মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

‘ করনার বর্তমান পরিস্থিতিতে বয়স্কদের জন্য টিকা নিশ্চিত করা জরুরি’

ডাঃ তৌহিদ হোসাইনঃ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্বের পঞ্চাশোর্ধব বয়স্ক, কো-মর্বিড বুদ্ধিমান, সক্ষম-অক্ষম জনগোষ্ঠী করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সবচেয়ে বড় শিকার। স্বাস্থ্য বিধিও আর তেমন ভাবে মানছেনা সাধারণ জনগণ।

এমতাবস্থায় দ্রুতই হার্ডিমিউনিটি তৈরীর লক্ষ্যে পঞ্চাশোর্ধব বয়স্ক, কো-মর্বিড এবং ঝুকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার দ্রুত ব্যবস্থায় এ দূর্যোগ থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন শের-ই-বাংলা নগরের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কিডনী ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজী হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তৌহিদ হোসাইন। গণমাধ্যম প্রকাশের জন্য তিনি সুচিন্তিত ও গবেষণাময়ী বক্তব্য প্রদান করেছেন।

প্রশ্নঃ আপনি বলছেন বয়স্ক, কো-মর্বিড এবং অন্যান্য ঝুকিপূর্ণ রুগীদের অগ্রাধীকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু কেন?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইনঃ একটা গবেষণার ফলাফল দিয়েই আমার বক্তব্য শুরু করতে চাই। গেল বছর (জুন, ২০২০ সালে) চীন, এমেরিকা এবং ইতালীতে সকল বয়সী করোনাক্রান্ত রোগীদের উপর ২০ টি গবেষণা পরিচালিত হয় মোট ৬৪,৬৭৬ জন করোনা রোগীর উপর। এর মধ্যে চীনেই পরিচালিত হয় ১৬ টি, এমেরিকাতে ২ টি, ইতালীতে ১ টি এবং একটি একসাথে বিভিন্ন দেশে। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সাথে বয়স, লিংগ ও কো-মর্বিডিটির সম্পর্ক বের করা। তাদের গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন যে সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে ৩.৪৫ গুন রোগী পঞ্চাশোর্ধব বয়সী যাদের গড় বয়স ছিল ৬১.৬৩ বছর। এই পঞ্চাশোর্ধব আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা মারা গিয়েছিল তারা পঞ্চাশের নীচের বয়সীদের তুলনায় ১৫.৪ গুন বেশী ছিল।

গবেষণায় তারা আরো দেখিয়েছে, করোনায় মহিলাদের তুলনায় পূরুষদের আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার হার ছিল যথাক্রমে ২৮% ও ৮৬% বেশী।

করোনার সাথে কো-মর্বিডিটির(হাইপারটেনশন, করোনারী আরটারি এন্ড সেরেব্রভাস্কুলার ডিজিজ, ক্রনিক কিডনী ডিজিজ, ক্যান্সার ইত্যাদি) সম্পর্ক বের করতে ঐ গবেষণায় তারা দেখিয়েছেন, যে করোনার সাথে কারডিওভাস্কুলার, সেরেব্রভাস্কুলার ডিজিজ, ক্রনিক কিডনী ডিজিজ ও ক্যান্সারের মত রোগ থাকলে তাদের মৃত্যুঝুকি যথাক্রমে ৩.৫গুন, ৪.৭৫ গুন, ৪.৯ গুন এবং ১.৪৯ গুন বেড়ে যায়।

বাংলাদেশেও অনেকটা রকই রকম চিত্র। একটি সমীক্ষায় গবেষকরা বলেছেন, ৬৫ বছরের পর এক তৃতীয়াংশের বেশী মৃত্যু ঘটে ইনফেকশনে। এর মধ্যে প্রধান হলো ব্যাকটেরিয়াল অথবা ভাইরাল নিউমোনিয়া, প্রশ্রাব নালীতে ইনফেকশন, খাদ্য নালীর অসুখ ও চামড়ার ইনফেকশন।

আমাদের শিশুরা যেমন ভবিষ্যত সম্পদ তেমনি বয়স্করাও চলমান সম্পদ এবং পরবর্তী প্রজন্মের অভিভাবক। অথচ এরাই সবচেয়ে বেশী করোনা মহামারীর সহজ শিকার।

সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম একটি উপায় হলো দ্রুত রোগ নির্ণয়। কিন্তু বয়স্করা ছেলে বা ছেলের বউয়ের কষ্ট হবে ভেবে অসুখের কথা বলেই না। ফলে সংক্রামক রোগ অনেক জটিল পর্যায়ে চলে যায়।একথাও আমাদের জেনে রাখতে হবে যে, সংক্রামক রোগ সব ধরণের প্রতিরোধ ব্যবস্থার পাশাপাশি মূলত দুই রকম ঔষধ বা প্রতিষেধক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করি।

একটি হলো সংক্রামক রোগ হলে তার সেই রোগের জন্য নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক দিয়ে নিরাময় করা আর আরেকটি হলো রোগ জীবানু যেন আবারো অসুস্থ্য করতে না পারে সে জন্য প্রতিষধক টিকা দেয়া।

এক্ষেত্রে একটা কথা আমাদের সর্বদাই মাথায় রাখতে হবে যে ‘Prevention is better than cure’. অর্থাৎ রোগ সৃষ্টি হওয়ার আগেই যদি রোগ প্রতিরোধ করতে পারি তাহলে চিকিৎসার পিছনে এত শ্রম এবং অর্থ কেন ব্যয় করব। এজন্য বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের টিকাযোগ্য রোগের টিকার ব্যাপারে বেশী যত্নবান হওয়া দরকার। কারণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কম থাকার কারণে যেমন বয়স্করা সংক্রামক রোগের সহজ সংক্রমণের শিকার হন, তেমনি সংক্রমিত রোগী অনেক খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে এমনকি ভাল এন্টিবায়োটিক দিয়েও অনেক সময়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

আর সংক্রামক রোগের একমাত্র চিকিৎসা- হাতিয়ার যে ‘এন্টিবায়োটিক’ তার নতুন নতুন আবিস্কার অনেকটাই থমকে গেছে। কয়েক দশক ধরেই বিজ্ঞানীরা ভাল কোন এন্টিবায়োটিক বাজারে আনতে পারে নাই। এমতাবস্থায় যে ভাবে এন্টিবায়োটিকের ভুল বা অতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে এবং সে কারণে যেভাবে অনেক মাইক্রোঅরগানিজম এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স গড়ে তুলেছে তাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই ভয়ে আতংকিত যে নতুন আবিস্কার না হলে ভবিষ্যতে হয়ত চিকিৎসা করার মত ভাল কোন এন্টিবায়োটিক পাওয়া দূর্লভ হয়ে যাবে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও অধিক মৃত্যুর মূল টার্গেটে যেহেতু বয়স্ক ও কো-মর্বিড রোগীরা, সেহেতু বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেই জায়গাতেই তো প্রস্তারাঘাত করতে হবে সবার আগে। এ কাজ করতে ভুল করলে দেখা যাবে হার্ড ইমিউনিটি হয়ত হবে কিন্তু ততদিনে অনেক মূল্যবান প্রান ঝড়ে পড়বে।

অন্য সব ক্ষেত্রে আমরা টিকা শুরু করি বাচ্চাদের দিয়ে, আর এখানে টিকা শুরু করতে হবে বয়স্ক ও কো-মর্বিড রোগীদের দিয়ে, কারণ করোনা হলো চরম সুবিধাবাদী ভাইরাস যা প্রায় ক্ষেত্রেই দুর্বলদেরকে হানা দেয়।
তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অনেক আগে থেকেই বয়স্ক ও কো-মর্বিড রোগীদের ২০ টি এবং ফিলিপাইনে ১০ টি ক্যাটাগরীতে ভাগ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। আমাদের দেশেও এ রকম কিছু চালু করা যায়।

প্রশ্নঃ ধুমপায়ী ও এলকোহলে অভ্যস্থদের করোনার ঝুকি কতটুকু?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইনঃ যারা ধুমপান কিংবা মদ্যপান করেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলোঃ এ পর্যন্ত করা বেশ কয়েকটি গবেষণায় গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন যে ধুমপায়ী ও মদ্যপ ব্যক্তিবর্গ করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু ঝুকিতে আছেন অনেক বেশী। এর কারন হলো অত্যধিক ধুমপান ও মদ্য পানে বডি ইমিউনিটি কমে যায়।
সুতরাং সারা বিশ্বে কোটি কোটি ধুমপায়ী ও মদ্যপ করোনার সহজ শিকারে পরিনত হতে পারে। যে সমস্ত মানুষের বিএমআই ৩০ এর উপর অর্থাৎ শরীরে মেদ বেশী তাদেরও করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু ঝুকি বেশী।

প্রশ্নঃ টিকা কারা নিতে পারবে আর কারা পারবে না যদি স্পষ্ট করে বলতেন?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইনঃ আসলে কোন রোগীর টিকা গ্রহণের ব্যাপারে এবসোলিউট নিষেধাজ্ঞা নাই। সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ছিল এ কারণে যে টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাজারে টিকা ব্যবহারের আগে গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মা ও বাচ্চাদের উপর কোন ট্রায়াল চালায় নাই।ইদানীং ট্রায়াল চালানোর পর গর্ভবতী-দুগ্ধবতী মা ও ১২ বছরের বাচ্চাদেরও টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে পাশ্চাত্য দুনিয়ায়। “American College of Obstetrician and Gynacologists” পরিস্কার বলে দিয়েছে যে গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধবতী মাকে যেন টিকা থেকে বিরত রাখা না হয়। তবে গর্ভবতী মায়েদের লাইভ ভ্যাকসিন না দেয়া ভাল।

এ ছাড়া রোগী খুব দুর্বল হলেও টিকা নিতে পারবে। সে ক্ষেত্রে হয়ত এন্টিবডি টাইটার কম তৈরী হবে। তবে মৃত্যু পথ যাত্রী আইসিইউতে ভর্তি রোগী সুস্থ্য হওয়ার পর টিকা নিলে ভাল। কারন এ রকম কম ইমিউনিটিতে টিকা দিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। এছাড়া COVID19 রোগের উপসর্গ প্রকাশ পাবার বা টেস্ট পজিটিভ হবার ১৪ দিন পরেই টিকা নিতে পারবে(আগে ছিল ২৮ দিন) শরীরে জ্বর ১০৪ ০ F এর উপর থাকলে বা severe infection থাকলে ভাল হওয়ার পর টিকা নিতে পারবে।

কারো যদি আগে থেকেই ব্লিডিং বা ক্লটিং ডিজর্ডার জাতীয় রক্ত রোগ থাকে যে ইঞ্জেকশন দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হতে অনেক সময় লাগে যেমন হিমোফিলিয়া জাতীয় রক্ত রোগ, তাদের ক্ষেত্রে রোগ কন্টোল করার পর টিকা ডেয়া যাবে।

আপনি যে টিকাটি ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তার কোন একটি উপাদানের প্রতি যদি জোড়ালো হাইপারসেন্সিটিভ রিয়েকশনের ইতিহাস থাকে শুধুমাত্র সে ক্ষেত্রে ঐ নির্দিষ্ট টিকা নেয়া যাবেনা। সামান্য এলার্জিক রিএকশনে টিকা নিতে কোন সমস্যা নাই।
এমনকি কারও যদি অটোইমিউন ডিজর্ডারও (যেমন, SLE) থাকে সেক্ষত্রে রিস্ক বেনিফিট চিন্তা করে ডাক্তারের পরামর্শে টিকা নেয়া যেতে পারে।

কভিড ১৯ টিকা নিয়ে মারা যাওয়ার বা কভিড ১৯ ইনফেকশন হওয়ার কোন ঝুকি নাই।ইতোপূর্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে থাকলে টিকার জন্য ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ যেহেতু প্লাজমা থেরাপীতে অন্য মানুষের প্লাজমায় থাকা এন্টিবডি রোগীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, সে জন্য আগের পুশ করা এন্টিবডি উধাউ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

কভিড ১৯ ছাড়া অন্য কোন ভ্যাকসিন নিয়ে থাকলে ১৪ দিন পর টিকা নেয়া যাবে।ভ্যাকসিন গ্রহনের পর সামান্য জ্বর, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, বমি হতে পারে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। ইনজেকশন স্থানে লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, ব্যথা করা খারাপ কোন ইংগিত করেনা। তেমনি ভাবে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর এর কোন উপসর্গই দেখা না দিলে ভ্যাকসিন কাজ করে নাই বলা যাবেনা।
ভ্যাকসিন দেয়ার immediately কয়েক মিনিটের মাথায় তীব্র allergic reaction কারো কারো খুব rarely হতেও পারে। এ জন্যই টিকা গ্রহনের পর অবজারভেশনের জন্য ২০-২৫ মিনিট বসতে হবে। তবে এ রিএকশনে জীবন হানি হওয়ার চান্স নাই।
দুই ডোজ নেওয়ার পর কতদিন তা কার্যকর থাকবে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। এখনি বলার সময় হয় নাই।
এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে তা সর্বোচ্চ ১০ মাস।

প্রশ্নঃ ইমিউন সিস্টেমটা কি? কিভাবে এরা আমাদের সুরক্ষা দেয়?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইনঃ মানুষের শরীরটা যদি হয় একটা রাষ্ট্র, ইমিউন সিস্টেমটা হবে তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় যার আছে বিজিবি, তিন বাহিনী এবং যুদ্ধ করার সরঞ্জামাদি।

লক্ষনীয় বিষয় হলো, বাহিরের জগতের সাথে শরীরের যতগুলো এন্ট্রি পয়েন্ট আছে, সব পয়েন্টেই আছে ‘বিজিবি’র মত প্রশিক্ষিত বাহিনী যারা দিবারাত্র শরীর-সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। শরীরের এই সীমান্ত রক্ষীরা হলোঃ ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাস প্রুফ চামড়া সাথে ল্যাংগারহ্যন্স সেলস, নাক, মুখ, চোখ, কান ও পায়ুপথের এন্ট্রি পয়েন্টে আছে অসংখ্য লিম্ফয়েড স্ট্রাকচার, লোম,সিলিয়া, আঠালো মিউকাস মেমব্রেন তার সাথে IgA এন্টিবডি ইত্যাদি।

চোখ ফাঁকি দিয়ে রোগ জীবানু শরীরের ভিতরে ঢুকতে পারলেই হলো, অমনি সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্স হাজির।
এই পর্যায়ের কাজ হলঃ রোগজীবানু ঢুকতেই না দেয়া, ঢুকে গেলে রোগজীবানু চিহ্নিত করা, মিউকাস মেমব্রেনে আটকে দেয়া, বের করে দেয়া, মেরে ফেলা, খেয়ে ফেলা, বডি সিস্টেমের বিভিন্ন সেলকে জানান দেয়া ও তাদের জাগিয়ে তোলা ইত্যাদি।
ব্লাড ভাস্কুলার সিস্টেমে সদা জাগ্রত অগ্রবর্তী সেনাবাহিনী নিউট্রোফিল, ম্যাক্রোফেজ ইয়োসিনফিল, ব্যাসোফিল সর্বদা প্রহরারত থাকে।
এখানকার নিয়োজিত ভলান্টিয়াররা হলঃ এপিথেলিয়াল ব্যারিয়ার, মিউকাস মেমব্রেন ব্যারিয়ার, ফ্যাগোসাইটস(নিউট্রোফিল এবং ম্যাক্রফেজ), ডেন্ড্রাইটিক সেল, ন্যাচারাল কিলার সেল এবং কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম প্রোটিন, সাইটোকাইন, ইন্টারফেরন, ইনফ্লামেশন, এন্টিভাইরাল ডিফেন্স ইত্যাদি।

এসবের মাধ্যমে শরীরের ফার্স্ট লাইন ও সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্স কার্যকর করা হয়। এ ধরণের ব্যবস্থা সকল প্রাণীর মধ্যেই বিদ্যমান আছে। এ পর্যন্ত যে শরীর ডিফেন্স সিস্টেমের কথা বললাম তা অনেকটা জন্মগত ভাবেই মানুষ পেয়ে থাকে। যাকে বলা হয় ইন্যাট ইমিউনিটি।

থার্ড লাইন অফ ডিফেন্স হিসেবে থাকে লিম্ফোসাইটস যাদের কাজ হলো ৭-২১ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট রোগ জীবানুর বিরুদ্ধে এন্টিবডি ও মেমরী সেল তৈরী করা। সুতরাং এই এন্টিবডিগুলো শরীর নিজদের চাহিদামত তৈরী করে নেয়, জন্মগতভাবে আসেনা।
এখন মানুষেরা যেমন যুদ্ধের জন্য সমুদ্র-স্থল পথ ব্যবহার করে তেমনি উপরে উল্লিখিত কোটি কোটি ইন্যাট ইমিউন ও এন্টিবডি-মেমরী সেল রক্তে (সমুদ্র পথে) শরীরের সর্বত্র বহমান থেকে পাহারা দিতে থাকে।

আমাদের হার্ট দিনে গড়ে ১ লক্ষ বার পাম্প করে ৬-৭ হাজার লিটার রক্ত সমস্ত শরীরে বার বার ছড়িয়ে দেয়। এই রক্তে অক্সিজেন বহন করার শুধু লোহিত রক্ত কনিকাই থাকেনা বরং থাকে রোগ প্রতিরোধক সেনাবাহিনী তথা স্বেতকনিকা এবং সারা শরীরের সেলগুলোর রসদ পত্র। মাত্র ৪৫ সেকেন্ডে ১ লক্ষ কিলোমিটার (হার্ট থেকে সমস্ত ক্যাপিলারী পর্যন্ত অতিক্রমকারী দুরত্ব) পথে ২৪ ঘন্টা পাহারা রত থাকে আমাদের এই শ্বেত কনিকা।

