দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
প্রতি বছর ৫ জুন ’বিশ্ব পরিবেশ দিবস’পালন করা হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শিল্পায়নের কারনে প্রতিনিয়ত নগরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, একইসাথে আমাদের বিভিন্ন গ্রামীণ ও আঞ্চলিক এলাকা সমূহের পরিবেশও মারাত্নক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। একারনে বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উদযাপন অত্যন্ত তাৎপর্য্যপূর্ণ।
এরই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এর উদ্যোগে ১০ জুন শুক্রবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উদযাপন করা হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ২০ টি শীর্ষ স্কুল এবং কলেজ এর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা এবং সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
বিআইপি’র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন এর সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নীলোপল অদ্রি এর সঞ্চালনায় উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন । সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং জিআইজেড বাংলাদেশের এ্যাডাপটেশন অব আরবান এরিয়াস টু ক্লাইমেট চেইঞ্জ এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর ড. ডানা দে লা ফনটেইন।
এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার।
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আফসানা হক, বিভাগীয় প্রধান, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রেখে অনুষ্ঠান শুরু করেন। এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, টিম লিডার, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (NAP) প্রণয়ন প্রকল্প।
অধ্যাপক ড. আফসানা হক তার বক্তব্যে সামাজিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা উল্লেখপূর্বক প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি যোগানের উপর ভিত্তি করে আমাদের সীমাহীন চাহিদাকে আয়ত্তের মধ্যে রেখে পরিবেশ সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়ে অনুস্ঠান শুরূ করেন।
বিশ্ব বরেণ্য জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার মূল প্রতিপাদ্য তুলে ধরেন। এই পরিকল্পনার দর্শন হচ্ছে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার এবং শক্তিশালী সমাজ এবং ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল দেশ গড়ে তোলা।
তিনি বাংলাদেশে জলবায়ূ পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব যেমন বন্যা, খরা, লবনাক্ততা, সাইক্লোন ইত্যাদির ভয়াবহতার প্রমাণ উপস্থাপন পূর্বক বিশ্ব র্যাংকিং এ প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান (৭ম) উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি NAP পরিকল্পনার ১০ টি মুল ধারা এবং ৬টি ধাপ নিয়ে আলোচনা করেন। পরিকল্পনার জন্য বাংলাদেশকে জলবায়ূ বিপর্যয়ের ভিত্তিতে ১১টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে, এই ১১ টি অঞ্চলের দূর্যোগ এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে অঞ্চল ভিত্তিক পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে তার মুল্যবান বক্তব্যে বিদেশী পরামর্শকের পরিবর্তে দেশের অভিজ্ঞ পরামর্শকের সহায়তায় তৈরি পরিকল্পনার প্রতি বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি পরিবেশবান্ধব দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ কার্যালয় গুলোর যেমন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
সরকারের এসব উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সফল করার জন্য জনগণের সম্পৃক্ততার প্রতি বিশেষ ভাবে জোর দেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বিশেষভাবে পরিবেশসংক্রান্ত গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।
বি আইপির সাধারণ সম্পাদক, পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান ১৫ তম কার্যনির্বাহী পরিষদের ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ক ২য় আন্তর্জাতিক সম্মেলন (ICURP 2021) এর প্রকাশনা উদ্ধোধন পরিচালনা করেন এবং আগামী ৩য় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ঘোষনা করেন।
জিআইজেড বাংলাদেশ এর এ্যাডাপটেশন অব আরবান এরিয়াস টু ক্লাইমেট চেইঞ্জ এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর ড. ডানা দে লা ফনটেইন উল্লেখ করেন যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১০ শতাংশ জমি ডুবে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে তিনি স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনার প্রতি গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দেন।
মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে তার মূল্যবান বক্তব্যে ঢাকার অত্যন্ত সাধারণ দুটি সমস্যা, জলাবদ্ধতা এবং ডেঙ্গুর কারন হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি পরিকল্পনাবিদদের জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত কারনে শহরমুখী অভিবাসন রোধ করার পরিকল্পনা তৈরির প্রতি আহবায়ন জানান।
এছাড়াও সুন্দর ঢাকা গড়ে তোলার জন্য সিটি কর্পোরেশনের কিছু উল্লেখ্যযোগ্য পদক্ষেপ যেমন ১০ টি ওয়ার্ডের ১০ টি খেলার মাঠ কে দখলমুক্ত করা, ১৩ টি খাল পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা, পরিষ্কার এবং নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ এবং এসংক্রান্ত জটিলতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। যেমন খাল পরিষ্কারের ৬ মাসের মধ্যেই মানবসৃষ্ট কর্মকান্ডের জন্য আবার খাল ভরাট হয়ে যায়, এর ফলে একই কাজে বার বার জনবল এবং অর্থের যোগান দেয়া প্রয়োজন পড়ে, যা সরকারের জন্য ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ।
এছাড়াও খালের সাথে পয়ঃসংযোগের জন্য খালের পানি দুষিত এবং কালো রঙ ধারণ করে। এসব নগর সমস্যা সমাধানে তিনি পরিকল্পনাবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরিশেষে পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন সমাপনী বক্তব্য রাখেন। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি