বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারের ৭ যাত্রীর মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিক রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। রিট আবেদনে দূর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের প্রত্যেক পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদাণ, দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য ১৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা ঢাকায় একটি বিয়ের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন। ওই প্রাইভেট কারে (গাড়িতে) মোট ৭জন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন। নিহতরা হলেন, রুবেল (৫০), ঝর্ণা (২৮), ফাহিমা, জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। আহত নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়ামনি (২১) উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গেছেন।
বুধবার (১৭ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইন সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও আইন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন রিট আবেদনটি করেন। গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রিটের সংশ্লিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুজ্জামান শাহীন।
রিটে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রোড অ্যান্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্টের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের।
এর আগে ওই দূর্ঘটনায় নিহত পাঁচ জনের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এই রিটে বিআরটির উন্নয়ন প্রকল্পে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিলেও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাকারিয়া খানের পক্ষে অ্যাডভোকেট এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম এই রিট আবেদন দায়ের করেন।
রিটকারীর আইনজীবী এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম গণমাধ্যমকে বলেন, রিটের বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেে শুনানি হতে পারে।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট আরও একটি রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। রিটে আইনজীবী সেগুপ্তা তাবাসসুম আহমেদ ঢাকার সড়কে জনগণের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়েছেন। একই সঙ্গে দুর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং জনগণের প্রত্যাশিত নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এই রিটে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ও উত্তরা থানার ওসি, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, রোড অ্যান্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্টের চিফ ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানিকে। রিটের ওপর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হকের বেে শুনানি হতে পারে বলে জানান অ্যাডভোকেট সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।
গত ১৫ আগস্ট দিনগত রাতে নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্ণা আক্তারের ভাই মো. আফরান মন্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা (নম্বর-৪২) দায়ের করেন। মামলায় অবহেলাজনিত কারণে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন গণমাধ্যমকে জানান, উত্তরার দূুর্ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত এবং অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ দুর্ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
#