শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন

অর্থ আত্মসাতকারী দুর্নীতিবাজ কর্মচারী রশিদকে রক্ষায় ডিএনসিসিতে সিন্ডিকেট

বিশেষ প্রতিনিধি দূরবীণ নিউজ :
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) শীষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে বরখাস্ত হওয়া কোটিপতি কর্মচারী আবদুর রশিদকে নানা কৌশলে পুনরবহালের মিশন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ বর্তমানে ডিএনসিসিতে নির্বাচিত মেয়র দায়িত্বে নেই। যাফলে এই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টায় রয়েছেন ওই সিন্ডিকেট। এর আগেও তারা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানা যায।

এদিকে ডিএনসিসির নব নির্বাচিত ও জনপ্রিয় মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন , প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ডিএনসিসিতে ঘুষ,দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাকারীদের কোনো ক্ষমা নেই। ঘুষ ও দুর্নীতির ‘জিরো ট্রলারেন্স’ নীতিতে চলবে ডিএনসিসি। তিনি আরো বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়দাতাদেরকেও ছাড় দেওয়া হবে না।

এরআগেও অনেকবার গণমাধ্যমকে মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘুষ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থানের কথা বলেছেন। সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পরদিন নব নির্বাচিত মেয়রের  উত্তরাস্থ বাসায শ্রমিক- কর্মচারী লীগের নেতারা দেখা করতে গেলে তিনি সবাইকে সততার সাথে স্বস্ব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নগরবাসীর সেবা করার আহবান জানান। একইসাথে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মেয়রের জিরো ট্রলারেন্স নীতির কথাটি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন।

এদিকে দূরবীণ নিউজের দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডিএনসিসির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইতোমধ্যে বিজ্ঞাপন ও ট্রেডলাইসেন্স সুপারভাইজার আবদুর রশিদকে নিরপরাধ ও ক্লিন ইমেজের কর্মচারী হিসেবে উপস্থাপন করতে সকল অযোজন প্রায় সম্পন্ন করেছেন। তারা নির্বাচিত মেয়র দায়িত্বে আসার আগেই তড়িঘড়ি করে তাদের মিশন বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন।

এরআগে একবার মেয়র আতিকুল ইসলাম দেশের বাইরে জার্মানীতে অবস্থানকালে গত বছর ২৯ আগস্ট গোপনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর থেকে দুর্নীতিবাজ আবদুর রশিদকে পুনরবহালের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। এই খবরটি দ্রুত সারধারণ কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং ওই দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা প্রতিবাদী কর্মচারীদের সাথে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে উপস্থিত হন এবং বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নানা প্রশ্ন করেন। পরে একপর্যায়ে আবদুর রশিদকে পুনরবহালের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

এদিকে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ডিএনসিসির বিজ্ঞাপন ও ট্রেডলাইসেন্স সুপারভাইজার আবদুর রশিদকে অঞ্চল-৫এ দায়িত্ব পালনকালে ৯ টি ট্রেডলাইসেন্সে প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়ে। গত বছর ১৬ এপ্রিল ডিএনসিসির সচিবের স্বাক্ষরে আবদুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।

এই বরখাস্তের আদেশ জারির এক সপ্তাহ পর ২৩ এপ্রিল ৫টি ট্রেডলাইসেন্স বইয়েরমূল্যসহ বকেয়া প্রায় দেড় লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন অভিযুক্ত আবদুর রশিদ । এই টাকা জমা দেয়ার পর তিনি ডিএনসিসির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছের লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, আরো টাকা পাওনা থাকলে তাও পরিশোধ করবেন। একই সাথে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানান। এই আবেনেই প্রমাণ করে আবদুর রশিদ আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ এবং আরো অর্থ আত্মসাত করেছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে আরো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ বেরিয়ে এসেছে, ডিএনসিসির আঞ্চল ৫ (কাওরানবাজার) ট্রেডলাইসেন্স সুপারভাইজার আবদুর রশিদ দীর্ঘদিন যাবৎ নানা অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন দায়িত্ব প্রাপ্ত কর কর্মকর্তা মহিউদ্দিনের দাখিল করা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞাপন ও ট্রেডলাইসেন্স সুপারভাইজার আবদুর রশিদ আরো প্রায় ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এসব টাকার মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্স বইয়ের মূল্য দুই শত টাকাসহ এবং বিগত বছরের অনেক ট্রেড লাইসেনেস্র বকেয়া ফি’র টাকা আদায় করে ফান্ডে জমা না দিয়ে আবদুর রশিদ আত্মসাৎ করেছেন। এই নথিটি নিয়েও ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দফতরে নানা তেলেসমাতি কারবার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর কর কর্মকর্তা মহিউদ্দিন প্রধন রাজস্ব কর্মকর্তার দফতরে আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা অর্থ আত্মসাতের নথিটি জমা দেন। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ১ অক্টোবর নথিতে স্বাক্ষর করেন। তিনি এই নথিটি মেযর,প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিবের দফতরে না পাঠিয়ে তার দফতরেই ফেলে রাখেন।

এখানেই শেষ সয়, নথিটিতে মতামত চেয়ে পুনরায় আঞ্চল-৫ এর কর কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠাতে গিয়েও লুকোচুরি করেছেন। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দফতরের রেকর্ডে ডেসপাস তারিখে উল্লেখ করা হয়-২৬ নভেম্বর নথিটি অঞ্চল-৫ এর কর কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে । কিন্তু বাস্তবে এই নথিটি প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার গোলশানের দফতরেই পড়ে থাকে। পরে চলতি জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে ওই নথি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হয়। নথিটি গত বছর ২৬ নভেম্বর কাওরানবাজরে সংশ্লিস্ট করকর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। অথচ নথিটি তখনো প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দফতরেই পড়ে ছিল।

পরে গত ১৬ জানুয়ারি দুপুর ১২ টায় ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর কর কর্মকর্তার দফতরে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, এই ধরনের কোনো নথি তারা পাননি। পরে ওইদিনই দুপুর ২টায় জানানো হয় কিছুক্ষণ আগে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার ডেসপাস শাখার জনৈক কর্মচারী নথিটি কাওরান বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

আবদুর রশিদের নথি কোনো উপরে না পাঠিয়ে নীচে ফেরত পাঠালেন এবং সময় ক্ষেপন করার কারণ জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, নথিতে সুনিদিষ্ট সুপারিশমালা ছিল না । যারফলে ওই অঞ্চলের কর কর্মকর্তার সুপারিশের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে । নথি চাপা পড়ে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নথি চাপা পড়ে থাকেনি। সময় মতোই সই স্বাক্ষর করা হয়েছে। নথি কেনো পড়ে ছিল এটা ডেসপাস শাখার পিয়নরা বলতে পারবে। তবে তিনি সব সময়ই সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে কাজ করেন বলে মন্তব্য করেন।

আরো জানা যায়, দুর্নীতিবাজ ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদমর্যাদার রাতারাতি কোটিপতি কর্মচারী আবদুর রশিদের বরখাস্তের অফিস আদেশে জারির সঙ্গে সঙ্গে পুরো ডিএনসিসিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্ত বর্তমানে ডিএনসিসির শীষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট দুর্নীতিবাজ কোটিপতি কর্মচারী আবদুর রশিদের পক্ষ নিয়ে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি জানা জানির পর সাধারণ কর্মবর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে নানা প্রশ্ন এবং সন্দেহ ক্রমেই বাড়ছে।

সাধারণ কর্মচারীদের ভাষ্যমতে, একজন সাধারণ কর্মচারী আবদুর রশিদ চাকরির ৯/১০ বছরেই রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ তার বাবা পুলিশ প্রশাসনের একজন সাধারণ সিপাই ছিলেন। তিনি একজন সৎ মানুষ ছিলেন। অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেছেন। কিন্তু কোনো দুর্নীতি করেননি। আর তার ছেলে রশিদ জালিয়াতি, দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে কোটি পতি হয়েছেন এবং চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকায় বিল্ডিংসহ একটি বাড়ি কিনেছেন। টাঙ্গাইলে ৫ কাঠা জমিতে মন্ডল ভিলা নামে আবদুর রশিদের অত্যাধুনিক পাঁচ তলা বাড়ি রয়েছে। অবৈধভাবে ঘুষ ও দুর্নীতির টাকায় ইতিমধ্যে টাঙ্গাইলের দিঘলিয়া এলাকার থানাপাড়া রোডের পানির ট্যাংকির সঙ্গে ৫ কাঠা জমিতে ‘মণ্ডলবাড়ী’ নামে অত্যাধুনিক পাঁচ তলা একটি বাড়ি তৈরি করেছেন রশিদ।

এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকেও দীর্ঘদিন যাবৎ আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। # একে


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “অর্থ আত্মসাতকারী দুর্নীতিবাজ কর্মচারী রশিদকে রক্ষায় ডিএনসিসিতে সিন্ডিকেট”

  1. md rubel mahmud says:

    Sothik bichar howa uchit

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০১ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩০ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৬ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12