দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক

আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারিক আদালতে চার্জশিট গঠন হওয়া এবং বিচার শুরু হওয়া কোনো ব্যক্তি আগামীতে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি পরিস্কারভাবে বলেছেন, এমনকি তারা সরকারি কোনো পদে থাকতে পারবে না।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও গুমের’ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি, পুলিশের সাবেক আইজিসহ আরো অনেকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়চিহ্নিত অপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আরেকটা বড় ডিসিশন ছিল, আইসিটি মামলায় যারা মানবতা বিরোধী অভিযুক্তরা আর কোনো নির্বাচন করতে পারবেন না। অধ্যাদেশটির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৯৭ এ নতুন সেকশন ২০ -সি যুক্ত করা হয়েছে। নতুন সংযোজিত ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে উক্ত আইনে অর্থাৎ আইসিটি লয়ের সেকশন ৯১ এর অধীনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ও ফরমাল চার্জ দাখিল হলে,অভিযুক্ত ব্যক্তি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন।

একইভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠা সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন। এমনকি প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া বা অন্য কোনো পাবলিক অফিসে অধিষ্ঠ হওয়ার অযোগ্য হবে।

এদিকে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের গৃহিত সিদ্ধান্ত ‘চিহ্নিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামির আগামী জাতীয় নির্বাচনে অযোগ্য হবার পক্ষে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

গত ১৮ মে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

ওইদিন জামায়াতের এই নেতা বলেন, সাধারণভাবে কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি অপরাধের কারণে দুবছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন তাহলে ট্রেডিশনালি তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আরেকটা বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, কোনো মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া।

‘তবে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের কারো বিরুদ্ধে যদি মামলার চার্জশিট হয়ে যায় তাহলে তিনি আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। যদিও সাধারণ নিয়ম হচ্ছে একটা লোকের বিরুদ্ধে চার্জশিটে দিলেই অযোগ্য হবে না, দোষী সাব্যস্ত হতে হবে।’

আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ তো ভিন্ন মাত্রার অপরাধ। এটা সাধারণ অপরাধ নয়। এটার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট সময়কে ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত মর্মে চার্জশিট হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য অপরাধের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ এক না। এটার জন্য শাস্তির ক্ষেত্রে দুই বছরের অপেক্ষার কথা বলেনি কমিশন। আমরাও তাই কথা বলিনি। চার্জশিটকে আমলে নিতে বলেছি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালেও এরকম একটা আইন হয়েছিল। যেটা ক্রিমিনাল কেসের মতো না। তারা বলেছেন বিশেষ সময়ের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিতে বিচার প্রক্রিয়ায় চার্জশিটকেই আমলে নিতে। সেটার সঙ্গে আমরা এগ্রি করেছি।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছিলাম যে দোষী সাব্যস্ত হলেই কেবল নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন।

তবে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের যে আইন সেটা অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা (ঐকমত্য কমিশন) বলেছেন, এটা করলে লম্বা সময় লাগবে। তখন ট্রাইব্যুনালে রায় হবে, সেটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবে, সবমিলিয়ে দীর্ঘসময়। সেজন্যই আমরা তাদের মতে একমত হয়েছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কাল সম্পর্কে তিনি বলেন, একটা সরকার থেকে আরেকটা সরকারের মাঝে মিনিমাম সময় থাকবে। অন্তবর্তী সরকারের অনেক লম্বা সময় থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু যেহেতু বিশেষ পরিস্থিতিতে আসা, এ সরকারের কাছে সংস্কারের বিষয় আসছে। সংস্কারের জন্যই আমরা মিনিমাম সময়টা দিতে চাই। এরপর শিগরিরই নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনটাই বেটার সলিউশন।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনে হত্যার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলছে বর্তমান সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা তরুণদের নিয়ে গঠিত এনসিপির নেতাকর্মীরাও একই দাবি করে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জোর দিয়ে আসছে। এ নিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে।

#