দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে ‘অস্তিত্বহীন’ প্রতিষ্ঠানের নামে আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর) ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই দুই কর্মকর্তা এখন দুদকের জালে। অনুসন্ধান শেষ হলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিবে দুদক। এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন। মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমকে ব্রিফিংকালে দুদক সচিব বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ওঅবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িতরা পার পাবেন না।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ।
গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক । তিনি আরও জানান, তলবি চিঠি প্রাপ্ত এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলম মঙ্গলবার সকাল ১০ টার আগেই দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন এবং উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করে ওয়েটিং কক্ষে বসে থাকেন। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে নেয়া হয়। ওই কক্ষে দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
গত ২৪ মার্চ এনআরবি গেøাবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার ও অন্যদের বিদেশে অর্থ পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। তবে পিকে হালদার বর্তমানে বিদেশে পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়,এনআরবি গেøাবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইএলএফএসএল থেকে ‘কাগুজে’ প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইতোমধ্যে ২২টি মামলা করেছে দুদক।এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ‘কাগুজে’ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরও ১৩টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় পি কে হালদারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়। এরপর গত বছরের নভেম্বরে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে এনআরবি গেøাবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পি কে হালদারসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ২২ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমসহ তাদের স্ত্রীদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
চিঠিতে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী সুপর্না সুর চৌধুরীর এবং তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম, তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগমের সঞ্চয় হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব ও বিদেশি মুদ্রার হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, ভল্ট, সঞ্চয়পত্র, ডিপোজিট স্কিম ও বিও বেনিফিসিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টসহ সব ধরনের হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ তথ্য বিবরণী সাত কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পূর্বে বন্ধ হয়ে যাওয়া হিসাবের তথ্য চেয়েছে এনবিআর।
এর আগে, ঘুষের বিনিময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে বিষয়টি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অভিযোগ রয়েছে, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের মতো একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে পি কে হালদার নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যাদের সহযোগিতা করেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। ঘুষের বিনিময়ে গুরুতর অনিয়মে সহায়তা করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার আরও বেশ কিছু কর্মকর্তা।
এদিকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার হওয়া উজ্জ্বল কুমার নন্দীর পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ২০২১ সালে ১৫ ফেব্রæয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রচার হয়েছে। #