এছাড়া অনেকটা স্থল পথ ব্যবহারের মতই শরীরের সর্বত্রই লিম্ফ নোড (সেনা ক্যম্প) ও লিম্ফেটিক চ্যানেলের (স্থল পথ) মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের সিলসিলা জারি রাখে।

নির্দিষ্টভাবে এন্টিবডি তৈরী করে ভবিষ্যতে শরীরকে সুরক্ষা দেয়ার মত ক্ষমতা (এডাপ্টিভ ইমিউনিট) কেবল মাত্র মানুষ ও অন্যান্য ভারটিব্রেট প্রানীদেরই আছে। পোকা-মাকর জাতীয় প্রানীর এ ক্ষমতা নাই। তাদের আছে শক্তিশালী ‘ইন্যাট ইমিউনিটি’ ব্যবস্থা।

প্রশ্নঃ বয়সের সাথে ইমিউন সিস্টেমের সম্পর্ক কি?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইনঃ এই যে তিনটি লাইন অফ ডিফেন্সের কথা বললাম, বয়সের সাথে এর আছে চমৎকার সম্পর্ক।
ইন্যাট ইমিউনিটির মতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানুষ জন্ম থেকেই বাই নেচার অর্জন করে। কিন্তু এডাপ্টিভ ইমিউনিটি মানুষ অর্জন করে মূলত রোগ জীবানু তথা পরিবেশের সাথে লড়াই করে।

জন্মের সময় পুরো ইমিউন সিস্টেম সর্বোপরী দুর্বল থাকলেও ৬-৮ বছরের মধ্যে তা পুরোপুরি শক্তিশালী হয়ে উঠে।
এরপর ৫০ বছরের পর থেকে পর্যন্ত ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হতে থাকে। ইমিউন সিস্টেম সারা জীবনই দুই ধরণের অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর একটি হলো ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস তথা অন্যান্য অনুজীবের বিরুদ্ধে যাকে আমরা বলি সংক্রামক রোগ, অন্যটি হলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় সিস্টেম ও অর্গান কেন্দ্রিক রোগ যাদের হওয়া বা না হওয়ার জন্য রোগ জীবানু দায়ী নয়, দায়ী হলো আমাদের শরীরের জেনেটিক মেকআপ, পারিপার্শ্বিকতা ও শরীর নিজে। তাই এই ধরণের রোগকে বলা হয় অসংক্রামক রোগ।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যেমন, মেটাবলিক ও হরমোনাল ডিসর্ডার (ডায়াবেটিস, হাপো অথবা হাইপার থাইরয়ডিসম ইত্যাদি), কারডিওভাস্কুলার রোগ (হাইপারটেনশন, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ), ক্যান্সার, অটোইমিউন ডিসর্ডার ইত্যাদি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সদা প্রস্তুত ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে।

যেমন ধরুন প্রাইমারী লিম্ফয়েড অর্গান বোন ম্যারো ও থাইমাস। বোন ম্যারো (ক্যান্টনমেন্ট) যেখানে মূলত ইমিউন সেল গুলো(স্বেত কনিকা ও অন্যান্য সেল) তৈরী এবং বিশেষ করে ‘বি লিম্ফোসাইট’ ম্যাচিউর হয়, তা আস্তে আস্তে ফ্যাটি টিসু দিয়ে ভরে যায়। থাইমাস অর্গান (ক্যান্টনমেন্ট ট্রেনিং সেন্টার) যেখানে মূলত বোন ম্যারো উৎপাদিত ‘টি লিম্ফোসাইট’ ম্যাচিউর হয়, তাও আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যায়। ফলে বি লিম্ফোসাইট ও টি লিম্ফোসাইট উৎপাদন ও কার্যকরী ক্ষমতা কমে যায়।

এ ছাড়া শরীরের সর্বত্র যে লিম্ফনোড (সেনা ক্যাম্প) ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তারাও ধীরে গতিতে ছোট ছোট ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
ফলে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে যে ‘টি’ এবং ‘বি’ লিম্ফোসাইট ‘এডাপ্টিভ ইমিউনিটি’ গড়ে তোলার কথা তা দুর্বল হয়ে যায়।
এখন যারা শরীরে সর্বক্ষণ-সর্বত্র টহলদারীতে নিয়োজিত তারাই যখন দুর্বল হয়ে যায়, তখন ইনফেকশন, অটোইমিউন ডিজিজ ইত্যাদি সহজেই আমাদের কাবু করে ফেলে।

