দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
বহুল আলোচিত যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামীর অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে দেশি-বিদেশি ৬০টি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৮ মার্চ) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপ পরিচালক শাহীন আরা মমতাজের স্বাক্ষর করা পৃথক চিঠি ৫৯টি ব্যাংকের এমডি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান নির্বাহী (বিএফআইইউ) বরাবর পাঠানো হয়েছে।
গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য ।
তিনি আরো জানান, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় এই দম্পতির বাড়ি ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতেই মূলত আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে পাপিয়ার অঢেল সম্পদের হিসাব মেলাতে হোটেল ওয়েস্টিন ও রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ডোম-ইনো বরাবর চিঠি দেয় দুদক।
এর আগে গত ২ মার্চ তলবি চিঠিতে ওইসব নথিপত্র ৮ মার্চের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। চিঠিতে হোটেল ওয়েস্টিন থাকা ও খাওয়ার বিলের কপি, বিভিন্ন সময় হোটেল বুকিংয়ের নথিপত্র এবং কার কার নামে রুম বুকিং করা হয়েছে, সেসব বিষয় সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চাওয়া হয়। যদিও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র এখনো পৌছায়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, পাপিয়া কর অঞ্চল-১০ এর আওতায় নিয়মিত আয়কর নথি জমা দেন। পাপিয়ার ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দাখিল করা আয়কর বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি বছরে আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ টাকা।
আর মোট সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। আয়কর বিবরণীতে তিনি শুধুমাত্র নরসিংদীর কেএমসি এন্টারপ্রাইজকে তার সম্পত্তি ও আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন।
অন্যদিকে, পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে নরসিংদীর প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং সিটি ব্যাংক লিমিটেডে অর্ধডজন ব্যাংক হিসাবের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ লাখ টাকা জমা রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদেশে অর্থ পাচারসহ কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা ও বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে কোটি টাকার সম্পদ পাচার এবং কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত গণমাধ্যমকে বলেন, পাপিয়ার সম্পদ, সে সবের উৎস, ক্ষমতা, বিদেশে অর্থ পাচার সবই অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছে। পাপিয়ার আশেপাশে যারা ছিল, তাদের দিকেও গোয়েন্দা নজর রাখা হচ্ছে। তার সহযোগীরাও আইনের আওতায় আসবে।
এর আগে পাপিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়া ওরফে পিউসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বাকিরা হলো, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা।
এরপর রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ তাদের (স্বামী-স্ত্রী) নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের সন্ধান পায় র্যাব।
র্যাবের অভিযানে ফার্মগেটে ইন্দিরা রোডে এ দম্পতির বাসা থেকে পিস্তল, গুলি ও গুলির ম্যাগজিন, বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। # কাশেম