দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো দুর্নীতিবাজদের বিজয় কামনা করি না, দুর্নীতিবাজদের নেতৃত্বে চাই না। তবে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে করে এই নির্বাচন বাধা গ্রস্থ হয়। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) ও দুদক আইন অনুযায়ী যা যা করা দরকার দুদক তাই করবে।
দুদকের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঞ্চালনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক, কমিশনার (অনুসন্ধান) মোসাম্মদ আছিয়া খাতুন, রিপোর্টার্স অ্যাগেইননস্ট করাপশনের (র্যাক) সভাপতি আহম্মদ ফয়েজ, সিনিয়র সহ সভাপতি আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক জেমসন মাহবুব, সিনিয়র সাংবাদিক আলাউদ্দিন আরিফ,মতলুব মল্লিক, মাসুমুর রহমান, হকিকত জাহান হকি, তাসলিমুল আলমসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা।
দুদক চেয়ারম্যান সাংবদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি তো মনে করি জাতীয় নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করে আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না। আরপিও ও দুদক আইনে যা আছে, আমরা সেভাবেই কাজ করবো। আপনদের মতো আমরাও চাই দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতায় না আসুক।
তিনি বলেন, দুদক প্রধানত দুর্নীতি দমন ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দুদকের কাজে জনগণকে আরো সহযোগিতা করতে হবে। শুধুমাত্র দুদক আইনের মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে দমন ও দুর্নীতি প্রতিরোধের কাজে সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র আইনের মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে দমন ও দুর্নীতি প্রতিরোধের কাজে সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশি দুর্নীতি হয়। আপনারা দেখবেন দুর্নীতিবাজ, দুর্নীতির সাহায্যকারী, দুর্নীতিবাজদের অফিসে চাকরি করে যারা, যারা সহায়তা করে দুর্নীতির সুবিধাভোগী ,তার বিপরীতে আমরা কতজন আছি ? এতো বড় একটা শ্রেণির বিরুদ্ধে শুধুমাত্র দুদক দিয়ে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না। এর জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। এগুলোকে এড্রেস করেই আমাদেরকে এগুতে হবে।
দুদকের মামলায় চার্জশিট দাখিলের পরও অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তারা- কর্মচারীরা চাকরি করছেন, পদোন্নতিও পাচ্ছেন, এমন নজির রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, চার্জশিট দেওয়ার পর, সরকারের সর্বনিম্ন কিংবা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারী হোক, আমাদের সচিবের স্বাক্ষরে মন্ত্রীপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। উনার দায়িত্ব সবাইকে জানানো বিভাগয়ি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, পদোন্নতি পায় এটা তাদের নিজস্ব নীতিমালার বিষয়। আমরা চার্জশিট দিয়ে আদলতে সোপর্দ করবো।
জনপ্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করছি জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, জনগন শুধু প্রত্যাশা করবে, তারা সাহায্য করবে না, দুর্নীতি নির্মূলে নিজেরা কাজ করবে না, আইনকে সহায়তা করবে না, তাহলে তো প্রত্যাশা পূরণ হবে না। জনগন সহযোগিতা করলে আমরা ইনশাল্লাহ হয়তো প্রত্যাশার কাছাকাছি যেতে পারবো।
কমিশনার জহুরুল হক বলেন, আমাদের কাজ দুর্নীতি নিয়ে। কিন্তু জাতীয নির্বাচনের সময় দুদক কিছু করবে না, তা নয়। জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কিছুও করবে না। কমিশনার জহুরুল হক আরও বলেন, আজ দুদকের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী পালিত হচ্ছে। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদকের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে বাস্তবায়নে মিডিয়ার আরো সহযোগিতা প্রয়োজন।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোসাম্মদ আছিয়া খাতুন বলেন, দেশের সংস্কৃতিতে দুর্নীতি যাতে স্থায়ী অবস্থান না নেয়, সেজন্য দুদক কাজ করে যাচ্ছে। দুর্নীতি হলো ধ্বংসকারী একটি শক্তি। যা দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সবকিছুকে গ্রাস করেছে। দুর্নীতি দমনে দেশের সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে দেশপ্রেমই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় পুঁজি।
দুদক কমিশনার মোসাম্মদ আছিয়া খাতুন আরো বলেন, সমাজে দুনীতিকে স্থায়ী জায়গা তৈরির সুযোগ দেওয়া যাবে না। দুর্নীতি সমাজটাকে শেষ করে দিচ্ছে। দুর্নীতির কারণে দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশপ্রেম থাকলে কখনো দুর্নীতি করা যায় না। একজনের কত টাকা প্রয়োজন। দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে দুর্নীতিবাজরা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরণে জনগণের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। সামান্যতম বোধশক্তি থাকলে দেশের ক্ষতির চিন্তা করা যায় না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে আরো সক্রিয় হতে হবে।
# কাশেম