দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
দুদকের করা অর্থ পাচার মামলায় গেøাবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গেøাবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশাস্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারিক বিশেষ জজ আদালত। আদালতের পরোয়ানাভুক্ত ১০ জন হলেন- পি কে হালদার, তার মা লিলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
দুদকের করা মামলায় উল্লেখ, দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার বিভিন্ন কোম্পানির নাম ব্যবহার করে নামে- বেনামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ টাকা আর ফেরত না আসায় ওই চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
রাববার (২৭ মার্চ) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ অভিযোগপত্র আমলে উক্ত ১০ আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এদিন কারাগারে আটক আসামী অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। এরপর বাকী পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের আদেশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন ২৫ মে দাখিলের দিন ধার্য করেন আদালত।
দুদকের করা মামলায় আরও উল্লেখ, পাচার করা টাকা বের করার আগে শেয়ার কিনে তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে। তিনি দেশ ছাড়েন ২০১৯ সালের শেষ দিকে। পলাতক অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
দুদকের মামলায় অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদার নামে বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এ সম্পদের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এ সম্পদের মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে, ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এ সম্পদের বর্তমানমূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ধানমন্ডিতে পি কে হালদারের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন, যার দাম ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিনরোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন। যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। প্রশান্ত তার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে দুই একর জমির ওপর আটতলা হোটেল (র্যাডিসন নামে পরিচিত) তৈরি করেছেন। যার আর্থিকমূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী এবং অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন, এর দাম ১৬৭ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর পিকে হালদারের রাজধানীর ধানমন্ডির দুটি ফ্ল্যাট ও রূপগঞ্জের প্রায় ৬ একর জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। এর আগে ওই বছরের ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত আসামি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। #