দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের কাছ থেকে আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি অথাৎ অস্বাভাবিক ফি নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত প্রসঙ্গে দায়ের করা রিট আবেদন শুনানি শেষে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে আইন সচিব, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বার কাউন্সিল সচিব ও আইনজীবী ইউসুফ আলীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বে এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল ইসলাম। গত ৬ জুলাই গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের কাছ থেকে আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত চেয়ে রিট আবেদন দায়ের করেন ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল ইসলাম।
এদিকে গত ৩ জুলাই ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়ার বিষয়টি ‘পরোক্ষভাবে’ স্বীকার করেছেন আইনজীবী ইউসুফ আলী। তিনি বলেছেন, সমঝোতা করে নয়, মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসকে পরাজিত করে চাকরিট্যুত কর্মচারীদের ৪৩৭ কোটি টাকা আদায় করে দিয়েছি। সেখান থেকে মোটা অংকের ফি ক্লায়েন্টরা আমাকে দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন। ইউসুফ আলী আরও বলেন, ১২ কোটি টাকার কথা বলা হচ্ছে, তা টোটালি একটি ইমাজিনারি ফিগার। তবে আমি বড় অংকের ফি পেয়েছি। আমার ক্লায়েন্টরা বড় অংকের টাক পেয়েছেন, আমাকে বড় অংকের ফি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ক্লায়েন্টদের মধ্যে যারা তিন কোটি বা তার বেশি পেয়েছেন, তারা নিজেরা ঠিক করেছিলেন ১৫-২০ লাখ টাকা করে দেবেন। আমার ১০০ জন ক্লায়েন্ট তিন কোটি টাকার বেশি পেয়েছেন। এটা থেকে আপনারা ধারণা করতে পারেন আমি কত টাকা পেয়েছি। ক্লায়েন্টরা আমাকে হাসি মুখে ফি দিয়েছেন। তারা কারও কাছে অভিযোগ করেননি।
হিসাব অনুযায়ী ১০০ জন ক্লায়েন্ট যদি ১৫ লাখ করে ফি দেন, তাহলে আইনজীবী ইউসুফ আলী পেয়েছেন ১৫ কোটি টাকা। ১০০ ক্লায়েন্ট ২০ লাখ টাকা করে ফি দিলে আইনজীবী ইউসুফ আলী পেয়েছেন ২০ কোটি টাকা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ আলী বলেন, জব্দ হওয়া সব অ্যাকাউন্টে কত টাকা ছিল, তা সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে চেম্বারের অ্যাকাউন্টে সোয়া দুই কোটি টাকা ছিল।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণ টেলিকমে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মোহাম্মদ আশরাফুল হাসানের সই করা এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়। এরপর সেই নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ জন কর্মী। ছাঁটাইকে ন্দ্রে করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেন আদালত।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের লঙ্ঘন দেখতে পান। ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করেনি গ্রামীণ টেলিকম। শ্রমিকদের অংশগ্রহণে কল্যাণ তহবিলও গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া, কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। #