দূরবীন নিউজ প্রতিবেদক:
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বভাগের রায়ে বলা হয়েছে ভেজাল প্যারাসিটামলে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ওষুধ প্রশাসনে চাকরিতে আর থাকতে পারবেন না শফিকুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেন। ফলে ভেজাল প্যারাসিটামলের মামলায় তারা চাকরি হারালেন।
এরআগে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ২৮ শিশুর মৃত্যুর মামলায় হাইকোর্ট ওই দুই কর্মকর্তার চাকরিতে থাকার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
রোববার (১৩ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় প্রদান করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সারা দেশে ২৮টি শিশুর মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় ঢাকার ড্রাগ আদালতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের রিড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ ৫জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ৫ আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান।
বিচারক আতোয়ার রহমান ওই রায়ে বলেন, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তখনকার সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনের ‘অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আদালতের ওই রায় আসার পরও ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে একটি আবেদন করলে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ হাই কোর্ট রুল জারি করেন।
ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তাকে কেন চাকরি থেকে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না-তা জানাতে চাওয়া হয় রুলে।
ওই রুলের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১১ জুলাই হাইকোর্টে ওই দুই কর্মকর্তার অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলে একটি প্রতিবেদন দাখিল হয়।
২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের পর চলতি বছরের ৩১ মার্চ ‘তিরস্কার’ করে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এরপর এ দুই কর্মকর্তা ফের চাকরিতে যোগ দেন।
এরপর ওই বরখাস্ত প্রত্যাহারের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এইচআরপিবির আবেদনে একই বছরের ১৮ জুলাই বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
এরপর ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চান হাইকোর্ট। পরে স্বাস্থ্য সচিব এক প্রতিবেদনে আদালতকে জানায়, ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে।
কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় নতুন একটি আবেদন করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের মনজিল মোরসেদ।
সেই আবেদনে ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বুধবার (৯ অক্টোবর) আদালতে হাজির হয়ে জানান, ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে আদালত তাকে বৃহস্পতিবার আবার হাজির হয়ে ‘যথাযথ ব্যাখ্যা’ দিতে নির্দেশ দেন।
আদালত আবেদনের ওপর শুনানি করে ওষুধ প্রশাসনে তাদের চাকরির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে তাদের অন্য কোথাও পদায়ন করতে পারবে। #