দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ পাচার ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১৬ জুন দাখিল করতে দুদকের তদন্ত নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।
রোববার (৩ এপ্রিল) ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য থাকলেও দুদকের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ নতুন এ দিন ধার্য করেন। গত ২০২১ সালে ১০ অক্টোবর দুদক উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি করেন। মামলাটি দুদক ২০০৪-এর ২৭ (১) ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২-এর ৪ (২ ও ৩) ধারায় রেকর্ড করা হয়।
এ মামলায় এস কে সিনহার তার ভাই ও আত্মীয়ের নামে ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্থানান্তর এবং হন্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়। মামলার আসামী সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে উত্তরা আবাসিক এলাকায় নিজের নামে একটি প্লট বরাদ্দ নেন।
এসকে সিহার তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামেও রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করান। এরপর প্রভাব খাটিয়ে ওই তিন কাঠার প্লটটি পাঁচ কাঠায় উন্নীত করান। এক পর্যায়ে পূর্বাচলের প্লটটিকে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর সড়কে (বাড়ি নম্বর ১/এ) স্থানান্তর করিয়ে রাজউকের অনুমোদন করান। বরাদ্দ পাওয়ার পর এসকে সিনহা প্লটটির ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নিয়োগ করেন তারই আত্মীয় জনৈক শংখজিৎ সিংহকে।
দুদকের অনুসন্ধানে নথিপত্রে তথ্য-প্রমাণ বেরিয়ে আসে এসকে সিনহা নিজেই উত্তরার ওই প্লটের অনুকূলে রাজউকে মোট ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরে তার তত্ত্বাবধানেই ওই প্লটে নয়তলা ভবন নির্মাণ হয়। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে এ নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করে দুদক।
দুদকের মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজউকের প্লটের মূল্য ৭৫ লাখ টাকা ও ভবনের নির্মাণ ব্যয় ৬ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকাসহ সব মিলিয়ে ৭ কোটি ৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে জনৈক খালেদা চৌধুরীর কাছ থেকে ভবনের একটি ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রিম ৭০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এ টাকা বাদে অবশিষ্ট ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা এবং আত্মীয় শংখজিৎ সিংহের নামে একটি ব্যাংক হিসাবে স্থায়ী ও নগদে ৭৮ লাখ টাকা জমা পাওয়ার বিষয়টি মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, দুদকের করা পৃথক আরও এক মামলায় গত বছর ৯ নভেম্বর ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় পৃথক দুই ধারায় ঢাকার একটি আদালতে এস কে সিনহার ১১ বছর কারাদন্ড হয়।
ফারমার্স ব্যাংকের অর্থ আত্মসাত এবং পাচারের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের দায়ে ৪ বছর এবং মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধের ধারায় ৭ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। দু’টি ধারার শাস্তি তিনি একই সঙ্গে ভোগ করবেন। এ ছাড়া এস কে সিনহার ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এ মামলায় এস কে সিনহা ছাড়া আরো ১০ আসামি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭ আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) অন্য মামলায় আগে থেকেই কারাগারে। অন্য আসামিদের মধ্যে ব্যাংকটির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, জনজিৎ চন্দ্র্র সাহা, তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়কে ৩ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। #