দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান প্রক্রিয়া বিধিসম্মত হয়নি। সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটি বিধিসম্মত হয়নি।’
রোববার (১৫ মার্চ ) তথ্যমন্ত্রী ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় বেতার ভবনে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে কুড়িগ্রামে একজন সাংবাদিককে যেভাবে ঘর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র কোর্ট বসিয়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে, আমার দৃষ্টিতে এটি কোনোভাবেই বিধিসম্মত হয়নি। এটর্নি জেনারেল ইতোমধ্যেই তার বক্তব্যে এভাবে মধ্যরাতে অন্যত্র কোর্ট বসানো যায় না বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যতদূর দেখে আসছি, মোবাইল কোর্ট ঘটনাস্থলেই বসাতে হয়। একজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র মোবাইল কোর্ট বসানো কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয় এবং এটা যেভাবে ঘটানো হয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। এবিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
তিনি বলেন, ডিসি হোন বা অন্য কর্মকর্তা হোন, যেই হোন, তিনি যদি আইন বহির্ভুতভাবে কোনো কাজ করে থাকেন, সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং অন্যরাও যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারাও এর দায় এড়াতে পারেন না।’ ‘কারো কোনো অপরাধ থাকলে তার বিচারেরও নিয়মনীতি রয়েছে, কিন্তু এক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়েছে বলে আমি মনে করি না’, বলেন ড. হাছান।
অপর একজন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি সাংবাদিকরা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. হাছান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার খোঁজখবর করছে।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোকসজ্জা করোনা সংক্রমণে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না’ সে ব্যাপারে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আলোকসজ্জা বরং করোনার কারণে চিন্তিত মানুষকে উজ্জীবিত করবে।
প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে জনসমাগমপূর্ণ সব অনুষ্ঠান পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এবং আলোকসজ্জার সাথে জনসমাগমের কোনো সম্পর্ক নেই বিধায় করোনা সংক্রমণে এর কোনো প্রভাবও নেই।’
এরপর মন্ত্রী বেতার মিলনায়তনে সংক্ষিপ্ত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, উন্নত রাষ্ট্রের পাশাপাশি উন্নত জাতি গঠন আমাদের লক্ষ্য, এবং বেতার সেই লক্ষ্য অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ধীরে ধীরে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যান তখনই তাকে হত্যা করা হয়। ১৯৭৪-৭৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭দশমিক ৪ শতাংশ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের চার দশক পরেও তা ভাঙ্গা না গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রেকর্ড অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বছরে বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে জাপানের মতোকরে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে দেশে আসার সময় লন্ডনে তাকে প্রশ্ন করা হয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে আপনি কিভাবে গঠন করবেন তখন তিনি বলেছিলেন আমার মাটি আছে আর মানুষ আছে। সেটি দিয়েই আমি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। বঙ্গবন্ধুকে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তি মিলে তাকে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল। গত ১১ বছরে পৃথিবীর সব দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি। বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, গ্রামে এখন আর কুড়ে ঘর নেই।
আমাদের দেশের বামপন্থী নেতারা বলতেন শ্রমিকের মজুরি হতে হবে সাড়ে তিনকেজি চালের মুল্যের সমান। এখন একজন শ্রমিকের মজুরি পাঁচগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগে বিদেশ থেকে পুরান কাপড় দেশে আসতো এখন আমাদের দেশের কাপড় বিদেশে যায়। এটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বের কারণে।
ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মুজিববর্ষের শেষার্ধে দেশে কোনো গৃহহীন থাকবে না। সে লক্ষে কাজ চলছে। নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু হচ্ছে। এতেকরে যারা আমাদের দেশকে কুক্ষিগত করে রাখতে চায় তাদেরকে জবাব দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখে আক্ষেপ করে।
বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদার, সংবাদ ও অনুষ্ঠান শাখার উপ-মহাপরিচালকদ্বয়, পরিচালকবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের কর্মচারিবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন। # কাশেম