দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
অর্থপাচারের মামলায় বর্তমানে ভারতে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে আসামী ‘এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) ফেরত আনলে তার সহযোগি রাঘববোয়ালরাও ধরা পড়বেন। পিকে হালদারের সহযোগি ও প্রভাবশালী রাঘববোয়ালদের মুখোশ উন্মোচনের পরিকল্পনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তারা নানা কৌশলে বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। ফলে পিকে আনতে পারলেই এসব রাঘববোয়ালদের মুখোশ উন্মোচন করা এবং তাদের ধরার বিষয়ে আশাবাদী দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে দুদকের কমিশনার জহুরুল হক ‘পিকে হালদার এবং তার সহযোগি বড় বড় রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারত থেকে পি কে হালদারকে এ দেশে ফেরত আনা হবে।
পিকে হালদারসহ তার কয়েকজন সহযোগিকে গ্রেফতার করেছে ভারত। তাদের বিরুদ্ধে ভারতেও মামলা রয়েছে, সে বিষয়টিও দেখতে হবে।’ তবে ‘পিকে হালদারকে দেশে ফেরত এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে তার পেছনের কারিগরদের ধরা সম্ভব হবে। দালিলিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী’।
দুদকের কমিশনার জহুরুল হক বলেন,‘আমরা যদি পি কে হালদারকে আনতে পারি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রাঘববোয়াল কারা কারা আছে, কে কে দায়ী সব জানা যাবে।’ ‘আমরা বিশ্বাস করি পিকে হালদারের একার পক্ষে এত বড় দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। কারও না কারও যোগসাজশ রয়েছে। কেউ অবশ্যই সহযোগিতা করেছে। কারা করেছে, তাদের ধরার জন্য চেষ্টা করব। তাকে ফেরাতে দুদক যোগাযোগ রাখছে। তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভারতের দূতাবাস এবং দুদকের অফিসাররাও তৎপর রয়েছেন। আশা করছি ভালো ফল পাব’।
পিকে হালদারকে দেশে ফেরত আনতে দুদকের কোনো টিম ভারতে পাঠানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের কমিশনার জহুরুল হক বলেন, ‘প্রয়োজন হলে টিম পাঠাব।
তবে আমাদের আইন বিষয়টি পারমিট (অনুমতি) করে কি না, দেখতে হবে। আমরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। আমাদের সরকার এ বিষয়ে তৎপর। তাদের সহযোগিতা পাচ্ছি। এছাড়া আমাদের লিগ্যাল ইউনিট রয়েছে, তারা আইনি প্রক্রিয়াগুলো দেখবে। কমিশন সব সময় সহযোগিতা করবে।’
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। সাক্ষাৎ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের দোরাইস্বামী বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়া পিকে হালদারকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। পি কে হালদারের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়টি উভয় দেশের নিয়মিত সহযোগিতার একটি অংশ।’
‘বুঝতে হবে, এটি কিন্তু বড়দিনের কার্ড বিনিময় নয়। আমি মনে করি, এ ধরনের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। পিকে হালদারকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হবে।’
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে পি কে হালদারের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুদকের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই তারা তাকে গ্রেফতার করেছে। তাদেরও একটা আইনি প্রক্রিয়া আছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রসেসটা হবে।’
গত ১৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ওই দেশের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার এবং তা সহযোগীসহ ৬জনকে গ্রেফতার করেছে।
গত ২৯ মার্চ দুদক প্রধান কার্যালয়ে পি কে হালদার কেলেঙ্কারির সহযোগি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পি কে হালদার সিন্ডেকেটের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া ১০ জনের ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিতে তাদের নাম এসেছে।
এমনকি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকেও তাদের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ১৫ মার্চ এস কে সুর ও শাহ আলমকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে হাইকোর্ট। তাদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান গণমাধ্যমকে বলেন, পি কে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৯টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর চার মাস পর ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন।
এছাড়া দুদকের আরেক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ওই টিম গত দুই বছরে মোট ৩৭টি মামলা দায়ের করে। #