বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

এবার কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বাংলা নববর্ষ . পহেলা বৈশাখ…

দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
আজ মঙ্গলবার পহেলা বৈশাখ বাংলা নতুন বছর। বাংলা ১৪২৭। সাল ঐতিহ্য ভেঙে এবার ভোরের আলো ফুটতেই বাংলা নতুন বছরকে ঘরে বসে বরণ করে নেবে বাংলাদেশের মানুষ। তবে ঢাকার রাজপথে এবার রঙ-বেরঙের মুখোশ ও ফানুস ঘুরে না বেড়ালেও একটি পোস্টারের মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করা হবে। অন্তর্জালের মাধ্যমে পোস্টারটি শোভা পাবে সারা দেশ ও রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে।

করোনার হিংস্রতার ভয়ে এবারই প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটি। বৈশাখ বরণে সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। তাই এবার পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ বন্ধ রাখছে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠান। নতুন সূর্যোদয়ের সাথে রমনার বটমূলে গাইবে না ছায়ানট, হবে না মঙ্গল শোভাযাত্রা।

সারা দেশের কোথাও থাকবেনা বৈশাখী আয়োজনের ছিটেফোটা । এ ছাড়া রমনা বটমূলের পরিবর্তে ছোট পরিসরে ছায়ানটের একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে টেলিভিশন চ্যানেলে। অন্য দিকে শিল্পের মাধ্যমে ইতিবাচকতা এবং সহানুভূতি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ঘরে বসে শিল্পীদের শিল্প চর্চার মাধ্যম হিসেবে এক অনলাইন প্লাটফর্মের উদ্যোগ নিয়েছে ‘সাধনা কালচারাল সেন্টার’। এই প্লাটফর্ম শিল্পীদের অনলাইনে শিল্পকর্ম প্রচারের ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এবার কোনো শোভাযাত্রা করা যাচ্ছে না। তবে এর পরিবর্তে তারা একটি পোস্টার করেছেন। যে পোস্টারটি অন্তর্জালের মাধ্যমে ঘুরবে সারা দেশে। শিল্পকলার প্রবীণ এই অধ্যাপক জানান, কালো জমিনের ওপর লাল, সাদা ও হলুদ রঙের বর্ণমালায় লেখা হয়েছে।

সবার ওপরে বৈশাখ ১৪২৭ লেখার পর রক্তিম বর্ণমালায় ওপরের অংশে লেখা হয়েছে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ উপন্যাসের বিখ্যাত সংলাপ ‘মানুষ ধ্বংস হতে পারে কিন্তু মানুষ পরাজিত হয় না’। তার নিচে সাদা বর্ণমালায় লেখা হয়েছে ‘এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ সেরা। বর্তমানের এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ জয়ী হবেই।’ এই লেখার পর বড় অংশজুড়ে দৃশ্যমান হয়েছে একটি বর্ণিল সরাচিত্র।

ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মানুষ এবং শিল্পীদের স্বার্থে সংগঠনের সভাপতি সনথজীদা খাতুনের উপদেশ অনুযায়ী কোনো অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জানান, ‘ছায়ানট মানুষের জন্য নিবেদিত সংগঠন।

এখন বরং আমরা মনে করি সাধারণ মানুষ, যারা দিনে আনে দিনে খায়, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যে থেকে আমরা একটি সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে এদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এটা অনেকটা আমাদের বৈশাখ আয়োজনে যে খরচ হয়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে করেছি ছায়ানটের ত্রাণ তহবিল থেকে।’

একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্যান্য সংগঠনও। দীর্ঘ দিন ধরে নববর্ষ উদ্থযাপনের আয়োজন করে আসা সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পিগোষ্ঠীর প্রধান ফকির আলমগীর জানান, এবার তারা গণমানুষ নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন না।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, পয়লা বৈশাখ উদ্থযাপনে তারা কোনো আয়োজন করবেন না। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠান জীবনের চেয়ে বড় না। মানুষ বাঁচলে ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈশাখ উদথযাপন করা যাবে। মানুষের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমরা এবার সব বাতিল করেছি।

রমনা বটমূলে ছায়ানটের বৈশাখ বরণ শুরু হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বৈশাখবরণ অনুষ্ঠান হয়নি। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালে ইউনেসকোর অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়।

মাঝে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ে নীতিগত চারুকলার সামনে না করে ক্যাম্পাসের বাইরে গ্যালারি শিল্পাঙ্গন থেকে বের হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০০১ সালে ভয়ঙ্কর সিরিজ বোমা হামলার পরের বছরও সে আয়োজন বন্ধ হয়নি। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতিতে স্থগিত করা হলো ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন।

ছায়ানটের বর্ষবরণ টিভিতে : করোনা পরিস্থিতিতে সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ থাকায় রমনার বটমূলে নেই ছায়ানটের কোনো অনুষ্ঠান। স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনেই নিয়মিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও মিলনমেলার আয়োজন থেকে সরে এসেছে তারা। এর বদলে ছোট পরিসরের একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে টেলিভিশন চ্যানেলে।

রমনার বটমূলে গত কয়েক বছর ধরে যে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে এসেছে ছায়ানট, তারই ধারণকৃত ভিডিও দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবারের টিভি অনুষ্ঠান। ছায়ানট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকটি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নির্বাচিত ভিডিও দিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হবে পহেলা বৈশাখ সকাল ৭টায়।

তাতে আগের বছরের আয়োজনের অংশগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে বর্তমান সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সনথজীদা খাতুনের সমাপনী কথন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও অনুষ্ঠানটি একইসাথে ছায়ানটের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ছায়ানট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও সম্পচারিত হবে।
ইংরেজি ১৯৬৪ সাল, বাংলা ১৩৭১ সালের ১ বৈশাখ রমনার বটমূলে ছায়ানট বাংলা নববর্ষ পালন শুরু করে। কালক্রমে এই নববর্ষ পালন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়। #


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


অনুসন্ধান

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০১ অপরাহ্ণ
  • ৪:৩০ অপরাহ্ণ
  • ৬:২৬ অপরাহ্ণ
  • ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
  • ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন জরিপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি এখন লিপসার্ভিসের দলে পরিণত হয়েছে।’ আপনিও কি তাই মনে করেন? Live

  • হ্যাঁ
    25% 3 / 12
  • না
    75% 9 / 12