসি চত্বরে।
সেখানে কথা হলো স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শেখ শরীফ আহমেদের সঙ্গে। তিনি সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। শেখ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেন মনে হচ্ছে আজকে চাঁদরাত, কাল ঈদ।’ এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমরা ডাকসু পাচ্ছি। আমরা ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। বেশ ভালো লাগছে।’
কাছাকাছি এলাকায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী প্রত্যয় সাহা সৃজন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করছি। সবার মাঝেই আগ্রহ, কে হবে কাঙ্ক্ষিত ছাত্র প্রতিনিধি।’
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে দল বেঁধে ফটো তুলছিলেন একদল শিক্ষার্থী। সেখানে কথা হয় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. সজীবের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের আগের রাতের মতোই মনে হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনগুলো সেভাবে সুষ্ঠু হয় না, তাই ডাকসু নির্বাচন কেমন হয়, সেটি দেখার অপেক্ষাতে সবাই। এখন পর্যন্ত যে অবস্থা দেখছি, তাতে পরিবেশ সুন্দরই মনে হচ্ছে। ডাকসুর আগের রাতের পরিবেশ দেখার জন্য ক্যাম্পাসে বেরিয়েছি।’
আবাসিক হলগুলোর সামনেও অনেক শিক্ষার্থীর অবস্থান দেখা গেছে। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। আলোচনার মূল বিষয় ডাকসু নির্বাচন। কোন পদে কোন প্রার্থী এগিয়ে, কে পিছিয়েসহ বিভিন্ন প্যানেল ধরে আলোচনা করছেন তাঁরা। #