দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেছেন, অসৎ উপায়ে এখন পর্যন্ত এক টাকাও উপার্জন করিনি। বাংলাদেশে নিজের এক টাকার কোনো সম্পত্তি নেই বলেও দাবি জানিয়েছেন।তিনি বলেছেন, ‘আমার যা উপার্জন তা সবার কাছে স্পট। আয়কর নথিতে আমার সব উপার্জনের তথ্য স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। এর বাইরে একটা টাকাও আমি অসৎভাবে আয় করেনি।’
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের নিজ কার্যালয়ে বাছাইকৃত কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তাকসিম এ খান। ওয়াসার কর্মচারীদের বাধামুখে পেশাদার সাংবাদিকরা তাকসিম এ খানের মতবিনিময় সভার সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেননি।কেবলমাত্র ওয়াসার এমডির তালিকাভুক্ত কয়েকজন সাংবাদিকের ওই ভবনে প্রবেশের অনুমতি আছে বলে জানানো হয়।
এদিকে এই ঘটনায় নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফেরাম বাংলাদেশের (ইউডিজেএফবি) পক্ষ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনের সভাপতি অমিতোষ পাল ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুন। ১০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) এক বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানেরে সংবাদ সংগ্রহ এবং সংবাদ সম্মেলন কাভারের অধিকার সব সাংবাদিকেরই রয়েছে। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বরাবরই পেশাদার সাংবাদিকদের এরিয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনার করে থাকেন। অনেক সংবাদ সম্মেলনেই সাংবাদিকদের জানানো হয় না। পছন্দের দু’চারজনকে নিয়ে এসব সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন। মঙ্গলবারও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি।
এ দিন ওয়াসার এমডির পূর্ব নির্ধারতি সংবাদ সম্মেলন কাভার করেত গেলে মূল ফটকেই আটকে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের। একটি বিশেষ তালিকায় নাম থাকা কয়েকজন সাংবাদিকের বাইরে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কর্মচারীরা জানান, এই তালিকার বাইরে কাউকে ঢুকতে কর্মকর্তারা নিষেধ করেছেন।
নেতৃদ্বয় বলেন, একটি সরকারি সংস্থার সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের মূল গেইট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার শামিল। এরমাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা এবং এমডি তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা আরও ঘনিভূত হচ্ছে। তাদের এমন আচরণে সাংবাদিক সমাজ ক্ষুদ্ধ।
নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা আশা করি ওয়াসার এমডি’র শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা না দেওয়াারও আহবান জানান তারা।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানতার আমন্ত্রিত কয়েকজন সাংবাদিককে কাছে সম্প্রতি গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন।
তাকসিম এ খান বলেন, আমি যা বেতন পাই তা সবার কাছেই ওপেন বিষয়। তাই এখান লুকোচুরির কিছু নেই। এই বেতন ছাড়া আমার আয়ের আর কোনোও পথ নেই। আমি যা আয় করি তা সৎভাবে উপার্জন করি যার একটি টাকাও আমার অবৈধ নয়। এই আয় দিয়ে আমার যেভাবে চলা যায় সেভাবেই আমি চলি। আমার স্ত্রী সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং সেখানে ওয়েল স্টাবলিস্ট তাই তাদের টাকা পাঠানোর আমার কোনো দরকার হয় না।’
‘ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!’ শিরোনামে স¤প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কিনেছেন এসব বাড়ি। সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থপাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তথ্য তালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি কেনা এবং অর্থ পাচারকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তাকসিম খানের নাম থাকা নিয়ে স¤প্রতি দুটি অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অভিযোগে কিছু বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা, ছবি, কোন বাড়ি কখন, কত টাকায় কেনা, তা উল্লেখ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আজ কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তাকসিম এ খান। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনা সংক্রান্ত খবরকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলে দাবি করে তিনি এমন খবর প্রকাশ করায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন।
ওয়াসার এমডি বলেন, যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয় করার জন্য যে ডাহা মিথ্যা প্রতিবেদন করলো, এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা আমি গ্রহণ করবো। এমন নয় যে আমি এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছি বরং আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ঢাকা ওয়াসায় চাকরি করতে এসেছি। আমি অনেক আগে থেকেই পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। স্ত্রী-সন্তান সেখানে অনেক ভালো মানের চাকরি করে। আমি এখানে একটা টাকাও অসৎ উপায়ে উপার্জন করিনি। ফলে টাকা সেখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) পাঠানোরও কোনও প্রশ্ন আসে না।’
তাকসিম এ খান বলেন, আমার স্ত্রী-সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং সেখানে ভালো চাকরি করায় তাদের সেখানেও ভালো অবস্থান আছে। এদিকে আমি যা বেতন পাই সবমিলিয়ে আমাদের ভালোভাবে আল্লাহর রহমতে চলে যাচ্ছে। তাই দুর্নীতি, অসৎ উপায়ে উপার্জনের কোনও দরকার হয় না আমার।# কাশেম