দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের ২২তম মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মÐলীর সদস্য। বর্তমান ২১তম মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। সেই অনুযায়ী,তার ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে। এরপর দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর দায়িত্ব গ্রহণের সম্বাভনা রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। রাষ্ট্রপতি পদে একজন প্রার্থী হলে, নির্বাচনের জন্য সংসদের সভা বা ভোটের প্রয়োজন হবে না।

এদিকে রোববার (১২  ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলীয় নেতারা। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন। এরপর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মো.সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম দাখিল করেন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফও করেন কাদের।

তবে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে,আগামী দিনে এ দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সবার পরিচিত মুখ মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এখন চলছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া। এরমধ্যে ১৩ ফেব্রুয়ারি  সকাল ১০টা থেকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিডিউল নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি  জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

মো.সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের জুবলি ট্যাঙ্ক পাড়ার (দিলালপুর) সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদ করায় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাড়ে ৩ বছর কারাভোগ করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামাত জোটের নেতা কর্মীর দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতা বিরোধী কর্মকাÐের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের পিতা এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড, রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে ২১জনের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন:
স্বাধীনতার পর প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান- ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২। মোট ২৭০ দিন। দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম- ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২। মোট ২৭০ দিন। (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি)। তৃতীয় রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী- ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩। মোট ৩৪৬ দিন। ৪র্থ রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ- ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ থেকে ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৪। মোট ১ বছর ৩৪ দিন। (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি)। ৫ম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ- ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৪ থেকে ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫। মোট ৩৬৩ দিন। ৬ষ্ঠ রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান- ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। মোট ২০২ দিন। ৭তম রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ- ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫। মোট ৮৩ দিন। ৮ম রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম- ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে ২১ এপ্রিল ১৯৭৭। মোট এক বছর ১৬৬ দিন। ৯ম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান- ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ থেকে ৩০ মে ১৯৮১। মোট চার বছর ৩৯ দিন। ১০তম রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার- ৩০ মে ১৯৮১ থেকে ২০ নভেম্বর ১৯৮১ (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি)। ১১তম রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার-২০ নভেম্বর ১৯৮১ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৮২। মোট ২৯৮ দিন। পদ খালি ( ১৯৮২ সালের ২৪- ২৭ মার্চ)। ১২তম রাষ্ট্রপতি আ ফ ম আহসান উদ্দিন চৌধুরী- ২৭ মার্চ ১৯৮২ থেকে ১০ ডিসেম্বর ১৯৮৩ মোট ১ বছর ২৫৮ দিন। ১৩ তম রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ- ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০। মোট ৬ বছর ৩৬০ দিন। মুলত এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। ১৪তম রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ- ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১০ অক্টোবর ১৯৯১। মোট ৩০৮ দিন। ১৫তম রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস- ১০ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯৬। মোট চার বছর, ৩৬৫ দিন। ১৬তম রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ- ৯ অক্টোবর ১৯৯৬ থেকে ১৪ নভেম্বর ২০০১। মোট পাঁচ বছর ৩৬ দিন। ১৭তম রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী- ১৪ নভেম্বর ২০০১ থেকে ২১ জুন ২০০২। মোট ২১৯ দিন। ১৮তম রাষ্ট্রপতি জমির উদ্দিন সরকার: ২১ জুন ২০০২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২। মোট ৭৭ দিন। ১৯তম রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ- ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ থেকে ১২ ফেব্রæয়ারি ২০০৯। মোট ছয় বছর ১৫৯ দিন। ২০তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান- ১২ ফেব্রæয়ারি ২০০৯ থেকে ২০ মার্চ ২০১৩। মোট ৪ বছর ৩৬ দিন। ২১তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ: ১৪ মার্চ ২০১৩ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। তবে ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন দেন। # কাশেম