দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
রাজধানীসহ সারাদেশে অবৈধভাবে অতিরিক্ত মোনাফার লোভে হাজার হাজার লিটার সয়াবিন তেল মজুত এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকার ব্যবসায়ীীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে র্যাব- পুলিশ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পৃথকভাবে চলমান সারাসি অভিযানে ব্যবসায়ীদের গোপন আস্থানা থেকে উদ্ধর হচ্ছে অবৈধভাবে মজুত করা হাজার হাজার লিটার সয়াবিন তেলের বোতল।
বাজারে সয়াবিন তেল নেই, অথচ ব্যবসায়ীদের গোপন গোডাউনে সয়াবিন তেলের খনি বের হচ্ছে। প্রতিটি অভিযানেই হাজার হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি এলাকায় তেল উদ্ধারের অভিযান চলমান থাকলে লাখ লাখ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল উদ্ধারের সম্বাভনার কথা গণমাধ্যমকে জানালেন অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তারা।
সারাদেশে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে হঠাৎ সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির ফলে খোলা বাজারে চলছে অস্থিরতা। কালো বাজারি ও অবৈধ মজুতদারদের গোপন আস্থানায় লাখ লাখ লিটার মজুত রয়েছে। চলমান অভিযান সফল হলে, সয়াবিন তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সরকারের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের জনগণ তেল সিন্ডিকেটের অমানবিক মূল্য সন্ত্রসের কবল থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক সচিব গোলাম রহমান বলেছেন, বাজারে চলমান যে সংকট, সেটা আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সয়াবিনের তেলের বাজার সংকট তৈরি হয়েছে। আগে ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীরাও বলেছিল, দেশে তেল মজুত রয়েছে।
ঈদের আগে হঠাৎ বাজার থেকে তেল ঊধার হয়ে গেল। অতি লোভী ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত মোনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের তেল তো আগের রেটে কমদামে ক্রেনা ছিল। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সয়াবিন তেলের বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার স্বার্থে ইতোমধ্যে ভোজ্য তেল আমদানির ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে।
একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এরপর হঠাৎ ১৬৮ টাকা লিটারের সয়াবিন তেলের মূল্য প্রতি লিটারের ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
সোমবার (৯ মে) দুপুর ১২টা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুত এবং অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রির বিরুদ্ধে যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অতিরিক্ত দামে ক্রেতাদের কাছে সয়াবিন তেল বিক্রির অপরাধে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা,জরিমান আদায় এবং তেল উদ্ধারের অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
গত ৮ মে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরিচালিত বিশেষ অভিযানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রর প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল, ফাহমিনা আক্তার ও মো. মাগফুর রহমান।
অভিযানে আগের ক্রয় করা বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য লেখা আছে ১৬০ টাকা। কিন্তু বর্তমান ১৯৮ টাকায় বিক্রি করছে। এ অপরাধে কাওরান বাজার কিচেন মার্কেটের শাহ মিরন জেনারেল স্টোরকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ ধারায় ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সোমবার (৯ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে সিরাজ স্টোরে অভিযান ৩টি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
গত ৮ মে) চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকার কর্ণফুলী মার্কেটে কাশেম স্টোরের মেঝের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা ১ হাজার ৫০ বোতল সয়াবিন তেল জব্দ করাহয়। এসময় দোকানটিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২২ সালের মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৯২ হাজার টন, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। একই সময়ে গত ১ মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১ লাখ ৩৭ হাজার টন সয়াবিন তেল বন্দরের কাস্টম বন্ডেড ট্যাংক টার্মিনাল থেকে খালাস করেছে কোম্পানিগুলো। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৬ কোটি লিটার অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে পাঁচটি জাহাজ এসেছে। সিটি গ্রুপ, সেনা কল্যাণ এডিবল অয়েল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রæপ এসব তেল আমদানি করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, এমভি ওরিয়েন্ট চ্যালেঞ্জ জাহাজে আমদানি করা সয়াবিন তেল খালাস প্রায় শেষ পর্যায়ে। খালাস শেষে কাল বন্দর ত্যাগ করার কথা রয়েছে। পাঁচটি ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানি এ বিপুল তেল আমদানি করেছে। দেশে অপরিশোধিত আকারে সয়াবিন তেল আমদানি হয়।
গত অর্থবছরের হিসাবে, অপরিশোধিত আকারে প্রতি মাসে গড়ে আমদানি হয় ৬৫ হাজার টন। এ হিসাবে ২ কোটি ২৯ লাখ টন সয়াবিন তেল দিয়ে অন্তত ১০ দিনের চাহিদা পূরণ সম্ভব। দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করে পূরণ করা হয়। ৭ থেকে ৮টি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত তেল আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৯ এপ্রিল ২১ হাজার মেট্রিকটন তেল নিয়ে আর্জেন্টিন থেকে ওরিয়েন্ট চ্যালেঞ্জ, ২ মে একই দেশ থেকে ৭ হাজার মেট্রিকটন তেল নিয়ে এন এস স্টিলা জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে।
তিনি আরও জানান, বাকি তিনটি জাহাজ এসেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। ইদুল ফিতরের পরদিন ৪ মে ৭ হাজার ৭৯৯ মেট্রিকন তেল নিয়ে মেঘনা প্রাইড, একইদিন ১১ হাজার ২৪৫ মেট্রিকটন তেল নিয়ে এমটি সানজিন এবং গত ৬ মে ১২ হাজার মেট্রিকটন তেল নিয়ে এমটি সুমাত্রা পাম চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে।
এদিকে গত ৭ মে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাগানবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ গজারিয়া এলাকায় আক্তার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২ হাজার ৩২৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তেল অবৈধভাবে মজুত করার অভিযোগেওই ব্যবসায়ীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে উদ্ধার করা তেল ৮ মে খোলাবাজারে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলমগীর এই জরিমানা করেন। এসময় অবৈধভাবে মজুদ করে রাখা ২ হাজার ৩২৮ লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যায়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, অবৈধভাবে এ তেল মজুত রাখায়, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬ এর বিভিন্ন ধারায় ৪০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। এছাড়া খোলা বাজারে সব তেল বিক্রি করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। শুধু চট্টগ্রামে নয় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তেল মজুতের গোপন গোডাউলে অভিযান চাললে লাখ লাখ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার হবার সম্বভাবনা রয়েছে। #