শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন

ব্রুনাই প্রবাসীদের নির্যাতনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয়ে দুদকের চিঠি

দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
ব্রুনাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের হয়রানি, নির্যাতন ও তাদের কাছথেকে নানা কৌশলে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়টি রয়েছে।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি ) দুদকের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অভিযোগের বিষয়টির তদন্ত করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে দুদকে প্রতিবেদন পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।দুদক সূত্র জানিয়েছে, ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (লেবার কাউন্সিলর) জিলাল হোসেন ও লেবার উইংয়ের কর্মকর্তা (দোভাষী) আবু নাঈমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এতে বলা হয়, এই দুজনের সিন্ডিকেট প্রবাসী শ্রমিক বা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা না করে উল্টো শোষণ করছেন।

প্রবাসী মজুরি সংক্রান্ত জটিলতা কিংবা হয়রানির বিষয়ে হাইকমিশনে অভিযোগ করলে সমাধান পাওয়া যায় না- এমন অভিযোগও তোলা হয়েছে। এর প্রতিবাদ মানবপাচার বা চুরির মিথ্যে মামলার আসামি হয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে অনেক শ্রমিককে।

গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক প্রবাসী শ্রমিক ও ব্যবসায়ী দেশে ফিরেছেন মামলায় আসামি হয়ে। অনেকের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে মানবপাচারসহ নানা অভিযোগে। ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গোলোতে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে দুদকের শরণাপন্ন হয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য ও নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাইকমিশনের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করলে প্রবাসীদের পাল্টা আক্রমণ এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে এমন ১৫ প্রবাসীদের পাসপোর্ট নম্বরসহ নামের তালিকা পাওয়া গেছে। তালিকার একজন কামরুল হাসান। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে র্নিমম নির্যাতন শিকার হতে হয় ব্রুনাই হাইকমিশনের ভেতরেই।

এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নির্যাতনের শিকার কামরুল হাসান হাইকমিশনের দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলা উঠানোর জন্য হাইকমিশন থেকে ভয়ভীতি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০১৮ সালের ৭ মার্চ অন্যায়ভাবে হাইকমিশন ভবনে মনির হোসেনকে নির্যাতন করা হয়। ঘুষ না দেয়া এবং অনৈতিক দাবির প্রতিবাদ করায় তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় মনির হোসেন বাদী হয়ে ব্রুনাই ব্রাকাস থানায় মেডিক্যাল রিপোর্টসহ ২০১৮ সালের ৮ মার্চ মামলা করেন।

মামলায় নির্যাতনের তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়। মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু হুমকির পরও মামলা তুলে না নেয়ায় মানবপাচারের সাজানো অভিযোগ করা হয় তা নামে। পরে তাকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

শুধু কামরুল আর মনিরই নয়। প্রতিনিয়নত এমনই নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বলে ব্রুনাই ফেরত বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে জিলাল হোসেন ও লেবার উইংয়ের কর্মকর্তা আবু নাঈম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও অনেক প্রবাসী নিরব থাকলেও মামলা করছে না দেশে ফেরত পাঠানোর ভয়ে।

নির্যাতনের শিকার প্রবাসী ব্যবসায়ী সবুজ মির্জা এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, আমাকে ৩০ অক্টোবর দেশে পাঠানো হয়েছে। ব্রুনাইতে প্রায় ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। সেখানে আমার পুরো পরিবার থাকে। আমার ৫টি দোকান ছিল।

গত ২৭ অক্টোবর হঠাৎ ব্রুনাই পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, তার বিরুদ্ধে অবৈধ মানবপাচার ব্যবসা ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ করেছে বাংলাদেশি হাইকমিশন। তোমাকে দেশ ছাড়তে হবে। আমাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর জেলে রেখে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমার লাখ লাখ ডলার লোকসান হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রুনাই বাংলাদেশি হাইকমিশনে লেবার কাউন্সিলার জিলাল ও তার বিশ্বস্ত সহযোগী আবু নাইমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা এসব কাজ করছেন। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেও জড়িত।

মানবপাচারসহ বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন এমন কয়েকজনের মধ্যে রয়েছেন আসিফ (পাসপোর্ট নম্বর: BF0789466), শাহেদ মজুমদার মুন্না (পাসপোর্ট নম্বর: BN0490212), জাকির হোসেন (পাসপোর্ট নম্বর: BM0421821), জসিম সরকার (পাসপোর্ট নম্বর: BR0773460), সোহরাব খান (পাসপোর্ট নম্বর: BJ0737818), মো. মেহেদী হাসান (পাসপোর্ট নম্বর: BR0671958), মো. মনির হোসেন, আব্দুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর: BR0191506), মো. ইসমাইল সরদার (পাসপোর্ট নম্বর: BM0193277), জাজ মিয়া, সবুজ মির্জা, কামরুল হাসান (পাসপোর্ট নম্বর: BP0121477) এবং মো. আনোয়ার হোসেন (পাসপোর্ট নম্বর: BF0582969)।

গত নভেম্বরে ফেরত এসেছে ময়মনসিংহের জাজ মিয়া। তিনি বলেন, গত নভেম্বর আমাকে চুরির মামলা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে ব্রুনাই গিয়েছিলাম। নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতাম। হঠাৎ একদিন এজেন্ট খোরশেদ লোক পাঠিয়ে বলে তোমার নামে চুরির মামলা আছে। তোমাকে দেশে ফিরে যেতে হবে। আমি আগে ও পরে কিছু জানি না। অথচ মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিল খোরশেদ। এই খোরশেদ হাইকমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তার বিশ্বস্ত এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। তার নামে ৪ থেকে পাঁচটি লাইসেন্স রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি শুনেছি গত বেশ কিছুদিন ধরে ব্রুনাই থেকে মানবপাচার ও চুরির মামলা দিয়ে হয়রানি করে দেশে ফিরে এসেছে অনেক বাংলাদেশি। আমাদের সাথে যে অন্যায় হয়েছে। আমি বিচার চাই।

একই অভিযোগ পাওয়া গেছে অন্যান্য প্রবাসীদের কাছ থেকে। নির্যাতিত শ্রমিকদের আরো অভিযোগ, ব্রুনাই প্রবাসী শ্রমিকরা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করলেও কোন কারণে বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন বকেয়া না পেয়ে অভিযোগ করে হাইকমিশনের কাউন্সিলরের (শ্রম) কাছে।

ওই সময় সুযোগ বুঝে কাউন্সিলরের সিন্ডিকেটের আবু নাঈম কৌশলে অভিযুক্ত কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বিভিন্ন মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করাার অভিযোগ উঠেছে। # কাশেম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২২ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০২ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩০ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৪ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪০ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12