দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক
অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভেতরে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, ঘুষ- দুর্নীতির সাথে জড়িত এবং দায়িত্ব পালনে ঘাফলতি সংস্থার আইন ও বিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তসহ অ্যাকশনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই উপ পরিচালক কমলেশ মন্ডল এবং মো. আহসানুল কবীর পলাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরো বেশ কয়জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। ফলে দুদকের ভেতরে চাকরি হারানোর ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, অনুসন্ধান ও তদন্তের নথি চাপা দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়কারী দুদক কর্মকর্তারা।
নাম না প্রকাশের শর্তে দুদকের একাধিক কর্মচারী জানান, দেশের দুর্নীতি দমন এবং প্রতিরোধের দায়িত্বে থেকেই নিজেরাই যদি দুর্নীতি করে, তাহলে কিভাবে দুর্নীতি কর্মবে।তাদের ভাষ্যমতে, গ্রাম্য একটা সুন্দর প্রবাদ আছে। সরিষা ভুত তাড়াবে,আর যদি সেই সরিষার ভেতরেই ভুত থাকে। তাহলে ভুত আরো শক্তিশালী হয়। তেমনি দুদকের ভেতরেই কিছু ভুত লুকিয়ে আছে। এই ভুতগুলো অনেক শক্তিশালী। তারা কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো গোপনে কথিত অভিযুক্ত,ঘুষ-দুর্নীতিবাজ এবং বিদেশে অর্থপাচারকারীদের সাথে বেশ সক্ষ্যতা বজায় রেখে নিজেরা অনৈতিক সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছেন। দুদকের ওই কর্মকর্তারা বহিরাগত দালাল পোষেন। তারা ইচ্ছে করেই প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের নামে বছরের পর বছর নথিচাপা দিয়ে রাখেন। এর ফাঁকে কথিত অভিযুক্তদের কৌশলে নানা ভীতির মধ্যে রেখে দালালদের মাধ্যমে দফায় দফায় অনৈতিক সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়।
তবে এবার দুদকের শক্তিশালী গোয়েন্দা ইউনিটের গোপন প্রতিবেদনে কতিপয় নিজস্ব কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, নথি আটকে রাখা, সময়ক্ষেপন করা, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া,অসততা এবং অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়গুলো উঠে আসছে।
চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত,কাউকে স্থায়ী বরখাস্ত, আবার কাউকে ডিমোশন এবং শেষবারের মতো শতর্ক করার ঘটনা অনেক আগে থেকেই চলমান আছে।
বর্তমানে দুদকের প্রায় ৩ ডর্জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তাদে মধ্যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর এবং রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। দুদকের ভেতরে সন্দেহ ভাজন দুর্নীতিবাজদের মধ্যে এককালের প্রভাবশালী সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ময়েছেন; পরিচালক, উপপরিচালক,সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পারচালক এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মচারী।
তবে দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সংস্থার কার্যক্রমে অনেক নতুনত্ব ফিরে এসেছে। দুদকের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ,অসৎ এবং দাঁয়িত্ব পালনের নামে লোকজনকে অহেতুক হয়রানীর সাথে জড়িতরা গোয়েন্দা ইউনিটের নজড়ে এসেছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ চলছে।
এদিকে আজ বুধবার (২০ আগস্ট) দুদকের উপ-পরিচালক কমলেশ মন্ডল এবং উপ-পরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। এতোদিন এই দুই উপপরিচালকে সাময়িক বরখাস্তে বিষয়টি রহস্যজনক কারণে গোপন রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ১৭ জুলাই দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের স্বাক্ষরিত আদেশে উপ-পরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে আদেশটি গত ৬ আগস্ট জারি করা হয়। এরআগে গত ১৬ জুলাই কমিশনের সভায় কমিশনের কর্মচারী বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী উপ-পরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। বিধি ৪৩(১) মোতাবেক মো. আহসানুল কবীর পলাশকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বিধি অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন। এ আদেশ ৬ আগস্ট থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তের আদেশে আরো বলা হয়, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আহসানুল কবীর পলাশকে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড, সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তিনি নির্ধারিত সময়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেননি এবং সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদনও জানাননি।
অপরদিকে দুদক চেয়ারম্যানের পৃথক আরেক স্বাক্ষরে গত ১৭ জুলাই জারি করা আদেশে উপ-পরিচালক কমলেশ মণ্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, দায়িত্ব পালনের নামে সময় ক্ষেপন করা। উপ-পরিচালক কমলেশ মণ্ডলকে ঢাকা ওয়াসার ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের পিডি ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আখতারুজ্জামানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
দুদকের আদেশে আরও বলা হয়, ওই অভিযোগের বিষয়ে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল না করা এবং সময় বৃদ্ধির আবেদন না করায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারী বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১০ জুলাই কমিশন সভায় ৪৩(১) বিধি অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। বরখাস্ত থাকা অবস্থায় তিনি প্রচলিত বিধি অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন। এ আদেশ প্রজ্ঞাপন ইস্যুর তারিখ থেকে কার্যকর হয়েছে। আরো ৩ ডজনখানিক দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানা যায়।
#