দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকা শহরে উচ্চ ব্যয়ে পাতাল রেল প্রকল্পের নানা অসুবিধার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনসহ সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের প্রকৌশলীরা। বৈশ্বিক বিবেচনায় সাবওয়ে নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এসব প্রকল্পের শুরুতে প্রাক্কলিত ব্যয় বাস্তবায়নে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। উন্নত দেশ ও শহর এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্প থেকে সরে আসছে।
যারফলে এসব প্রকল্পের অভিমত দিয়েছেন বিপক্ষে নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীরা। পাতাল রেল প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিবর্তে দেশের জেলা শহরগুলোর উন্নয়নে ব্যয় করা হলে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর চাপ কমে যাবে।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত গত ২২ এপ্রিল “ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্পঃ টেকসই পরিবহন পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতায় উপযোগিতা বিশ্লেষণ” শীর্ষক ভাচ্যুয়ালী এক নগর সংলাপে প্রকৌশলীরা এ অভিমত ব্যক্ত করেনে।
তারা জানান, সাবওয়ের মত গণপরিবহনব্যবস্থা টেকসই হবার জন্য আমাদের নগর ও আ লিক এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত জনসংখ্যা বিদ্যমান থাকলেও আমাদের মাথাপিছু আয় ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিবেচনায় এই প্রকল্পের অতি উচ্চ বিনিয়োগ ব্যয় ও পরিচালন ব্যয়ের কারণে এই প্রকল্প আমাদের ঢাকা শহরের জন্য বাস্তবসম্মত নয়।
তারা বলেন, সাবওয়ে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর সীমিত আকারে কিছু শহরে নির্মিত হলে ও সাবওয়ে নির্মাণ অতি ব্যয়বহুল প্রকল্প। ফলে বিশ্বের অতি ধনী দেশগুলোও এখন নতুন করে নগরের বিস্তৃৃত নেটওয়াকর্ জুড়ে সাবওয়ে নির্মাণের মত উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নেয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে না। সেখানে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবার যাত্রাপথে আছে, আমাদের মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় এখনও অতি অল্প।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় যেখানে প্রায় ২ হাজার ডলার, সেখানে আমেরিকার ৭০ হাজার (বাংলাদেশের ৩৫ গুণ) , সিংগাপুর ৬৫ হাজার (৩৩ গুণ), জার্মানি ৫০হাজার (২৫ গুণ), ইংল্যান্ড ৪৫ হাজার (২৩ গুণ), জাপান ৪০ হাজার ডলার (বাংলাদেশের ২০ গুণ)। ফলে সাবওয়ে নির্মাণের মত অর্থনৈতিক শক্তি আমাদের নেই বললেই চলে।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সাধারণত এক কিলোমিটার সাবওয়ে লাইন নির্মাণে অন্তত ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। তবে সাম্প্রতিককালে নির্মিত সিঙ্গাপুর, হংকংয়ের মতো দেশ ও প্রশাসনিক অ লগুলোতে পাতাল রেলের নির্মাণ ব্যয় আরো বেশি। সিঙ্গাপুরের ডাউনটাউন এমআরটি লাইন (পুরোটাই পাতালপথে) নির্মাণে প্রতি কিলোমিটার খরচ হয়েছে ৪৯৩ মিলিয়ন ডলার। আর হংকংয়ের শহরে তিন সেন্ট্রাল লিংক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটার খরচ হয়েছে ৫৮৬ মিলিয়ন ডলার। ঢাকার সাবওয়ের প্রাথমিকভাবে প্রতি কিলোমিটার খরচ ধরা হয়েছে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার।
আইপিডির পরিচালক ও শেলটেক কনসালটেন্টস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, সাবওয়ের মত উচ্চ ব্যয়নির্ভর প্রকল্প আমাদের নগর ব্যবস্থাপনায় কাংখিত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে না। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি ঢাকার আশেপাশে পরিকল্পিত টাউনশিপ গড়ে তোলবার মাধ্যমে ঢাকার উপর চাপ কমানোর উপর তাগিদ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন,্র দেশের উন্নয়ন বাজেটের তুলনায় অতি ব্যয়বহুল এই পাতাল রেল প্রকল্পটি বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ডিটিসিএ সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরে পাতাল রেল প্রকল্প মানানসই নয় এবং একইসাথে এর সামগ্রিক ব্যয় অতি উচ্চ। এছাড়া সাবওয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৩২০ কোটি টাকা অপচয় কার ঠিক হবে না। এই টাকা দিয়ে হাজার খানেক মানসম্মত বাস নামালেও ঢাকার ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অ ল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, সাবওয়ে প্রকল্পের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে পেশাজীবি সত্যতা ও সততার নির্মোহ প্রকাশ অত্যন্ত প্রয়োজন।
রাজউকের ড্যাপ প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার আশেপাশে পাতাল রেলের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ব্যয় হবে তুলনামূলক অনেক বেশি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মো. মারুফ হোসেন পাতালরেল প্রকল্প’কে শ্বেত হস্তীর সাথে তুলনা করে বলেন, এই ধরনের প্রকল্প শুধু ঢাকা শহর নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
আরও অভিমত ব্যক্ত করেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মইনুল ইসলাম বলেন,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অ ল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা প্রমুখ। #