প্রশ্নঃ ইমিউন সিস্টেম ও বয়সের সাথে ইনফেকশনের সম্পর্ক কি?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইনঃ ইমিউন সিস্টেম, বয়স ও ইনফেকশনের সাথে পরস্পরের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বয়স হলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে আমরা নানান রোগ-বালাই ও সহজেই ইনফেকশনের শিকার হই। আবার বার বার ইনফেকশনের শিকার হওয়ার কারণে ইমিউন সিস্টেম আরো দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে আবারো রোগ-বালাই-ইনফেকশন-যেন চমৎকার একটি ‘ভিসিয়াস সারকেল’।

আমাদের ইমিউন সিস্টেম যেন এক দু’ধারী তলোয়ার যার এক ধার দিয়ে তো রোগ জীবানু ধবংশ করি। আরেক ধার দিয়ে চিনতে ভুল করা বা চিনার পর অতিরিক্ত রিয়েক্টিভ হওয়ার কারণে যথাক্রমে অটিইমিউন ডিজিজ ও করোনায় ‘সাইটোকাইন স্টরম’ করে ফেলি। বয়স্কদের ক্ষেত্রে হয় কম ইমিউন রেসপন্স করবে অথবা ভুল রেসপন্স করে, যার কোনটাই আমাদের জন্য কাম্য নয়।

প্রশ্নঃ কেউ কেউ বলছেন, সমাজের ৮০% লোককে টিকা দিলেই যদি ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জিত হয় তাহলে বয়স্ক দুর্বল লোকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিয়ে লাভ কি? তারা তো ঐ ৮০% লোকের টিকা গ্রহনের মাধ্যমে যে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জিত হবে তার মাধ্যমেই সুরক্ষা পাবে?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইনঃ এ কথা ঠিক যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তাদের টিকা দিলে পুরোপুরি সুরক্ষা এন্টিবডি তৈরী নাও হতে পারে। তবে একথাও ঠিক ইমিউন সিস্টেম যতই দুর্বল হউক টিকা নিলে কিছু না কিছু সুরক্ষা পাবেই। না দিলে তো আরো অরক্ষিত থেকে যায়। তবে দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের অধিকারীদের ‘লাইভ ভ্যাকসিন’ না দেওয়াই ভাল। তাদেরকে বিকল্প ‘কিল্ড’ বা অন্য যে কোন ভ্যাকসিন দিতে হবে।

আমরা সবাই জানি, করোনা মহামারীর সংক্রমণ ততদিন পর্যন্ত হবেনা সম্বরন যতদিন না হবে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গঠন। আর এই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জন হতে পারে দুই ভাবেই। তা হলো দেশের ৮০-৮৫% জনতার টিকা গ্রহন অথবা ন্যাচারাল ইনফেকশন। যদি এই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ ন্যাচারাল ইনফেকশনের মাধ্যমে হতে হয়, ততদিনে দেশের বিরাট বুদ্ধিমান বয়স্ক অভিবাবক সম্পদ জনগণ মরে বিনাশ হয়ে যাবে। আর যদি ‘হার্ড ইমিউনিটি টিকার মাধ্যমে হয়ে যায়, তাহলে বেঁচে যাবে করোনার ঝুকিযুক্ত দেশ-জাতির বুদ্ধিমান জনগণ।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, আমাদের জনগণের মধ্যে যারা পঞ্চাশোর্ধব বয়স্ক তাদের বিরাট অংশ জাতির বিবেক। করোনায় মারা যাওয়াদের তালিকায় এরাই সবচেয়ে বেশী। অথচ এরা হলেন চলমান জাতীয় সম্পদ। যদি আমরা ন্যাচারাল করোনা ইনফেকশনকে দমন করতে না পারি তাহলে এই বিবেকবান-বুদ্ধিমান শ্রেনীর বিরাট অংশ আমরা হারাব এবং জাতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। সুতরাং এখনি সময় টিকা কার্যক্রমের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন।

প্রশ্নঃ আমরা জানি যে একটা নির্দিষ্ট রোগ ভবিষ্যতে যাতে সংক্রমণ না করতে পারে সে জন্যই টিকা নিয়ে রক্তে পর্যাপ্ত এন্টিবডি তৈরীর ব্যবস্থা। টিকা ছাড়া আর কিভাবে আমরা সংক্রামক রোগ করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইন : এ প্রশ্নের উত্তর অল্প কয়েক কথায় দেয়া যাবেনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে করোনা তথা মহামারী রোগ প্রতিরোধের পাঁচটি বিভিন্ন পর্যায়ের লেভেল আছে যা জানা থাকলে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।

