দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
অবশেষে শ্রম আইন অনুযায়ী কোম্পানির লভ্যাংশ দাবি করে ৮ শ্রমিকের দায়ের করা মামলায় লিখিত জবাব দাখিল করেছেন গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান। সোমবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে আজ এ জবাব দাখিল করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আলম মামুন। আর শ্রমিকদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী। পরে আদালত আগামী ৩০ এপ্রিল এই বিষয়ে শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য করে।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আলম মামুন ও শ্রমিকদের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী। আদালতে দাখিল করা জবাবে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেডের যেসব শ্রমিকরা মামলা দায়ের করেছেন, তারা শ্রম আইন অনুযায়ী এ সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। এ অর্থ মালিকরাও খরচ করেন না। লভ্যাংশের সম্পূর্ণ অর্থ শ্রমিকের কল্যাণে খরচ করা হয়। তবে ২০১৩ সালের পরে যোগদান করেছেন তাদের এ সুবিধা দেওয়া হবে। যেহেতু মামলা দায়ের কারিরা এর আগেই শ্রমিক হিসেবে ছিলেন। তারা কম্পানির এ পাঁচ শতাংশ লাভ্যাংশ পাবেন না।
এর আগে গত ৯ নভেম্বর শ্রম আইন অনুযায়ী কোম্পানির লভ্যাংশ দাবি করে গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসানের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক সাত কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারী ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে আলাদা আটটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলা গ্রহণ করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষকে জবাব দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে ড.মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আরও ৮টি মামলা করা হয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী কোম্পানির লভ্যাংশ দাবি করে ‘গ্রামীণ টেলিকম’র সাবেক ৮ কর্মকর্তা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে গত ৯ নভেম্বর মামলাগুলো দায়ের করা হয়। ওইদিন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এইচএম সানজিদ সিদ্দিকী এ তথ্য জানান।
ব্যারিস্টার এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী বলেন, সাত কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারী ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬-২০০৯ অর্থ বছরে কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে তাদের বি ত করা হয়।
তিনি বলেন, মামলার বাদী ৮ কর্মকর্তা ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬-২০০৯ অর্থ বছরে কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে তাদের বি ত করা হয়। শ্রম আইনে বলা আছে, শ্রম আইন কার্যকর হওয়ার দিন থেকে কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলে দিতে হবে।এ লভ্যাংশ না পাওয়ার কারণে প্রথমে তারা গ্রামীণ টেলিকমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। লিগ্যাল নোটিশ প্রদানের পরও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে গত ৯ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে শ্রম আইনের ২১৩ ধারা মোতাবেক পৃথক ৮টি মামলা করেন।
আদালত মামলা গ্রহণ করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষকে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জবাব দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেড, গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে।
এর আগে ৪৩৭ কোটি টাকা দাবি করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা হয়। ২০১৭ সালে ১৭৬ জন কর্মচারি বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করেন। তবে তাদের দাবিকৃত অর্থ পরিশোধের প্রেক্ষিতে মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়ে যায়।
কিন্তু এ মামলার মধ্যস্থতাকারী আইনজীবী ইউসুফ আলী আকন্দকে অস্বাভাবিক অংকের ফি নিয়েছেন-দাবি করে তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই অনুসন্ধানে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে-মর্মে ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি।# কাশেম