দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ১২৫ জন স্বাস্থ্য কর্মী করোনায় আক্রান্ত। করোনার চিকিৎসা সহজ নয় আর সেই সাথে ভেঙে পড়েছে অন্য রোগবালাইয়ের চিকিৎসাও। কষ্টে আছে বিভিন্ন খাতের শ্রমিক, কম আয়ের জনগণ।
ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার বেড আছে ২২টি, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ২৬টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে ৮টি, সাজিদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৫টি, মিরপুর ও উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালে আছে ৬টি আইসিইউ করোনা বেড। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে কেবল ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬টি, খুলনার ডায়াবেটিক হাসপাতালে আছে ৫টি আইসিইউ বেড।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার চিকিৎসার সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। বিষয়ে সঠিক কোনো গাইডলাইন নেই।
তারা আরও বলেন, চিকিৎসকরাই এখন করোনা হুমকির মুখে আছেন। তারা যদি রক্ষা না পান তাহলে চিকিৎসা চলবে কিভাবে?
করোনার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ৬টি হাসপাতালের কথা বলা হলেও বাস্তবে প্রস্তুত মাত্র দুইটি। বাকিগুলোতে শুধু এখন পর্যন্ত টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে কয়েকটি হাসপাতালে টেস্টের ব্যবস্থা আছে।
ঢাকার মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে করোনার কোনো চিকিৎসা এখনও শুরু হয়নি৷ ওই হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, পুরোপুরি করোনা হাসাপাতাল করতে আরও সময় লাগবে। আমরা ফ্লু কর্নার করেছি। টেস্ট করে করোনা পজিটিভ পেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।
তার মতে, যে হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা হবে সেখানে অন্য কোনও রোগের চিকিৎসা করা ঠিক নয়।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের নার্সদের খাদ্য সঙ্কট চলছিল কয়েকদিন ধরে৷ তাদের ৯৯ জন নার্সের মধ্যে ৭০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে একটি হোটেলে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান জানান, হোটেল কর্তৃপক্ষ বিল না পেয়ে খাবার নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করেছিল৷ এখন আমরা বিল দিয়ে দেয়ায় খাবার সঙ্কট হচ্ছে না।
ঢাকায় স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতদের থাকার জন্য আরও কতগুলো হোটেল তালিকাভুক্ত করা হলেও তারা এখনো সেবা দেয়া শুরু করেননি।
টেস্ট এখনও জটিল :
করোনা আক্রান্ত সন্দেহ হলে টেস্ট এখনও জটিল ও কঠিন৷ ১৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) করোনা পজিটিভ হওয়া এক গণমাধ্যমকর্মী জানান, তিনি পাঁচ দিন চেষ্টার পর করোনা টেস্ট করাতে সক্ষম হয়েছেন। ওই পাঁচ দিন তিনি আইইডিসিআর ও বিএসএমইউতে দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বাসায়ই আছেন আইসোলেশনে৷ স্বাস্থ্য অধিদফতর তাকে একটি টেলিফোন মেসেজ দিয়ে আলাদা থাকতে বলেছে।
তিনি বলেন, পুলিশ যোগাযোগ করছে৷ কিন্তু আমার চিকিৎসা কোথায় হবে আমি জানি না। এখন ঢাকায় ৯ টি ও ঢাকার বাইরে ৬টি করোনা টেস্ট সেন্টার আছে বলে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে।
চিকিৎসায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা:
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, আসলে ঢাকা ছাড়া জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে করোনার চিকিৎসা নাই। এটা করা সম্ভবও নয়।
তিনি বলেন, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতদের পিপিইর নামে যা দেয়া হচ্ছে তা মানসম্মত নয়৷ নকলও আছে। এই কারণে ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে এখন ১২৫ জন করোনা পজিটিভ। ডাক্তার আছেন ৬৩ জন। আমার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত ১০ ভাগের বেশি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি তুলে ধরছেন। এরইমধ্যে নকল পিপিই নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে।
ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, এখনও করোনা চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিক গাইড লাইন নাই। ফলে সাধারণ চিকিৎসাও বিপর্যস্ত। # সূত্র-ডয়েচেভেলে #