# প্রিমরডিয়াল প্রিভেনশনঃ মায়ের গর্ভাবস্থায় গর্ভের বাচ্চাকে রক্ষার জন্য মাকে টিটেনাস ও রোবেলার টিকা দেয়া বা মায়ের যত্ন নেয়া যাতে গর্ভের বাচ্চা সুস্থ্য থাকে।
# প্রাইমারী প্রিভেনশনঃ সমাজে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা-স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং টিকা কার্যক্রম চালু করণের মাধ্যমে সমাজে রোগ বিস্তারের অনুকুল পরিবেশ ধবংশ করা।
# সেকেন্ডারী প্রিভেনশনঃ দ্রুত রোগ শনাক্ত করণ, আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন।
# টারসিরিয়ারী প্রিভেনশণঃ রোগীর দ্রুত চিকিৎসা এবং জটিলতা এড়ানো।

# কোয়ারটারনারী প্রিভেনশনঃ সংক্রামক রোগের কারণে সৃষ্ট রোগ জটিলতার ফলো আপ এবং রিহেবিলিটেশন
এর মধ্যে স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য পুষ্টিকর খাবার পরিমিত-নিয়মিত গ্রহন, টাটকা সবুজ শাক-সব্জি, ফলমূল, পর্যাপ্ত পানি, মিনারেল, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার গ্রহন, নিয়মিত হালকা থেকে মাঝারি ধরণের শরীর ও ফুসফুসের ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম (৬-৭ ঘন্টা) ও বিশ্রাম, ভাল চিন্তা ও সাধারণ লাইফ স্টাইলে জীবন পরিচালনা। রাগা-রাগী, হিংসা-বিদ্বেষ, দুশ্চিন্তা, টেনশন, ধুমপান, এলকোহল, জানক্ ফুড, প্রসেসড্ ফুড, চর্বিযুক্ত খাবার ইত্যাদি পরিহার করা।

প্রশ্নঃ চলমান টিকা কার্যক্রমে আপনার কি পরামর্শ?

ডাঃ তৌহিদ হোসাইন : ছয় মাস পূর্বে সরকার করোনা টিকার যাত্রা শুরু করে প্রথমে ৫৫ বছরোর্ধবদের টিকা দানের মাধ্যমে। পরে তা কমিয়ে ৩৫ বছর, তারপর ৩০ বছর করার পর এখন তা ২৫ বছর। সরকারের তরফ থেকে আভাস দেয়া হয়েছে, শিগগিরই তা কমিয়ে ১৮ বছর করা হবে।
করোনা হলো একটি সামাজিক এবং ছোঁয়াচে সংক্রামক রোগ। তাই সামাজিকভাবেই এর মোকাবেলার কোন বিকল্প নাই। এ ব্যাপারে এই দূর্যোগে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে জনগণ-সরকার কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে করোনা রোধে মাঠে-ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।

টিকাদান কর্মসূচীই হোক এখন বাংলাদেশের এক নম্বর কর্মসূচী।
বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনে দেশে প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার তিনশ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারপর যে হারে দেশের বয়স্ক শ্রেষ্ট সন্তানেরা একে একে করোনার শিকারে পরিনত হচ্ছেন, এভাবে চলতে থাকলে জাতি অচিরেই মেধাশূন্য হয়ে যাবে। এতটা স্বাস্থ্যগত এবং অর্থনৈতিক ঝুকিতে বিশ্ব গত একশত বছরেও পড়ে নাই।

স্বাস্থ্য বিধি মানা এবং ব্যাপক টিকা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমেই কেবল জাতি এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে এক শ্রেনীর মানুষের অনীহা কিংবা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হওয়ায় এখন টিকা, কেবল টিকার উপর জোর না দিলে এ জাতির রক্ষা নাই।

এ জন্য সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ যেন বাংলাদেশের পুরো জনগোষ্ঠীকে আগামী চার-পাচঁ মাসের জন্য টিকা দান কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত করে ফেলে। এখন দরকার আগামী তিন মাসের মধ্যে ২৫ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডাঃ জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, সরকার ইতোমধ্যে ২১ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আমরা আশা করছি, বাকি ৪ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থাও খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে।

