দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
দুর্নীতি দমন কমিশনের ( দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতি রাষ্ট্রের সকল অর্জনকে কুঁড়ে কুঁড়ে ধ্বংস করে দেয়, এমনকি মানুষের সক্ষমতাকেও দুর্বল করে দেয়। তাই দুর্নীতি অনেকটা ক্যান্সারের মতো।দেশে উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়নে পরিণত করতে হলে দুর্নীতি নির্মূল করতেই হবে।
তিনি বলেন , সরকারি পরিরসবা প্রদানে শুধু তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়রানি-অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ মেশিনের পিছনে যিনি আছেন, তিনি কিন্তু মানুষ। তাই প্রযুক্তির পাশাপাশি সরকারি সেবা প্রদান প্রক্রিয়াও পদ্ধতিগত সংস্কার করতে হবে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাজঢ়ানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অক্সফাম বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। অনুষ্টানে দুর্নীতি প্রতিরোধে অর্ন্তভুক্তিমূলক অভিগমনের কাঠামো বিন্যাস নিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা হয়।
অক্সফাম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রিডিরেক্টর মোস্তফিজুর রহমান অক্সফাম বাংলাদেশ-এর ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদকের প্রতিরোধ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, উত্তম কুমার মন্ডল প্রমুখ।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি ঘটার আগেই বাধা দিচ্ছে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে, জনগণকে সচেতন করছে এবং সর্বশেষ অপরাধ ও অপরাধী শনাক্ত করে তাদেরকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে।
তিনি বলেন, কমিশন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫টি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে এবং এর মাধ্যমে দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুদক নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করছে। বিগত চার বছরে কমিশনের কার্যক্রমের মাধ্যসে সমাজে হয়তো এই বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে যে, কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, অপরাধীদেরকে সমভাবে আইন-আমলে আনা হচ্ছে। তবে একথাও ঠিক এতে স্বস্তির অবকাশ নেই। আমাদেরকে দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি বন্ধ কিংবা সুশাসনের জন্য মাইন্ডসেট পরিবর্তন দরকার। তবে একথাও ঠিক পরিণত মানুষের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করা কঠিন। তাই কমিশন তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে দুর্নীতিবিরোধী মানসিকতা প্রস্ফূটিত করার জন্য বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এ বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশের সকল উপজেলা, জেলা, নগর ও মাহনগরে সতত সংঘ রয়েছে এমন ২৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একযোগে সুশাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে।
কারণ বিতর্কের মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান আইন, প্রথা ও রীতি-নীতিকে পরিশুদ্ধ করা যায়। গণতান্ত্রিক মানসিকতা তথা পরমত সহিষ্ণুতা বিকাশে বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু বিতর্ক প্রতিযোগিতা নয়, এর পাশাপাশি বছরব্যাপী দেশের সর্বত্র রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এসব কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ গ্রোথিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এসময় অক্সফাম বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলটি কমিশনের এসব কার্যক্রমে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার সৌন্দর্য হচ্ছে সক্ষমতার বিকাশ। জাতি গঠনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। আমরা একটি নৈতিকমূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম সৃষ্টির চেষ্টায় ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা,অভিবাবক তথা মা-বাবাদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে চাই।
আমাদের অনুধাবন করার সময় হয়তো এসেছে যে, দেশের প্রায় এককোটি প্রবাসী যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তার অনেকাংশ চলে যাচ্ছে অন্য দেশে, শুধু আমাদের সক্ষমতার অভাবে। #