বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

মেয়র তাপসের অ্যাকশন ! ডিএসসিসিতে – আসাদুজ্জামান ও সরদারের পর আতাহার বরখাস্ত : অনেকেই চাকরি হারানোর আতঙ্কে

আবুল কাশেম, দূরবীণ নিউজ :
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) চলছে নতুন মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ডাইরেক্ট অ্যাকশন। ডিএসসিসিতে নানা দুর্নীতি ,আনিয়ম ও লুটপাটরে অভিযোগে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসূফ আলী সরদারের পর কর কর্মকর্তা আতাহার আলী খানকে অপসারন করা হয়েছে। আর এই অ্যাকশানের ফলে ডিএসসিসির অধিকাংশ বিভাগেই ‘ টপ টু বটম’ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হুট করে চাকরি হারানোর মহাআতঙ্কে রয়েছেন ।

বর্তমানে ডিএসসিসিতে চলছে ত্রিমূখি আতঙ্ক। প্রথমত -প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস আতঙ্ক , দ্বিতীয়ত- এডিস মশার ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ভয়াবহতা এবং তৃতীয়ত -নতুন মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের দুর্নীতি বিরোধী ডাইরেক্ট অ্যাকশনের আতঙ্ক।

এই ধরনের ডাইরেক্ট অ্যাকশন ঢাকা দুই সিটিতে আগে কেউ কখনো দেখেননি। সারা জীবন চাকরিরত এই পর্যায়ে এসে মাত্র ৩ মাসের বেতন-ভাতা দিয়ে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বিদায়ের বিষয়টি সত্যিই দু:খ জনক । শুধু তাই নয়, অপসারনের আদেশে বলা, নিজস্ব পাওনাদি ডিএসসিসির হিসাব শাখা থেকে বুঝে নেয়ার।

জানা যায়, কারণ গত ৫ বছর ডিএসসিসিতে চলছে ঘুষ ,দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য এবং লুটপাটের মহোউৎসব। ওইসব লুটপাটের গডফাদার ছিলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, আর তার সাথে ছিলেন বহিরাগত কতিপয় রাজনৈতি পরিচয় বহনকারী ব্যক্তি, ঠিকাদার এবং ডিএসসিসির প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

তবে এখন ক্ষমতা হারিয়ে সাঈদ খোকন স্বেচ্ছায় কঠিন নিরবতা পালন করছেন। তিনি এতোটাই কঠোর অবস্থানে রয়েছেন যে, গত ১৬ মে (শনিবার) ডিএসসিসির নির্বাচিত নতুন মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে দায়িত্বটা পর্যন্ত হস্তান্তর করতে নগরভবনে আসেননি।

পরে ওই দিন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ ইমদাদুল হকের কাছ থেকে নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নতুন মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণের পর শেখ ফজলে নূর তাপস গত ১৭ মে , প্রথম কর্মদিবসে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সিন্ডিকেটের শীর্ষ স্থানীয় দুই কর্মকর্তাকে পৃথক আদেশে চাকরি থেকে অপসারন করেন। এই দুই জন হলেন, ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসূফ আলী সরদার।মেয়র ১৭ মে বিভাগীয় প্রধান ও আঞ্চালক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময়  সভায় ঘোষণা দিয়েছেন, দূর্নীতি এবং দায়িত্ব পালনে কোনরূপ শৈথিল্য বরদাশত করবেন না। তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন ,এ ধরনের কোন কিছু নজরে আসার সাথে সাথেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যত বড় কর্মকর্তাই হোক কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এজন্য যদি কাউকে বিদায় দিতে হয়, তাতেও তিনি পিছুপা হবেন না।

গত ২০ মে (বুধবার) মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস অপর এক আদেশে অঞ্চল-৩ এর কর কর্মকর্তা (টিও) সংযুক্ত নগর পরিকল্পনা বিভাগের আতাহার আলী খানকে চাকরি থেকে অপসারন করেন।

অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মচারী চাকরী বিধিমালা ২০১৯ এর বিধি ৬৪ (২) মোতাবেক জনস্বার্থে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর স্বার্থ রক্ষার্থে চাকরী হতে অপসারন করা হলো।

বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন নগদ প্রাপ্য হবেন। বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হিসাব বিভাগের সাথে অতিসত্বর যোগাযোগ করে সকল দেনা পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এই আদেশে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রথম স্বাক্ষর করেন। পরে ডিএসসিসির সচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষর করেন।
জানা যায়, ৮ বছর আগে ডিএসসিসির প্রথম প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান দুদকের এক মামলা রেফারেন্স এবং চাকরিতে নিয়োগ পাওয়াকালে জালিয়াতির অভিযোগে কর কর্মকর্তা আতাহার আলী খানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে ছিলেন। পরে আতাহার আলী খান তাকে বরখাস্তের প্রতিবাদে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘদিন  পরে হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে মামলায় জয়ী হন তিনি (আতাহার)। এরপরে মেয়র সাঈদ খোকন বরখাস্ত কর কর্মকর্তা আতাহারকে অঞ্চল-৩ এ সংযুক্ত করে ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনা বিভাগে পদায়ন করেন।তবে দুদকের দায়ের করা মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।

এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসসিসির একাধিক সাধারণ কর্মচারী জানান, বর্তমানে ডিএসসিসিতে প্রধান ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশীর দপ্তর, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর, সচিবের দপ্তর, রাজস্ব বিভাগ , বাজার শাখা, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ক্রয় ও ভান্ডার বিভাগ, হিসাব বিভাগ, সম্পত্তি বিভাগ এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঝে মহা আতঙ্ক বিরাজ করছে। না জানি আবার কখন কার চাকরি থেকে অপসারনের চিঠি জারি হয়।

তাদের মতে, গত ৫ বছর উন্নয়নের নামে পুরো ডিএসসিসিতে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের শেল্টারে চলছে হরিলুট। একই রাস্তা, ফুটপাত, গলিপথ, ড্রেন প্রতি বছর ভাঙ্গা আর গড়ার খেলা হয়েছে। পার্ক ও খেলার মাঠগুলো উন্নয়নের নামে ৩ গুন বেশি অর্থ বরাদ্দ করে লুটপাট হয়েছে। কিন্তু উসমানী উদ্যানের উন্নয়নের নামে মোটা অংকের অর্থ বরাদ্দ করার পরও কাজটি শেষ করতেই পানেনি।

লুটপাটের সিন্ডিকেট কৌশলে এই কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রকল্প দেখান। তবে প্রতিটি প্রকল্প , করে, কত টাকা, কি কাজ এবং কোথায় বাস্তবায়ন হয়েছে এসব তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে জানান সাধারণ কর্মচারীরা।
রাজস্ব বিভাগের বাজার শাখার প্রতিটি মার্কেটের নথি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে কত কোটি টাকা কারা কি ভাবে লুটপাট করেছেন। একইভাবে ক্রয় এবং ভান্ডারের নথি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে পুকুর চুরির ঘটনা।  # কাশেম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০১ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩০ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৬ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12