দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানির’ সাবেক প্রশাসক এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক সদস্য সুলতান উল-আবেদীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা সিএমএম আদালত।
সোমবার (২৩ মে) অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. আবু বকর ছিদ্দিকের আদালত উক্ত আসামীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে পুলিশ সুলতান উল-আবেদীন মোল্লাকে কারাগারে নিয়ে যায়। সিএমএম আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক নাহিদ ও বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. রমজান আলী সরদার (রানা) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক নাহিদ গণমাধ্যমকে জানান, আসামী সুলতান মোল্লা আজ (সোমবার) আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন। সিএমএম আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই আদেশ কার্যক্রর করা হয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী রানা বলেন, ‘ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানির’ প্রশাসক থাকা অবস্থায় কোনো দরপত্র আহ্বান ছাড়া নিয়ম বর্হিভূতভাবে এক কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ২ লাখ ১৫ হাজার মাস্ক ক্রয় করেন।
‘অথচ ৮ লাখ টাকার বেশি মূল্যের কিছু ক্রয় করতে হলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন লাগে ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। কিন্তু তিনি ওই আইন ও বিধিমালা অমান্য করে একক ক্ষমতার দাপটে তার নিকট আত্মীয়কে কাজটা দিয়ে দেন।’ তিনি আরও বলেন, ক্রয় করা মাস্কের মধ্যে বিভিন্ন জোনাল অফিসে ১৯ হাজার পিস মাস্ক বিতরণ করা হয়। বাকি ১ লাখ ৯৬ হাজার পিস মাস্কের কোনো হদিস মেলেনি। মূলত এটা তিনি আত্মসাত করেছেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আসামী সুলতান মোল্লাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
সোমবার এ মামলায় অন্যান্য আসামিদের অসুস্থ্তার কারণ দেখিয়ে তাদের আইনজীবী সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। তবে আদালত তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছেন। ‘ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানির’ মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে গত ২৬ এপ্রিল ‘ ‘ডেল্টা লাইফে মাস্ক কেলেঙ্কারি’ শিরোনামে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
জানা যায়, ‘ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি’ ২০২১ সালের মে মাসে লাজিম মিডিয়া থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার মাস্ক ক্রয় করেন। প্রতি পিস মাস্ক ৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে এক কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার মাস্ক ক্রয় বাবদ অর্থ ব্যয় দেখানো হয়। ওই সময় ‘ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানির’ দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে ছিলেন আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সুলতান মোল্লা।
এই মাস্ক অসৎ উদ্দেশে ব্যক্তিগত লাভের জন্য সুলতান মোল্লার নির্দেশে ক্রয় করা হয়েছে বলে মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে মামলা করেন ডেল্টা লাইফের পরিচালক জেয়াদ হোসেন। সুলতান মোল্লার সঙ্গে ডেল্টা লাইফের ডিএমডি মনজুরে মাওলা, ইভিপি কামরুল হক এবং এম হাফিজুর রহমান খান এ কার্যক্রমে জড়িত বলে অভিযোগ করেন এই পরিচালক।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন ‘ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানির’ পরিচালনা পর্ষদের কাছে প্রথম দুই কোটি টাকা উৎকোচ দাবি করেন। পরিচলনা পর্ষদ অপারগতা প্রকাশ করলে পরে এক কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এই টাকা না দেওয়ায় ২০২১ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি সুলতান মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্ত করে সুলতান মোল্লা, মো. কামরুল হক এবং মো. মনজুরে মাওলার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪০৮/৪২০/৩৪ ধারায় অপরাধ সত্য প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর ছিদ্দিকের আদালত এই আসামিদের বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করেন। সেই সঙ্গে ২৩ মে সমন জারির প্রতিবেদন প্রাপ্তি ও উভয় পক্ষের উপস্থিতির জন্য দিন ধার্য করেন। #