দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
চুরাশিয়ান সদস্যদের ফ্যামিলি ডে’ অনুষ্ঠানে ৩৯ বছরের পুরনো স্মৃতিগুলো ফুটে উঠেছে। পুরনো স্মৃতিগুলো এতোদিন চুরাশিয়ান সদস্যদেরকে মনে মনে ছিল। চোখের আড়াল হলে,অনেকটা মনেরও আড়াল হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৮৪ সালের পর অনেকের সাথেই সরাসরি দেখা হয় না এবং কথাও হয় না। অনেকের ছাত্রজীবনের ওই চেহারাও ভুলে যাবার মতো অবস্থা। যাই হোউক চুরাশিয়ান গ্রুপ এবার ‘হারানো স্মৃতিগুলো, না বলা কথাগুলো, মনে মনে রাই খো, সুযোগ পেলে অনুষ্ঠানে মনখোলে বইলো।’ তবে যে মাত্র সুযোগ পেয়েছেন,সবাই মনের ভেতরে লোকানো ছাত্রজীবনের কথাগুলো বলেছেন। সেই পুরনো স্মৃতিগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
‘গত ০২ আগস্ট (মঙ্গলবার) কেরানীগঞ্জ উপজেলার তারানগর ইউনিয়নের গুইটায় ‘ শ্যামলবাংলা রিসোটে’ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই ফ্যামিলি ডে, অনুষ্ঠানটি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে।দীর্ঘ ৩৮/৩৯ বছর পর একত্রে পরিবারের সদস্যসহ অনেকেই মিলিত হবার সুযোগ পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সদস্যদের উপস্থিতিতে সত্যিই প্রাণ ফিরেছে চুরাশিয়ান গ্রুপের।
গত ০২ আগস্ট দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলতে থাকে নানা অনুষ্ঠান। চুরাশিয়ান গ্রুপের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম বেউতার মো. নেকবর হোসেনের পরিচালনায়, কলমারচরের এনামূল হক জুলহাস,বড়ৈইকান্দির এস এম আমান উল্লাহ, শিয়াইলের আবদুল কাদেরের তত্ত্বাবধানে এবং ভাওয়ালের আবু হানিফের (বাবুল) পবিত্র আল কোরআন থেকে অর্থসহ তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দুপুরের খাবারের পর স্মৃতিচারণকালে বক্তব্য রাখেন, ‘ শ্যামলবাংলা রিসোটের’ মালিকদের একজন ডাক্তার মো. তৌহিদ হোসাইন সহযোগি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কিডনি ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজী, শেরে বাংলা নগর ঢাকা। তিনি আপন বড় ভাইয়ের মতো সেই ছাত্র জীবন থেকেই আমাদেরকে ভাল বাসতেন।
এর পর বটতলীর মো. আবুল কাশেমের দীর্ঘ দোয়া- মোনাজাতে চুরাশিয়ান সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য,অর্থনৈতিক সামাজিক, পারিবারিক সফলতা এবং সদস্যদের সন্তানদের সফলতার পাশাপাশি উন্নত জীবনের আরো বেশি বেশি সাফল্য কামনা করা হয়। একই সঙ্গে ছাত্রজীবনের ঘনিষ্ট বন্ধুদের মধ্য থেকে হারিয়ে যাওয়া ৭ বন্ধু ও বান্ধবীসহ পুর্বপুরুষদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা হয়।
মৃত্যু বরনকারী ৭ জন হলেন; কলমারচরের শওকত হোসেন, মো. আব্দুল জলিল,ভাওয়ালের আব্দুর রহিম, মো. বাদল, শিয়াইলের নেওয়াজ আলী, বাংলানগরের আরজুবানু লায়লা ও নারগিজ।
এর পর শুরু হয় চুরাশিয়ান সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পরিচয় পর্ব। ১৯৮৪ সালে আর্টি ভাওয়াল স্কুল থেকে পাস করার পর এতোদিন অনেকের সাথে আর সরাসরি দেখা হয়নি। এবার পুরনো বন্ধুরা মিলিত হবার সুযোগ পেয়েছেন চুরাশিয়ান গ্রুপের ফ্যামিলি ডে, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। পরিচয় পর্বে সদস্যরা, স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে নিয়ে এক এক মঞ্চে উঠে আনন্দের সঙ্গে বিস্তারিত পরিবারের পরিচিতি বর্ননা করতে থাকেন।
