দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
বরগুনায় আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন কেন বাতিল করা হবে না, মিন্নির আইজীবীর কাছে জানতে চেয়েছেন বিচারিক আদালত। আদালত সোমবারের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ( ৯ জানুয়ারি) বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে মিন্নিসহ ৯জন আসামী উপস্থিত ছিলেন। আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে ৩জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের জেরাও শেষ করেছেন আসামি পক্ষের ৭ জন আইনজীবী।
মিন্নির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বুধবার জামিন বাতিলের আবেদন করেন।
আগামী সোমবার সকালে আবার তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করবে আদালত। বুধ এবং বৃহস্পতিবার বাদীসহ চারজনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় বরগুনা কারাগার থেকে আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইয়ূম রাব্বি আকন, রেজোয়ানুল ইসলাম টিকটক হৃদয়, হাসান, রাফিউল ইসলঅম রাব্বি, কামরুল হাসান সায়মুন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাতকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে মুক্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার চাচার সাথে আদালতে হাজির হয়।
আদালতে তিনজনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষে বেলা ৩টায় আসামিদের বরগুনা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরআগে বেলা ১১ টায় সাক্ষীর বক্সে সাক্ষ্য দিতে উঠেন মামলার বাদীর স্ত্রী নিহত রিফাত শরীফের মা ডেইজি বেগম। এরপর সাক্ষ্য দেয় নিহত রিফাত শরীফের চাচাত বোন নুসরাত জাহান অনন্যা ও রিফাত শরীফের আপন ছোট বোন ইসরাত জাহান মৌ।
প্রথমে রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার তাদের জবানবন্দি দেওয়ার সহায়তা করেন। নিহত রিফাত শরীফের মা ডেইজি বেগম দীর্ঘ সময় নিয়ে তার পুত্র হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে আদালতে কয়েকবার কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। আসামি পক্ষের ৭ জন আইনজীবী তাকে জেরা করেন। দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
অন্যদিকে চার্জ গঠন শেষে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন। তারা হলেন, আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ ও মারুফ মল্লিক। জামিন পাওয়া দুই আসামি হলেন, মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ নম্বর আসামি আরিয়ান শ্রাবণ ও ১১ নম্বর আসামি মারুফ মল্লিক।
বুধবার দুপুরে বিচারক শুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষায় রাখেন। সন্ধ্যার পর তাদের পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। বুধবার রাত ৯টার দিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী, আসামির স্বজন ও রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোস্তফা কাদের বলেন, রাত ৯টার দিকে মোবাইলে রিফাত হত্যা মামলার শিশু আসামিদের মধ্যে ১৪ নম্বর আসামি আরিয়ান শ্রাবণ ও ১১ নম্বর আসামি মারুফ মল্লিকের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
মিন্নির জামিন কেন বাতিল করা হবে না:
আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বুধবার আদালতে মিন্নির বিরুদ্ধে জামিন বাতিলের আবেদন করেন। পিপি বলেন, মিন্নি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ হতে জামিনে গিয়ে সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখায়।
মিন্নি ৪ জানুয়ারী বিকালে তিনটি মটর সাইকেলে ৫ জন যুবক নিয়ে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত সাক্ষী জাকারিয়া বাবু ও হারুণকে তার বাড়ীতে গিয়ে মিন্নির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেয়ার জন্য বলে। তারা সাক্ষ্য দিতে চাইলে মিন্নি ও তার লোকজন দাবায়, মিন্নির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে তাদের পরিণতি রিফাত শরীফের মত হবে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মিন্নির জামিন কেন বাতিল করা হবে না। সোমবারের মধ্যে মিন্নি বা তার আইনজীবীর মাধ্যমে কারন দর্শানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মিন্নির জামিন বাতিলের যে আবেদন করেছে। তার কোন ভিত্তি নেই। মিন্নি কোনদিনই কখনই প্রয়োজন ছাড়া বাড়ীর বাহির হয় না। এ আবেদনটি হাস্যকর। তারপরও আদালত কারন দর্শাতে বলেছে। আমরা সোমবার জবাব দাখিল করবো।
ঘটনা ২০১৯ সালের ২৬ জুন। দেশের কয়েকটি জঘন্য ও নৃশংস হত্যা মামলার মধ্যে অন্যতম রিফাত শরীফ হত্যা মামলা। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০ টায় বরগুনা সরকারী কলেজ গেটের সামনে নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে একদল উশৃংখল যুবক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মম ভাবে কুপিয়ে জখম করে রিফাত শরীফকে। পরে ওইদিন বিকাল সাড়ে তিনটায় বরিশাল শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় রিফাত শরীফ। মুমূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হয় নৃশংস হত্যাকান্ডের কোপানো দৃশ্য।
২৭ জুন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ নয়ন বন্ডসহ ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২ জুলাই পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় রিফাত হত্যার মুল আসামী নয়ন বন্ড। ১ সেপ্টেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা দুই খন্ডে ২৪জন আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। প্রাপ্ত বয়স্ক মিন্নিসহ ১০জন এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ২৪ জন। #