দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
রাজারবাগপীর সিন্ডিকেটের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আদালত একই সঙ্গে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব চেয়েছেন।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বে এই রুল জারি করেন।
রিটে উল্লেখ করা হয়েছেন, ঢাকার আশুলিয়ার বাসিন্দা মুহম্মদ মুফিজুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলা ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এবং কক্সবাজারের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলা চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে বিচারাধীন। যারফলে দুই মামলার বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
গণমাধ্যমকে অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আলী মন্ডল রুলসহ আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শিউলি খানম, অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আলী মন্ডল ও অ্যাডভোকেট মাসুমা জামায়েল।
অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আলী মন্ডল সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম তাদের পীর সাহেবের প্ররোচনায় হয়রানিমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। অথচ মফিজুল ইসলাম তার নিখোঁজ শ্যালকের সন্ধান চেয়ে অপহরণ মামলা করে ছিলেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে হত্যা মামলা দায়ের করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন আইন অনুযায়ী, বিচারাধীন মামলা কমিশনের কার্যাবলীর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং একই সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির শুনানি গ্রহণ না করে কোনো সুপারিশ কমিশন পাঠাবে না। অথচ রিট আবেদনকারীর বক্তব্য না শুনে মানবাধিকার কমিশন আমার মক্কেলের মানবাধিকার লংঘন করেছেন। আদালত কমিশনের তদন্তকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন।
এছাড়াও ভুক্তভোগী নুরুল ইসলামের দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল, চট্টগ্রামে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এবং উক্ত মামলার পলাতক আসামি জয়নাল, মলি হোসেন, জিন্নাত আলী কুতুবী ও আলাউদ্দিনের অভিযোগ কোনোরকম সত্যতা যাচাই না করেই মানবাধিকার কমিশন বিতর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন করেছে। এ প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট পৃথক রিট দুটির শুনানি অন্তে কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনকে কেন কর্তৃত্ববহির্ভূত, বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না-এই মর্মে রুল জারি করেছেন।
গত ২১ এপ্রিল মানবপাচার মামলা চলমান থাকায় রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেবের বিরুদ্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত করাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
রিট কারীর আইনজীবী আর জানান, মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে, মানবপাচার মামলার আসামি ইকরামুল আহসান কা ন ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি কমিশনের কাছে তার বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ এই কা ন ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি মানবপাচার মামলায় কারাগারে যান এবং জামিনে মুক্ত হন ২৫ ফেব্রæয়ারি। এখন প্রশ্ন হলো, ২৫ ফেব্রæয়ারি যদি তিনি জামিন পান তাহলে ১৩ ফেব্রæয়ারি তিনি কীভাবে মানবাধিকার কমিশনের কাছে বক্তব্য দিলেন?
এর আগে রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে যে সম্পদ রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করে আয়ের উৎস্য ও রাজস্ব দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে এমন ৭ দফা সুপারিশ দিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তদন্ত প্রতিবেদন করে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান তৎকালীন ডিভিশন বেে কমিশনের দাখিল করা সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়ার নির্দেশ দেন। #