সদস্যদের সন্তান কোথায় পড়া শুনা করছে, তার অবস্থান ও কর্মস্থল কোথায়, স্ত্রী এবং সন্তানদের বিবরণ প্রকাশ করতে থাকেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিশ্বের নামকড়া দেশ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন চুরাশিয়ান গ্রুপের ফ্যামিলির সদস্যদের পদচারনা ক্রমেই বাড়ছে। এই সফলতা সত্যিই মনে রাখার মতো।
ফ্যামিলি ডে, অনুষ্ঠানে এক এক পরিচয় দেওায়া সদস্যরা হলেন; বেউতার মো. নেকবর হোসেন, কলমারচরের এনামূল হক জুলহাস, মো. রফিক, বড়ৈইকান্দির এস এম আমান উল্লাহ, শ্যামলাপুর- লুটেরচরের মো. রফিক, হামিদা, শিয়াইলের আবদুল কাদের, বটতলীর মো. আবুল কাশেম, ভাওয়ালের আবু হানিফ (বাবুল), মো. বশির আহমেদ, জেসমিন আক্তার রেহেনা, শাহানাজ ইসলাম, মনোয়ারা বেগম, নাসিমা, গুইটার মো. জসিম উদ্দিন, মনহরিয়ার মোহাম্মদ হোসেন আলী ,কলমারচরের রফিক, ছোট ভাওয়ালের মো. আকতার হোসেন, বাংলানগরের নাসির উদ্দিন (নাসির), মেহেদি হাসান, সফিউদ্দিন, ফাতেমা আলম, চন্ডিপুরের হেলাল, হযরত আলী, জয়নাল আবেদীন, ফজিলেতুন নেসা ,সাহিদা বেগম, কাঠালতলীর মো. ফিারোজ, মকবুল হোসেন, রাহেলাসহ আরো অনেকে অংশ গ্রহণ করেছেন।
এই অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হতে না পারলেও অনেক টেলিফোনে,ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। এরমধ্যে নিমতলীর মো. বিল্লাল হোসেন, ভাওয়ালের নাজনীন আক্তার বিউটি, মনির হোসন, ভাওয়ালের খোরশিদা আক্তার খোকী, বড়ৈকান্দির মো. জহিরুল ইসলাম, খাঁন বাড়ির আলিম হোসেন, বাংলানগরের শাহানাজ পারভীন, মনোহরিয়ার রোকেয়া বেগম, চন্ডিপুরের মাকসুদ আলম, কলমারচরের জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানকে আরো আকর্ষীয় করার জন্য মহিলাদের ঝুঁড়িতে বল নিক্ষেপ এবং পুরুষদের অন্ধের হাড়ি ভাঙ্গা প্রতিযোগিতার আয়োজনটি সত্যিই আনন্দময় হয়েছে। একাধিক মহিলা ঝুঁড়িতে বল ফেলতে পারলেও একজন পুরুষও লাঠি দিয়ে একটি পাতিলও ভাঙ্গতে পারেননি।
অথচ ৫ জন মহিলা ঝুঁড়িতে বল ফেরায় পুনরায় তাদেরকে আবার বল ফেলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৩ জনকে বিজীয় ঘোষনা করতে হয়েছে। তবে পুরুষরা পালিত ভাঙ্গতে না পাররেও সাহস করে পালিলের কাছাকাছি যেতে পারায়,এই বিবেচনায় ৩ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সদস্য এক সন্তান ভাল নৃত্য পরিবেশন করায় তাকে ৫০০ টাকা পুরস্কার দিয়েছেন এনামূল হক জুলহাস।
এই চুরাশিয়ানদের মধ্যে ইতোমধ্যে অনেকেই দেশে-বিদেশে অবস্থান করছেন এবং চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্যে বেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অনেকের সন্তারাও দেশে- বিদেশে নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছেন, আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ ভাল পজিশনে আছেন।
চুরাশিয়ানদের মধ্যে অনেকে সপিরবারে আমেরিকায়, ইতালিতে, লন্ডনে, কানাডায়, ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যসহ দেশে-বিদেশে অবস্থান করছেন। শুধু তাইনয়, অনেকই দাদা,নানা, দাদী এবং নানী হয়েছেন। চুল,দাড়ি পেকেছে । কিন্তু পরস্পর আলোচনাকালে তারা ওই ৩৯/৪০ বছর আগেই বন্ধুত্ব ধরে রেখে ওই ছাত্রজীবনের সুরেই কথা বলেন। মনে হয় না আমাদের করোই বয়স হয়েছে। এটা সম্পর্কটা ধরে রাখার জন্য চুরাশিয়ান গ্রুপ করা হয়েছে। যারা এখনো যুক্ত হয়নি,তাদের অবশ্যই দ্রুত যুক্ত হবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে গ্রুপের পক্ষ থেকে। # কাশেম