বিশ্ব টিকার সবচেয়ে বড় যোগান দাতা কোভ্যাক্সই দিবে ৭ কোটি ডোজ টিকা। এখন সরকারের কাজ হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রতিশ্রুত টিকা দেশে এনে ব্যবহার শুরু করা । আমাদের টার্গেট হবে আগামী চার-পাচঁ মাসের মধ্যে দেশের ১৩ -১৪ কোটি লোককে দুই ডোজ টিকা কর্মসূচীর আওতায় নিয়ে আসা। এবার হয়ত বিদেশ থেকে টিকা কিনে টিকার চাহিদা পূরণ হচ্ছে কিন্তু করোনা রোগের যে ধরণ তাতে এটা পরিস্কার যে খুব শীঘ্রই পৃথিবীর কোন দেশ থেকে এ মহামারী দূর হবে না। ফুল দুই ডোজ টিকা দেবার পরেও বছর বছর বুস্টার ডোজ টিকা চালু রাখতে হবে বলে মনে হয়। এজন্য দেশেই করোনার টিকা উৎপাদনের বিকল্প নাই।

এর মধ্যে একটা বিশেষ কর্মসূচী থাকতে হবে পঞ্চাশোর্ধব জনগণের কেউ যেন দুই ডোজ টিকা থেকে বাদ না যায়। কারণ গত ২৪/০৭/২০২১ ইং পর্যন্ত সরকারী হিসেবে করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৯ হাজার ৪৬ জন। এদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধব বয়সীদের সংখা ১৫ হাজার ৮২ জন (৭৯.২০%)। এ পঞ্চাশোর্ধব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী মারা গেছে ৬১-৭০ বছর বয়সীরা যাদের সংখা ৫ হাজার ৯৩১ জন। ৫১-৬০ বছর বয়সীদের মৃত্যুর সংখা ৪৫৬৪ জন। ৭১-৮০ বছর বয়সী মৃত্যুর সংখা ৩৩৩১ জন। ৮১-৯০ বছর বয়সী মৃত্যুর সংখা ১১৪১ জন এবং বাকিরা ৯১-১০০ বা তারও বেশী বয়সী। এটা করতে হলে দৈনিক ২০ লক্ষ লোককে টিকা দিতে হবে। এভাবে এক মাস সময়ের মধ্যে ৬ কোটি লোককে এবং আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ দেশের ১৩-১৪ কোটি লোকের প্রত্যেককে অন্তত এক ডোজ টিকা শেষ করে দিতে হবে।

পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকাও শেষ করতে পারলে আশা করা যায় করোনা তৃতীয় ঢেউ যার আশংকা করা হচ্ছে অক্টোবর-নভেম্বরে তা ঠেকানো সম্ভব হবে। শ্লোগান হবে ‘ বয়স্কদের সবার আগে, আছে টিকা সবার ভাগে’।
এ ব্যাপারে অসুবিধা হলো জনগণের বৃহৎ একটি অংশ এখনো টিকার ব্যাপারে সচেতন নয়। এজন্য সরকারের প্রয়োজন হবে দেশজুরে ‘স্বাস্থ্য বিধি’ ও ‘টিকা ক্যাম্পেইন কর্মসূচী’ দ্রুত শুরু করা।

এজন্য সরকার সোসাল মিডিয়া, রেডিও, টেলিভিশন, প্রশাসন, সরকারী-বেসরকারী সামাজিক সংগঠন ইত্যাদি সব হাতিয়ারকে প্রচারনায় কাজে লাগাতে হবে। চালু করতে হবে ভ্রাম্যমান প্রচার ও টিকা দান দল। শুরু করতে হবে মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির, গীর্জা-প্যাগোডার সামাজিক ব্যবহার। মসজিদ-মাদ্রাসা ও অন্যান্য সামাজিক স্থাপনায় মাইকিং করে, বাদক দলের সহযোগীতায় গ্রামগঞ্জে স্বাস্থ্য বিধি মানতে ও টিকা গ্রহনে জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে।

যারা টিকা নিতে রাজী হবে না তাদেরকে তিরস্কার কিংবা সরকারী-বেসরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। টিকা গ্রহন কে করতে হবে বাধ্যতামূলক।এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নেয়া দরকার হবে। আল্লাহ এ জাতি তথা বিশ্ববাসিকে মহামারীর কবল থেকে রক্ষা করুক।

প্রতিবেদকঃ  প্যাথলজী বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক নিবন্ধকার। সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,ডিপার্টমেন্ট অফ হিস্টোপ্যাথলজী, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কিডনী ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজী, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা।
/ কাশেম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২২ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০২ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩০ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৪ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪০ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12