দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ঘুষ বাণিজ্যের ঘটনায় আলোচিত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণ আইটি প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে পালানোর অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে দেশের ৬৯টি পাসপোর্ট অফিস থেকে চাঁদাবাজির স্টাইলে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। পাশাপাশি বিভাগীয় মামলার তদন্ত কার্যক্রমও চলছে। ফলে নিজেকে রক্ষায় গত ১৩ জানুয়ারি ভারতে টিকিৎসা নিওয়ার নামে দেশত্যাগ করেন সাচ্চু মিয়া। এরপর থেকে আর কর্মস্থলে ফিরে আসেননি তিনি। টানা ৮ মাস যাবৎ কর্মস্থলে না ফিরে আত্মগোপেন রয়েছেন সাচ্চু মিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাচ্চু মিয়াকে কর্মস্থলে ফিরে আসার জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একাধিকবার পত্র পাঠানোর পরও কোন জবাব আসেনি। পরে একাধিক কারণ দর্শনানোর নোটিশও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওইসব নোটিশেরও কোন জবাব মেলেনি। ফলে বাধ্য হয়ে সাচ্চু মিয়াকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
দুদক সূত্র মতে, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সাচ্চুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক। দীর্ঘদিন ধরে চলা দুদকের দফায় দফায় অনুসন্ধানে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। প্রথম দিকে দুদক টিমের কাছে সাচ্চু মিয়া এবং স্ত্রীর স্থাবর- অস্থাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। কিন্তু তাদের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর সাথে অভিযোগ আকারে প্রাপ্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ব্যাপক গরমিলের বিষয়টি উঠে এসেছে। পরে তাদের দাখিল করা ওই বিবরণী অধিকতর যাচাই বাছাইকালে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি পরিস্কার হয়। যারফলে দুদকের পক্ষ মোহাম্মদ সাচ্চু মিয়ার সম্পর্কে আরও অধিকতর অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদকের টিম জানতে পারেন দীর্ঘ ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে সাচ্চু মিয়া কর্মস্থলে/ চাকরিতে অনুপস্থিত রয়েছেন।
সূত্র মতে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী সাচ্চু মিয়ার অধীনে আইটি খাতের সব ধরনের মালামাল ও যন্ত্রাংশ মজুত রাখা হতো। অভিযোগ রয়েছে,এ সুযোগে তিনি চাহিদামাফিক মোটা অংকের ‘বকশিশ’ কিংবা ঘুষের টাকা আদায় করতেন। চাহিদা মাফিক টাকা না পেলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রিলিজ করতেন না সাচ্চু মিয়া। ফলে অনেক সময় বাধ্য হয়েই তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়েই সার্ভিস নিতেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে দেশের ৬৯টি পাসপোর্ট অফিস থেকে অনেকটা চাঁদাবাজির স্টাইলে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন সাচ্চু মিয়া।
সূত্র মতে, পাসপোর্ট অফিসে বিশেষ চ্যানেলে ঘুষ লেনদেন হতো। নানারকম কেনাকাটায় কারচুপি করেও বড় ধরনের অর্থ তছরুপ করতেন সাচ্চু। দুদকের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে সাচ্চু মিয়ার ঘুষ লেনদেনের কৌশলের তথ্য। নামে-বেনামে তার কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল অঙ্কের লেনদেনের রেকর্ড পেয়েছে দুদক। এরমধ্যে পূবালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টেই লেনদেন হয়েছে তিন কোটি টাকার বেশি। এছাড়া পাইওনিয়ার কম্পিউটার সার্ভিস নামক এক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে পৌনে দুই কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্ত সাচ্চু মিয়া সারা দেশের বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিস থেকে নিয়মিত ঘুষ নিতেন। এজন্য তিনি কয়েকটি বিকাশ ও নগদ এজেন্ট নম্বর ব্যবহার করতেন। এছাড়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে খোলা বিকাশ অ্যাকাউন্টেও (০১৭৫১১১৩০৩৫) লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ২০২১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে লেনদেনের পরিমাণ ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৫ টাকা।
দুদক কর্মকর্তা জানান, সাচ্চু মিয়া ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেব ২০১২ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি সাকুল্যে বেতন পান ৬৫ হাজার টাকা। অথচ তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করেন। ৪০ লাখ টাকা মূল্যের গাড়িতে যাতায়াত করেন। এছাড়া রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের দুটি সুপরিসর ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় সাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মন্ত্রণালয় থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।# কাশেম