দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
প্রায় ৩ কোটি টাকা চুরি হয়েছে রাজধানীতে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ২৩১টি বুথ থেকে। অবশেষে পুলিশ এই টাকা চুরির ঘটনায় মূল আসামী অসিম কুমার সোমকে গ্রেফতার করেছে। তিনি নিরাপত্তা সংস্থা গার্ডা শিল্ডের ক্যাশ সার্ভিস বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বুধবার (৯ মার্চ) গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান।
তিনি জানান, গত ৮ মার্চ রাতে অভিযান চালিয়ে অসিম কুমার সোমকে কাফরুল থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরাধীরা বুথে মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা টাকাগুলো আত্মসাৎ করত। প্রতিদিন ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত কৃত্রিম জ্যাম তৈরির পর আটকে রেখে আত্মসাৎ করত। এভাবে টানা ৯ মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে দাবি করেছে।
এর আগে গত ৬ মার্চ ডাচ বাংলা ব্যাংকের ২৩১টি এটিএম বুথ থেকে বিশেষ কায়দায় টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করারা কথা জানিয়েছে র্যাব। ডাচ ব্যাংকের দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা উধাও হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসার পর থেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন অসিম কুমার সোম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথে টাকা লোড-আনলোডসহ মেইনটেন্যান্সের দায়িত্ব পালন করছে গার্ডা শিল্ড। আব্দুর রহমান নামে একজন সেখানে চাকরি নেয়ার পর তার নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল আর্থিক প্রতারণায় অংশ নেন। প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতো তারা। এক বছরে তিন কোটি টাকা একই কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে আব্দুর রহমানের নেতৃত্বাধীন চক্রটি।
এদিকে গত ৬ মার্চ কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণের পর শনিবার দিবাগত রাতে চক্রটির মূলহোতা আব্দুর রহমানসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক এটিএম বুথের ব্যবস্থাপনা থার্ড পার্টি বা আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে।
র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্তে উদঘাটন করে থার্ড পার্টি পরিবর্তিত হলেও টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরি দলে ােনো পরিবর্তন হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৩২), তারেক আজিজ (২৫), তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ওরফে সোহান (২৮), রবিউল হাসান (২৭), হাবিবুর রহমান ওরফে ইলিয়াস (৩৬), কামরুল হাসান (৪৩), সুজন মিয়া (৩১) এবং আব্দুল কাদেরকে (৪৩) গ্রেফতার করে।
অভিযানে উদ্ধার করা হয় দু’টি চেকবই, একটি এটিএম কার্ড, চারটি আইডিকার্ড, একটি স্বর্ণের নেকলেস, এক জোড়া বালা, এক জোড়া কানের দুল, একটি আংটি এবং নগদ ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তাদের পরস্পর যোগসাজশে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২/৩ বছর এক সঙ্গে চাকরি করার সুবাদে পরিচিত হন। একপর্যায়ে তারা সমমনাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। আব্দুর রহমান চক্রটির মূলহোতা। তিনি তার এক সাবেক সহকর্মীর কাছ থেকে বিষয়টি রপ্ত করেন বলে জানান। অন্য সহযোগীরা কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং এবং মেইনটেন্যান্সের দায়িত্ব পালন করেণ তারা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লোড করেন। এই ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছে। টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, কারিগরি সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়োজিত থাকত।
তিনি বলেন, চক্রটি লোডিং ট্রেতে টাকা রাখার সময় ১৯টি ১০০০ টাকার নোটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখত। কোনো ক্লায়েন্ট এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গোপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ওই পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবিনে জমা হতো। পরে সেই টাকা সরিয়ে নিতো চক্রের সদস্যরা। #