দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
হাইকোর্ট বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান (বিএফআইইউ) মাসুদ বিশ্বাসকে তলব করেছেন । উচ্চ আদালতের আদেশ এবং নির্দেশনার আলোকে সুইস ব্যাংকে অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য দাখিল না করার কারণ ব্যাখ্যা দিতে তাকে ৩১ আগস্ট বেলা ১১টায় সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বে এ আদেশ দেন। আদালতে আজ দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেছেন, ‘সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রæটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে’। রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়াড ওই অনুষ্ঠানে আরও বলেছেন, ‘তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই সুইজারল্যান্ডে কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়’।
সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘গত বছর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে উভয় দেশের সম্মতিতে ব্যাংকিং তথ্য লেনদেন হতে পারে এবং সেটা সম্ভবও। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি’।
পরদিন গত ১১ আগস্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বে দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের কাছে পদক্ষেপ জানতে চান। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এসব বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছিল দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে গত ১১ আগস্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স টেনে হাইকোর্ট জানতে চান, বাংলাদেশ থেকে কারা, কী পরিমাণ অর্থ সুইচ ব্যাংকে পাচার হয়েছে? এ বিষয়ে সরকার ও দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে? তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বা দুদক কোনো তথ্য দিতে পারেনি উক্ত আদালতকে। তাই ১৪ আগস্টের মধ্যে এ বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওইদিন উক্ত আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত কীভাবে বললেছেন বাংলাদেশিদের অর্থ জমার বিষয়ে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি- তা আমাদের বোধগম্য নয়’। রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত আরও বলেন, আপনারা যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তাতে প্রমাণিত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সাংঘর্ষিক।
এর আগে ১৪ আগস্ট সকালে বিএফআইইউ’র প্রতিবেদন হাইকোর্টে আসে। সেখানে জানানো হয়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন সময়ে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এফআইইউয়ের কাছে চাওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ১৭ জুন এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল বিএফআইইউ ।
অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসীকাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ অন্যান্য দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এসব তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব (ইএসডবিøউ)। ২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডবিøউ’র সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ।
ইএসডবিøউ’র মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর ওই একজনের তথ্য দুদককে দিয়েছে বিএফআইইউ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন ইএসডবিøউ’র মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে অনুরোধ জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ। #