দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
রাজধানীর উত্তরার ৭, ৯, ১১ ও ১৩ নং সেক্টরে রাজউকের মালিকানাধীন জায়গা অবৈধভাবে দখল করে মার্কেট ও দোকানপাট নির্মাণের অভিযোগে সরাসরি অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক।
বুধবার (১ জানুয়ারি) দুদক জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে এই জানান। তিনি আরো জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শেখ গোলাম মাওলা ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালামের সমন্বয়ে গঠিত একটি এনফোর্সমেন্ট টিম গত মঙ্গলবার এবং আজ বুধবার টানা দুই দিন এ অভিযান পরিচালনা করেন।
দুদক টিম সরেজমিন অভিযানে উত্তরার ৭, ৯, ১১ এবং ১৩ নং সেক্টরের মোট ২০ টি প্লটের মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করেন। তারা দেখতে পান অধিকাংশ প্লটের ক্ষেত্রে কোন বরাদ্দ প্রদান করা হয় নি । কয়েকটি প্লটের ক্ষেত্রে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
রাজউকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান যে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট প্লটগুলোতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রাজউক একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। পরবর্তীতে এনফোর্সমেন্ট টিম, রাজউকের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ডেসকো অফিসের একটি সমন্বয়কারী টিম উক্ত এলাকার প্লটসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করে।
পরিদর্শনকালে দেখা যায় যে, উত্তরার ১৩ নং সেক্টরের ২৯ নং থেকে ৮১ নং প্লটের অধিকাংশ প্লট অবৈধভাবে দখল করে সেখানে আসবাবপত্রের দোকান, খাবারের হোটেলসহ অন্যান্য দোকানপাট স্থাপন করা হয়েছে। এসময় উক্ত দোকানদারদের বক্তব্যে জানা যায় যে তারা উত্তরা এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিকট হতে উক্ত প্লট ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
টিম জানতে পারে, সেখানে মোট ৫০-৬০ টি দোকান অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে এবং প্রতিটি দোকান থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা হারে মাসিক ভাড়া উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজউকের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা কোন সন্তোষজনক জবাব প্রদান করতে পারেন নি।
উক্ত অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে আবাসিক বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদান করা হয়েছে মর্মে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়। পরে দুদক টিমের উপস্থিতিতে সকল অবৈধ ইলেক্ট্রিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং উক্ত দোকান পরিচালনাকারীদের দ্রুত তাদের অবৈধ দখল সরিয়ে নেওয়ার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
দুদক টিম উক্ত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম, পরিচয় সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছে যারা রাজউকের উক্ত প্লটসমূহ অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ভাড়া দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, উক্ত প্লটসমূহ থেকে মাসিক প্রায় ৫০-৫৫ লক্ষ টাকার দোকানভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যার কোন অর্থই সরকারী কোষাগারে জমা হচ্ছে না।
সার্বিক বিশ্লেষণে রাজউক উক্ত জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেনি মর্মে অভিযান পরিচালনাকারী টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে এবং উক্ত প্লট দখল, অবৈধ ভাবে ভাড়া উত্তোলন এর সাথে জড়িত বেশ কিছু ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনাকারী দল এ বিষয়ে সুপারিশমালা সহ কমিশনের নিকট বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।
খুলনা বিআরটিএ কার্যালয়ে নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। সমন্বিত জেলা কার্যালয়, খুলনার সহকারী পরিচালক মোঃ শাওন মিয়া ও উপসহকারী পরিচালক নীলকমল পাল এর সমন্বয়ে গঠিত টিম আজ এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানকালে দুদক টিম তথ্যাবলী অনুসন্ধানমূলক প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, উক্ত অফিসে অফিস সহায়ক লিখন এবং টাইগার আইটি লিমিটেডের একজন কর্মচারীর যোগসাজশে পরীক্ষা উপস্থিত না থেকেও ৯ হাজার টাকার বিনিময়ে উত্তীর্ণ হওয়া যায়।
দুদক টিম দপ্তরে একজন দালালকে অবৈধ অর্থ গ্রহণকালে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। সে লাইসেন্স প্রতি সাড়ে ৬ হাজার টাকা গ্রহণ করার অভিযোগ স্বীকার করায় তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ছদ্মবেশে লাইসেন্স গ্রহণ করতে আসা দুদক কর্মকর্তার কাছে লাইসেন্স প্রতি ৭০০০ টাকার জন্য দাবি করেন একজন আনসার সদস্য।
তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। দুদক টিম উক্ত দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম ছবিসহ পদবী অফিসের সামনে টানিয়ে ৭ দিনের ভিতরে দুদককে অবহিত করা, চিহ্নিত দালাল সহ অন্যান্যদের অফিসে প্রবেশ স¤পূর্ণরূপে নিষিদ্ধকরণ এবং অফিস সহায়ক লিখনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
এছাড়াও হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা যথাযথভাবে প্রদান না করার অভিযোগে, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের নামে ঘুষ দাবি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে, বয়স্ক ভাতা প্রদানে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগে, স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বেতন উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
বাজার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কাজ না করে আÍসাতের অভিযোগে যথাক্রমে প্রধান কার্যালয়, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালী এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ময়মনসিংহ হতে ৫টি পৃথক অভিযান পরিচালিত হয়েছে।#